দাদাবাবুদের রাজনীতি ও আমাদের হাল
মধ্যযুগের শেষ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর লিখেছিলেন ‘ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে’। ভারত সত্যিই নিজ গুণেই বিখ্যাত বিশ্বব্যাপী। ভাবছেন এ ব্যাটা আবার ভারতবন্দনা করতে আসল কেন! আরে না সেটা না, আগে তো পুরোটা বলতে দেবেন – ভারত আসলেই নিজ গুণে বিখ্যাত। তারা নিজ গুণেই অমিতাভ, শাহরুখ-আমির-সালমানদের দিয়ে বলিউডকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে, তাদের মিউজিককে বিশ্বব্যাপী পেীঁছাতে পেরেছে, তাদের রাজনীতিকে দিয়ে বিশ্বরাজনীতির সাথে টক্কর দিতে পেরেছে। তারা আমাদের ফেলানীকে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে মারতে পেরেছে, টিপাইমুখ নিয়ে রাজনীতি করতে পেরেছে, তিস্তার পানি রাতভর আটকে রাখতে পেরেছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আমাদের জোর করে চোরের মত হারাতে পেরেছে – এভাবেই ভারত কিন্তু নিজ গুণেই খ্যাত। দেখতেই পা্চ্ছেন, এতকিছুর পরে আরো একটাতে তারা খ্যাত তা হচ্ছে তারা ‘দিতে নয়, নিতে খ্যাত’।
মেকলে, ভারত ও আমরা
লর্ড মেকলে একটা বিখ্যাত কথা বলেছিলেন ‘আমরা এমন একটা জাতি চাই যারা জাতিতে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তায় হবে ব্রিটিশ’ – একবার ভাবুন তো মেকলেসাহেব কী সাংঘাতিক প্রতিভাবান!! ভারতীয়রা কিন্তু ঐ যন্ত্রণা ভুলতে পারেনি তাই তারা স্বাধীন ভারত পেয়ে ৪৭-এ উল্লাস করেছিল।তারপর একসময় বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হল ভারত আমাদের সাহায্য করেছিল ঠিকই কিন্তু সেটার পেছনে আধিপত্যর নেশা ছিল। আজকের ভারত কিন্তু আগেও চাইত, আজো চায় ‘বাংলাদেশ হবে সেই জাতি যারা পরিচয়ে বাংলাদেশী কিন্তু চিন্তায় ভারতীয়’। তাইতো আজ বাংলাদেশের কোনো প্রতিভাকে সম্মান দেবার আগে ভারতের প্রতিভাকে সম্মান দিতেই আমাদের লোকজন মরিয়া। আমাদের তো একটা সুনাম আছেই আমরা খুব অতিথিপরায়ণ, তাই পদ্মার ইলিশ দিয়ে মমতা এক্সপ্রেসকে খাইয়ে দাইয়ে মোটা করি আর প্রসেনজিৎ-দেব মহাশয়রা একুশে ফেব্রুয়fরির রাতে হাসিমুখে পোজ দেয় শহীদ মিনারে অথচ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ কোনো আনন্দের লক্ষ্যে গাই না আমরা, শোকে গাই,ওরা করে আনন্দ। ওরা দেশবিভাগের কষ্ট ভুলতে না পেরে আজো তাদের গভীর ঈর্ষা আমাদের ওপরে প্রয়োগ করে। আমরা ভালো আছি দেখলে ওদের গা জ্বালা করে, তাই যখনি ভালো থেকেছি ছোবল দিয়েছে সামনে বা পেছন থেকে। ভারত ওদের কালচার আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠিত করে তবেই ছেড়েছে। আমাদের বদঅভ্যাস অবশ্যই আছে – আমরা ওদের নকল করি বা অনুকরণ করি কিন্তু তা সবসময় ছিল না। আমরা অনেকদিক থেকেই মৌলিক। ওরা চেয়েছে বলিউড গান, নাচ, গ্ল্যামার বা টলিউড নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকি, তাদের সিরিযাল আমাদের ঘরে ঘরে গৃহিণিীদের খাদ্য হোক তারা এটা চেযেছে। তারা পেরেছেও। এভাবেই তারা আমাদের চিন্তায় ভারতীয় করতে চেয়েছে। কিন্তু পুরোটা কি পেরেছে? – পারেনি।
