দুই ডজন নাটকের জন্য ৫০ লাখ টাকা নিয়েও কাজ করলেন না অপূর্ব, অভিযোগ প্রযোজকের
নাটক প্রতি ২ লাখ টাকার বেশি নেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। প্রতিটি নাটকের জন্য শিডিউল দেন দেড় দিন। না, আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণায় জানা যায়নি। অপূর্বর নামে চুক্তি ভঙ্গ, অর্থ আত্মসাৎ ও শিডিউল ফাঁসানোর অভিযোগ আনার পর বিষয়টি জানা গেল। সম্প্রতি এসব অভিযোগ তুলেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেড (আলফা আই)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল।
অভিযোগপত্রে অপূর্বর কাছে ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন প্রযোজক শাকিল। টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপাব) বরাবর পাঠিয়েছেন এ অভিযোগপত্র।
অপূর্বর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ২৪টি নাটকের জন্য ৫০ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ৯টি নাটকে কাজ করে বাকি ৩৩ লাখ টাকা নিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিরত রয়েছেন অপূর্ব। এ অবস্থায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
অপূর্বর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে একই চিঠিটি প্রযোজনা সংস্থা পাঠিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘের কাছেও।
অপূর্ব’র বিরুদ্ধে আরও অভিযোগে বলা হয়েছে, আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেড (প্রতিনিধিত্বে উহার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার করিম ভূঁইয়া) এবং অভিনয় শিল্পী মো. জিয়াউল ফারুক অপূর্ব’র মধ্যে ১৬-১০-২০২২ তারিখে একটি অভিনয় সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত চুক্তি অনুযায়ী মো. জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ১ নভেম্বর ২০২২ তারিখ হইতে ৩১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেডকে প্রতি মাসে ৩ দিন শিডিউল দেবেন এবং উক্ত ৩ দিনে ২টি নাটকের শুটিং হবে। যদি কোনো মাসে ৩ দিন শুটিং করার শিডিউল দিতে না পারেন তবে পরবর্তী মাসের সঙ্গে মো. জিয়াউল ফারুক অপূর্ব সমন্বয় করবেন। সেই মোতাবেক চুক্তি অনুসারে ২৪টি নাটকে অভিনয়ের জন্য মোট ৫০ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ১৬/১০/২০২২ তারিখে (৫০ শতাংশ) ২৫ লাখ টাকা ও পরবর্তীতে ৯ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে ভিন্ন ভিন্ন ৪টি ভাউচারে অগ্রিম বাবদ আরও ৮ লাখ টাকা গ্রহণ করেন অপূর্ব।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ আছে,“চুক্তি অনুযায়ী ২৪টি কাজের মধ্যে ৯টি কাজ কোনোভাবে সম্পন্ন করলেও বাকি ১৫টি কাজের নানা ধরনের টালবাহানা ও কালক্ষেপণ করতে থাকেন অপূর্ব। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি শুটিংয়ের শিডিউল দেন অপূর্ব। সেই অনুযায়ী আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেড শুটিংয়ের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। তবে তার দেওয়া নির্ধারিত তারিখে শুটিংয়ে আসেননি অপূর্ব। পরবর্তীতে সকল ধরনের যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকেন। ফলশ্রুতিতে উল্লিখিত চুক্তি মোতাবেক মো. জিয়াউল ফারুক অপূর্ব আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেড এর নিকট নগদ ৩৩ লাখ টাকা গ্রহণ করার পরেও ১৫টি নাটকে অদ্যাবধি অভিনয় না করায় এবং সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিরত থাকায় আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেড-এর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি এবং ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।”
পরে গেল ৩ মার্চ অভিনেতার বিরুদ্ধে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে লিগ্যাল নোটিশও পাঠায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই। তবে সময় অতিক্রম হলেও যোগাযোগ করেননি অপূর্ব। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আগে আলফা আই সংগঠনকে অবগত করেন সমাধানের জন্য।
টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগটি পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, আমরা খুব দ্রুত একটি মিটিং করে দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি জানব। বিষয়টি সাংগঠনিক ভাবেই দেখা হবে।
আলফা আইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিনেতা অপূর্ব হোয়াটস অ্যাপে একটি টেক্সটের মাধ্যমে জানান, এখন বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
অপূর্ব বলেন, বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেছে এবং আমার সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ বিষয়টি দেখছে। পাশাপাশি টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপাব)ও বিষয়টি নিয়ে অবগত। তারা যা বলার বলবেন। একই সঙ্গে আমার আইনজীবি কথা বলবেন।
তিনি বলেন, যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ায় আমি এগুচ্ছি তাই এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য বা কথাবার্তা এই মুহূর্তে বলতে চাই না। আমি কথা বললে আইনি প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্থ হতে পারে বলে আমার আইনজীবি জানিয়েছেন। তাই যা বলার তারাই বলবেন।
তার ভাষ্য, ‘বিষয়টি এখন আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেছে এবং আমার সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ বিষয়টি দেখছে। পাশাপাশি টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (টেলিপাব) বিষয়টি নিয়ে অবগত; তারা যা বলার বলবেন। একই সঙ্গে আমার আইনজীবী কথা বলবেন। যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ায় আমি এগোচ্ছি, তাই এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য বা কথা এই মুহূর্তে বলতে চাই না।’
তবে এটুকু যোগ করলেন, ‘আমাকে নিয়ে যে অভিযোগটি এসেছে তা মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক ও সন্মানহানিকর। আমি দীর্ঘদিনের সুপরিচিত একজন অভিনয়শিল্পী। অর্থ আত্মসাতের মতো নোংরা মিথ্যা অভিযোগে আমার মতো একজন শিল্পীকে জড়ানো হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
এদিকে টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির জানিয়েছেন, তারা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। এবার দুই পক্ষকে ডেকে পুরো ঘটনা শুনবেন এবং সাংগঠনিকভাবেই এর সুরাহা করার চেষ্টা করবেন। খবর চ্যানেল আই অনলাইন ও বাংলা ট্রিবিউন
ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটুক।