Select Page

‘দি ফাদার’ ছিল ছবির মূল অভিনেতা জন নেপিয়ার অ্যাডামসের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত

‘দি ফাদার’ ছিল ছবির মূল অভিনেতা জন নেপিয়ার অ্যাডামসের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত

এক ঘরোয়া পার্টিতে গিয়েছিলেন কাজী হায়াৎ। সেখানে দেখতে পান বিদেশী গৃহকর্তা নিজের ড্রাইভারের সন্তানকে লালন-পালন করছেন। সেখান থেকে বিখ্যাত ‘দি ফাদার’-এর গল্প পান নির্মাতা। আর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেণে মার্কিন নাগরিক জন নেপিয়ার অ্যাডামস।

‘দি ফাদার’ ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে ভারতের হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া জনপ্রিয় গানটি ‘আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়’। এতে ঠোঁট মেলান জন নেপিয়ার এডামস। ছবির শিরোনাম ‘দি ফাদার’। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘দি ফাদার’-এর কাহিনি ছিল হৃদয়ছোঁয়া। একজন বিদেশি নাগরিক তার ড্রাইভারের শিশুকন্যাটি যখন পিতা-মাতাহীন হয়ে যায় তখন তিনি তাকে নিজ কন্যার মতো আদর-স্নেহ দিয়ে লালনপালন করেন।

কিন্তু মার্কিন নাগরিক জন নেপিয়ার অ্যাডামস কীভাবে এ ছবির সঙ্গে যুক্ত হলেন? সম্প্রতি কাজী হায়াৎ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বললেন সেই গল্প। সেখানে উঠে আসে নেপথ্য অনেক কথা।

তিনি জানালেন, জন দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ইউএসএআইডির আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সেক্রেটারিয়েটে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবেও চাকরি করতেন। তখন বাংলাদেশে সেটি ছিল প্রথম এবং বিশাল এক কম্পিউটার।

কাজী হায়াৎ বলেন, তার সঙ্গে আমার ভাতিজা বাবলাও চাকরি করত। আমি তখন বাবলাকে মডেল করে বিটুমিন ইমেলশনের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করি। বিজ্ঞাপনটি টেলিভিশনে প্রচার হলে তা দেখে পর দিন অফিসে এসে বাবলাকে জন বললেন, তুমি অভিনয় কর, এটি আমি খুব পছন্দ করি। আমারও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ আছে। তখন জনকে বাবলা বলল, আমার চাচা কাজী হায়াৎ এটি নির্মাণ করেছেন। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত। জন তখন বাবলার কাছে ছবির শুটিং দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কাজী হায়াৎ বলেন, আমি তখন চিত্র পরিচালক মমতাজ আলীর ‘ঈমান’ ছবিটির অ্যাসিস্ট করছি। বাবলা একদিন জনকে ‘ঈমান’ ছবির শুটিং দেখতে নিয়ে এলো। শুটিং দেখে তিনি আমার কাছে অভিনয় করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন এবং যাওয়ার সময় শুটিং ইউনিটের সবাইকে তার বাসায় নিমন্ত্রণ জানিয়ে গেলেন। আমরা গিয়ে দেখলাম আমাদের জন্য তিনি বিশাল পার্টির আয়োজন করেছেন। এর মধ্যেই দেখলাম জন একটি শিশুকে কোলে নিয়ে জুস খাওয়াচ্ছেন। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম শিশুটি কে। তিনি বললেন ও আমার ড্রাইভারের সন্তান। মাসখানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ড্রাইভার মারা গেলে আমি শিশুটির সব দায়িত্ব গ্রহণ করি। জনের কথা শুনে এ ঘটনাটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের একটি প্লট আমার মাথায় আসে। গল্প তৈরি করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করি এবং তাতে ফাদারের ভূমিকায় জন নেপিয়ার অ্যাডামসকে অভিনয় করাই।

‘আম্মাজান’-খ্যাত পরিচালক আরো বলেন, জন নেপিয়ার যেহেতু অভিনেতা নন এবং আমাদের ভাষা বোঝেন না তাই কাজ করতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল, তারপরও খুবই সহযোগিতাপরায়ণ বলে তিনি ফাদার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মন কেড়েছিলেন। তিনি ‘আয় খুকু আয়’ গানটির সঙ্গে ঠোঁট-সিঙ্ক করেছিলেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এবং এখনো একটি আইকনিক গান হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

‘দি ফাদার’ প্রযোজনা করেছিলেন আহমেদ ফুড প্রোডাক্টের কর্ণধার মোহাম্মদ আহমেদ ও মো. শামসুল ইসলাম। এ ছবিতে আরও অভিনয় করেন- বুলবুল আহমেদ, সুচরিতা, টেলি সামাদ প্রমুখ।

জন নেপিয়ার অ্যাডামস এ ছবিটির পর চাষী নজরুল ইসলামের ‘ভালো মানুষ’ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন এবং সেটিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এরপর তিনি তার দেশ আমেরিকায় ফিরে যান।


মন্তব্য করুন