ওরা নিতে জানে, দিতে নয়
ওরা শেষ অবধি নিতেই জানে, দিতে নয়। ওদের ওখানে বাংলা সিনেমার দিকে তাকালে উত্তম কুমার-সেীমিত্র যুগের পরে প্রসেনজিৎ রাজত্ব করেছে।আর আমাদের এখানে ইতিহাস আরো সমৃদ্ধ। আমাদের কিন্তু রাজ্জাক স্যারের পরেও যদি ধরি আলমগীর, ফারুক, উজ্জ্বল, ওয়াসিম, শাবানা, কবরী, ববিতা, জাফর ইকবাল, জসিম, কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, সালমান শাহ, মেীসুমী, শাবনূর, আমিন খান, রিয়াজ, ফেরদেীস, শাকিব খান পর্যন্ত সময় ছিল অনেক অনেক বেশি আলোচিত। ওদের সময়গুলোকে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্র অনুযায়ী দেখলে বিশাল ব্যাকগ্রাউন্ড বা রাজত্ব চোখের সামনে ভাসে। প্রসেনজিৎ নিজেও যখন আমাদের দিতির সাথে কাজ করেছে ‘প্রিয়শত্রু’ সিনেমায় তখন তার অবস্থান মোটেই ভালো ছিল না। তাইতো রাজ্জাক স্যার ‘বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু’ এখানে বানানের পরে কলকাতায়ও বানানো হল, প্রসেনজিৎ অভিনয় করল। এখন কথা হচ্ছে যে রোলে বাপ্পারাজ অভিনয় করে ফাটিয়ে দিয়েছিল সেখানে কি একজন প্রসেনজিৎ খুব বেশি অবেদন রাখতে সক্ষম!!! আমার তো মনে হয় না প্রসেনজিৎ বাপ্পারাজের থেকে ভালো অভিনেতা। তাহলে জিজ্ঞাসাটা কোথায়? আমরা আমাদের চিনতে পারি না। ওরা তখন পিছিয়ে ছিল আর আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকত তারপর যখন বোম্বের হেল্প পেয়ে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করল তখনই ওরা আমাদের ওপর স্টিম রোলার চালাতে লাগল। অথচ ওরা ছিল আমাদের নিচেই। এখন যে জিৎ , দেব, সোহম, অঙ্কুশরা এসেছে এদেরকে যচাই করার জন্য আরো বড় সময় দরকার এখনই এদেরকে যাচাই করার কিছু নেই। আর পরমব্রত, আবিররা অন্য ধাঁচের অভিনেতা ওরা এখানে প্রাসঙ্গিক না। ওরা আমাদের এখানে সর্বশেষ যেটা করবে ওদের হিন্দি সিনেমার কালচারকে এবার আমাদের বাংলা সিনেমায় পুরোপরি প্রয়োগ করবে যেটা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সিনেমায় যেমন এখন নায়িকাদের শর্টস পরা শুরু হয়েছে, নায়কের ঠোঁটে চুমু খাওয়া শুরু হয়েছে বা শাওয়ারের দৃশ্যে অভিনয় করা শুরু হয়েছে, আইটেম গানের নামে ভদ্র অশ্লীলতা শুরু হয়েছে ঠিক এভাবেই কদিন বাদে আমাদের এখানে বেড সিনও স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং সেটার গ্যারান্টি দিতেই রমেশ সিপ্পি ও মুকেশ ভাটের মত বড় দাদাদের আগমন। আর কি বলব? ওদের ভাষাতেই বলি – ল্যাও ঠ্যালা!
আমরা তাহলে এখন কি করব? একটাই রাস্তা। ওরা যা অফার করবে সম্পূর্নভাবে তা ফিরিয়ে দেয়া, সেটা যাই হাক না কেন। আমরা আমাদের মত করেই এগিয়ে যাব শুধু এই জেদটা আমাদের থাকলেই বাকি সব কাজ ধীরে ধীরে হয়ে যাবে। সময় লাগবে তবে হয়ে যাবে। আমাদের শাকিব, শুভ, মাহী, আঁচল, এবিএম সুমন, ফারিয়া, মীম এবং আরো যারা আছে তারাই পারবে। আস্থা রাখতে হবে তবেই হবে। সময় একটু লাগবে, লাগুক না, সবুরে মেওয়া ফলে এটা কে না জানে! ওদেরও তো সবুরে মেওয়া ফলেছে, তবে আমাদের ফলবে না কেন!!