Select Page

নিশ্চিত কাঁদাবে ‘প্রিয়তমা’

নিশ্চিত কাঁদাবে ‘প্রিয়তমা’

 ‘প্রিয়তমা’ শুরু থেকে শেষপর্যন্ত আমাকে আবেগতাড়িত করেছে। গান ও শাকিব খানের অসাধারণ লুক এবং ইধিকা পালের ‘আই কন্টাক্ট’ সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। তারা অভিনয়ও করেছে দুর্দান্ত। তবে তাদের রসায়ন কম ছিল ছবিতে।

পুরো মুভিতে শাকিব খানকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়েছেন পরিচালক। প্রায় সারাক্ষণই পর্দায় তার উপস্থিতি। ছবিটি দেখেছি শ্রীমঙ্গলের রাধানাথ সিনেমা হলে। তবে সবচেয়ে যে বিষয়টি বাজে লেগেছে- সিনেমা হলের পরিবেশ। প্রচন্ড গরম ও সিগারেটের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়েছি। সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে পর্দার ছবি লাল হয়ে যাচ্ছিল।

মাঝে-মধ্যে দর্শকদের চিৎকার মুভি দেখার স্বাদ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। কয়েকটি পরিবার দেখে ভালো লাগছে, পরিবারের নারী সদস্য নিয়ে তারা মুভি দেখছেন। বোঝা যাচ্ছে, ভালো গল্পের ভালো নির্মাণ হলে অবশ্যই সবাই পরিবার নিয়ে হলে যাবেন।

শাকিব খানকে নতুনভাবে নতুন লুকে পর্দায় দেখে ভালো লেগছে। শাকিব খানের এন্ট্রি, গান, ইধিকা পালের ভুলভাল ইংরেজি বলা সবটাই ছিল দারুণ। বর্ষীয়ান অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের খল চরিত্রের অভিনয় ছিল আউটস্ট্যান্ডিং, যা বলে বুঝানো যাবে না। চট্টগ্রামের ভাষায় দারুণ অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। তবে ভাষায় কিছুটা গড়মিল ছিল। কারণ চট্টগ্রামের ভাষা ভালো করে রপ্ত করতে পারেননি। অনেকটা জায়গা ভাষা ডেলিভারিতে দুর্বল বোঝা গেছে।

খালেদ চেয়ারম্যানের চরিত্রে নায়িকা ইতির বাবা হয়েছেন যিনি তিনিও দুর্দান্ত অভিনয় করেন। ঠান্ডা মেজাজের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি, ৪০ বছরের চেয়ারম্যানির অভিজ্ঞতার ডায়লগ দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা, খুবই ভালো হয়েছে।

তবে লাভ কেমিস্ট্রি খুবই কম ছিলো, এদিকে কিছুটা আশাহত হয়েছি।

পরিস্থিতির সঙ্গে ইধিকা পালের এক্সপ্রেশনের পরিবর্তন, সংলাপ সবার মন কেড়েছে। তার মিষ্টি ন্যাকামো কথাগুলো খুবই ভালো লেগেছে। একবারও মনে হয়নি তিনি অভিনয় করছেন। সবটাই ছিলো রিয়েলিস্টিক।

দুই ঘণ্টা ২০ মিনিটের সিনেমার দেড় ঘণ্টা পর তো দর্শক ভেবেছিলেন সিনেমা শেষ। কিন্তু তার পরই শুরু হয় আসল টুইস্ট। প্রথম দেড় ঘণ্টা আপনাকে মনোযোগী নাও করতে পারে। গল্পের ভেতর ঢুকতে পারবেন না। তবে শেষের ৩০ মিনিটে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। তখন আর বুঝতে বাকি থাকবে না ‘প্রিয়তমা’র মূল কাহিনি, নিমিষেই ঢুকে যাবেন গল্পের ভিতর। পরের এক ঘণ্টায় আলাদা একটি গল্প আপনাকে কাঁদাবে, কাঁদাতে না পারলেও মন খারাপ করাবে এটা নিশ্চিত। এর পরের টুইস্ট আমাকে স্তম্ভিত করেছিল। ইতির পরিণতি মেনে নিতে পারিনি। এ সময় শাকিবের বৃদ্ধ লুক অসাধারণ লেগেছে।

কুরবানি, প্রিয়তমা ও ঈশ্বর— সবগুলো গান জাস্ট অসাধারণ।

মুভিটতে শাকিবের চরিত্রে ‘ওভার স্মার্ট’ কোন কিছু ছিল না। যা প্রয়োজন তাই দিয়েছেন। যার কারণে তার অভিনয় দর্শকদের মনে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে সারা মুভিতে শাকিবের উপস্থিতি থাকলেও কোথাও কোথাও নাই মনে হয়েছে। হয়তোবা গল্পের ধরনে এমনটা লাগতে পারে।

শাকিব খান তার প্রিয়তমাকে প্রস্তাব দেয়াটা একটু সাধারণ হয়েছো, আরেকটু রোমাঞ্চ থাকলে ভালো হতো। নায়কের শহরে ফিরে আসার দৃশ্যটাও ভালো ছিলো। এরপর থেকে প্রিয়তমা নিখোঁজ! তাকে খুঁজতে গিয়ে শাকিব খানের কষ্ট মানুষের মনের কষ্টের কারণ হয়েছে। নায়িকা ইধিকা যখন শাকিব খানের সামনে যায় এবং হিরো তাকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু নায়িকার কথা শুনে তাড়িয়ে দেয়, এ দৃশ্যে ছিলো নায়িকার প্রতি ঘৃণার। তারপর বাকি সময়টুকুতে ছিল আসল টুইস্ট। … আর শাকিব খানের বৃদ্ধ লুকে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। হলভরা দর্শকের হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করেই মুভির সফল সমাপ্তি হয়।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মন্তব্য করুন