দুই পক্ষের বয়কটের মাঝে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’
মুসাফির’ খ্যাত নির্মাতা আশিকুর রহমানের নতুন চমক ‘অপারেশন অগ্নিপথ’। একটি মাত্র টিজার দিয়েই ছবিটি দর্শক-সমালোচকদের আগ্রহের কেন্দরবিন্দুতে অবস্থান করছে। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান ও খল অভিনেতা মিশা সওদাগরের লুক এবং ছবির লোকেশনের খানিকটা ঝলক দেখে অনেকেই ছবিটিকে হলিউডের সঙ্গেও তুলনা করছেন।
কিন্তু আলোচিত এই ছবির ভবিষ্যৎ শঙ্কায় রয়েছে। কারণ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি কর্তৃক শাকিব খানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আবার অন্যদিকে প্রদর্শক সমিতি বয়কট করেছে মিশা সওদাগরের ছবি। ফলে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির মূল দুই অভিনেতাই বাদ পড়ে যাচ্ছেন! এমন অবস্থায় ছবিটির ভবিষ্যৎ কি? জানিয়েছেন নির্মাতা আশিকুর রহমান নিজেই।
ফেসবুকে আশিকুর রহমান লেখেন, গত কয়েক মাস ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটময় সময় যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। একে তো চলচ্চিত্রের ঘোর সংকটকাল, তার উপরে একে অন্যের উপর অভিযোগ। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্কট আরও গভীর হচ্ছে বলে মনে করি। এই ক্ষেত্রে সবারই চলচ্চিত্রের স্বার্থে কিছুটা পরিশালিত আচরণ কাম্য। তাই এই মুহূর্তে আমার নিজের অবস্থান ও কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছি।
বেশ কয়েক দিন আগে আমাদের সম্মানিত পরিচালক সমিতি চিত্রনায়ক শাকিব খানকে বয়কট করল। তার মানে তার সাথে পরিচালক সমিতির কোনও সদস্যের কাজ করাটা কাম্য নয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল- শাকিব খান তো “অপারেশন অগ্নিপথ” এর কাজ গত বছর শুরু করেছেন। সামনে আমাদের শুটিং, আমরা কি তাহলে বাকি শুটিং এর কাজ করব না? আমরা কি দর্শকদের একটা সুন্দর চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারব না? আমি একটা কথা নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাই, অগ্নিপথে শাকিব খানের অভিনয়, এই চলচ্চিত্র টিকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে যাবে আশা করি। দর্শক কি তাহলে শাকিব খানের এই অভিনয় দেখতে পারবে না? আমাদের পুরো টিম একটা সুন্দর বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উপহার দিতে চাচ্ছি, এটা তো আমাদের দোষ না। অগ্নিপথের জন্য প্রযোজক, ক্রু, আর্টিস্ট সবাই যে পরিশ্রম করেছে এবং করছে তার মূল্য কি এটা? উল্লেখ্য অগ্নিপথ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এর একক প্রযোজনায় সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র। সম্মানিত চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, যৌথ প্রযোজনা নিয়ে আন্দোলনের শাস্তি কি তাহলে দেশি সিনেমা পাবে? অগ্নিপথের টিম, দর্শক আমরা তো কোনও দোষ করি নি। আমার প্রশ্নের উত্তর জানার অপেক্ষায় থাকলাম।
আজ নিউজ দেখলাম, প্রদর্শক সমিতি মিশা সওদাগরকে নিষিদ্ধ করেছে। তার মানে আমাদের অগ্নিপথের শুটিং মিশা সওদাগরকে বাদ দিয়ে করতে হবে। এরূপ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আমরা যদি সেটা করি, তাহলে এই কথা আমি ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশ এর মানুষ বাংলা চলচ্চিত্রের অসাধারণ এক অভিনয়ের অভিজ্ঞতা মিস করবেন। মিশা সওদাগর যে অভিনয় আমাদের সেখানে দিয়েছেন, সেটা দেখাতে না পারলে, অপূরণীয় এক ক্ষতি হিসাবে দর্শকদের মনে প্রশ্ন হিসাবে থেকে যাবে। মিশা ভাই এর অভিনয় যদি “Out of the world” না হয়, তাহলে দর্শক যে শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে মেনে নিব। ব্যক্তিগত সমস্যাকে প্রফেশনাল জায়গায় না আনার, বিনীত অনুরধ রইল।
আমি বয়সে অনেক তরুণ। হয়তবা আমাদের গুরুজনদের তুলনায় আমি অনেক সামান্যই বুঝি। তারপরও আমাদের চলচ্চিত্রের গুরুজনদের প্রতি অনুরোধ করব, বয়কট কোনও সমস্যার সমাধান নয়। বয়কটের মাঝখানে পরে আমাদের মত নতুনদের ক্ষতি আশা করি আপনারা কেউই চান না। আপনারা বড় মানুষ, গুণীজন, আমাদের মত তরুণদের উপর এমন কোনও দাবি চাপিয়ে দেবেন না, যেন আমরা অভিমান করে চলচ্চিত্র, ইন্ডাস্ট্রি, দেশ ছেড়ে চলে যাই। কারণ এক তরুণকে দেখেই আরেক তরুণ অনুপ্রাণিত হয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসবে। এবং তরুণদের ছাড়া একটা ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারেন না। কারণ চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ে আপনারা ও তরুণ ছিলেন। আমরা আপনাদেরই পথ অনুসরণ করে এসেছি। চলচ্চিত্রের এই ইন্ডাস্ট্রিতে সবাইকেই সবার প্রয়োজন। সবারই এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক অবদান আছে। শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে, সেটা ইন্ডাস্ট্রিরই মঙ্গল। তা না হলে সামনে ধ্বংস ছাড়া এর কিছু দেখার থাকবে বলে আমি মনে করি না।
আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি কারও অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে আমার বক্তব্য ও অবস্থান পরিষ্কার করতে। তারপরও যদি কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
প্রসঙ্গত, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবিতে শাকিব খান ও মিশা সওদাগর ছাড়াও অভিনয় করছেন শিবা আলী খান, টাইগার রবি প্রমুখ। ছবিটির সঙ্গীতায়োজন করছেন আকাশ সেন, ইমরান ও ডাব্বু।