দারুণ চেষ্টার করুণ সমাপ্তি ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’
সিনেমাজুড়ে অস্ত্রের দাপট। অত্যাধুনিক সব অস্ত্র নিয়ে কিছুক্ষণ পরপর মারদাঙ্গা অ্যাকশন। বাঁচা-মরার লড়াই। কে কার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, কেন করছে, কোথায় মিশনের গন্তব্য—এ কৌতূহলকে সম্বল করে এগিয়ে চলে ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’ সিনেমার গল্প। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে লাস ভেগাস, সাংহাই থেকে হিমালয়—গল্প ছুটতে থাকে দ্রুতগতিতে। কোথাও স্থির হয় না। এর মধ্যে আসে অনেক চরিত্র। অনেক সাবপ্লট। সবখানেই বুদ্ধির খেলার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে অস্ত্রবাজি। অবশ্য মাঝেমধ্যে ছুরি-চাকু নিয়ে লড়াই চলেছে, হাতাহাতিও আছে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘ধ্বংস পাহাড়’-এ (যে বই অবলম্বনে এ সিনেমা তৈরি) মূল বিষয় ছিল কাপ্তাই বাঁধ। উপন্যাসটি প্রথম বেরিয়েছিল ১৯৬৬ সালে। তার কয়েক বছর আগে কাপ্তাই বাঁধ উদ্বোধন করা হয়। দুই দিন পর প্রেসিডেন্ট আসবেন বাঁধ উদ্বোধন করতে। ওদিকে বিদেশি শক্তি বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। দুই পক্ষই প্রস্তুত। সিক্রেট এজেন্ট মাসুদ রানাকে পাঠানো হয় ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উন্মোচনের মিশনে। সেখান থেকে উপন্যাসের গল্প শুরু। তবে ‘এম আর-নাইন’ সিনেমায় গল্প প্রায় পুরোটাই সাজানো হয়েছে নতুনভাবে, এ সময়ের প্রেক্ষাপটে। বলতে গেলে মূল কয়েকটি চরিত্রের নাম ছাড়া তেমন কিছু রাখা হয়নি। এমনকি গল্পের প্রধান ভিলেন কবির চৌধুরীও অতটা শক্ত জায়গা পাননি। কাপ্তাই বাঁধের প্রসঙ্গ এসেছে সিনেমার শেষের দিকে। আবছাভাবে। আনা হয়েছে রোবোটিকসের মতো আধুনিক বিষয়ও।
সিনেমার নায়ক মাসুদ রানা হলেও ‘এম আর-নাইন’কে ঠিক মাসুদ রানাময় বলা চলে না। বরং বলা যায়, এটা মাসুদ রানার প্রস্তুতি পর্ব। নানা দিকে গল্প ঘুরিয়ে মূল প্লটে ঢুকতে অনেকটা সময় নিয়ে ফেলেছেন নির্মাতা আসিফ আকবর। ততক্ষণে সিনেমা প্রায় শেষের দিকে। নির্মাতা বরং জোর দিয়েছেন হলিউডের অভিনয়শিল্পী ও তাঁদের দিয়ে অ্যাকশন করানোর দিকে। বড় পর্দায় অ্যাকশন দেখতে পছন্দ করেন বেশির ভাগ দর্শক। তবে সেটা যদি গল্পের প্রয়োজনে না হয়ে আরোপিত মনে হয়; বিরক্তি আসতে বাধ্য। এত বড় আয়োজন আর ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটিয়েও ‘এম আর-নাইন’ তাই উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেনি শেষ পর্যন্ত।
সিনেমার গল্প অগোছালো হলেও চোখ জুড়িয়ে দেয় এর লোকেশন। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেননি নির্মাতা। কখনো বিস্তৃত মরুভূমি, হাইওয়ে, সুরম্য অট্টালিকা, হিমালয়—দৃশ্যায়নে অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। সফলও হয়েছেন। মাসুদ রানা চরিত্রে এ বি এম সুমন যথাযথ। নির্লিপ্ত চাহনি, ক্ষিপ্রতা আর শরীরী ভাষায় সুমন বুঝিয়ে দিয়েছেন অ্যাকশন হিরো হিসেবে কতটা সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে তাঁর মধ্যে। পুরো সিনেমায় তিনি একেবারেই চুপচাপ, তাঁকে দিয়ে আরও কিছু সংলাপ বলাতেই পারতেন নির্মাতা। তাতে মাসুদ রানা হিসেবে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ত ছাড়া কমত না। মন কাড়বে সাক্ষী প্রধানের অভিনয়ও। যৌথ প্রযোজনায় ‘এম আর-নাইন’ সিনেমা নিঃসন্দেহে দারুণ একটি চেষ্টা, গল্পের ধারাবাহিকতা রাখতে পারলে এটি হতে পারত একটি ভালো উদাহরণ।