দেন মোহর : সালমানের ক্লাসিক
আজকাল সমালোচনার ভঙ্গিতে ঢের পরিবর্তন এসেছে।সরাসরি কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকা লোকজনের সংখ্যাটা বেশি।সরাসরি কথা বলতে আমিও পছন্দ করি।তাই আজকে অমর প্রিয় নায়ক সালমান শাহর ‘দেন মোহর’ সিনেমাটিকে ক্লাসিক বলছি সরাসরি।কেন ক্লাসিক তার উত্তরটা লেখা পড়তে পড়তেই জানা যাবে।
নব্বই দশক এমন একটা সময় ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে যেখানে বাংলাদেশ-ভারতের শোবিজে সোনালি একটা সময় গেছে।বলিউডে যেমন শাহরুখ-আমির-সালমান তাদের সুবাদে অনেক মানসম্মত কাজ হয়েছে পাশাপাশি টলিউডেও হয়েছে।পিছিয়ে ছিল না ঢালিউডও, বরং টেকনিক্যালি এগিয়েই ছিল।সিনেমা, টিভি নাটক, গান, বিজ্ঞাপন সবক্ষেত্রে রাজসিক একটা সময় বয়ে গেছে তখন।বাংলাদেশী বিনোদনমাধ্যমে জোয়ার বয়ে গেছে।সিনেমার সে জোয়ারটি রাতারাতি বদলে গিয়েছিল সালমান শাহ-র হাত ধরে।সেই সালমান শাহর অন্যতম সিনেমা ‘দেন মোহর’।
যেখানে সালমানের অভিনয়ই ক্লাসিক তার সিনোমায় সে দ্যুতি থাকবেই।সালমানের এ সিনেমাটি প্রথম দেখার সময় অত বুঝিনি।পরে অনেকবার দেখে একটা কিছু মনে হয়েছে।এখন মনে হয় অনেক গভীর কিছু।অভিজ্ঞতার পালাবদল একেই বলে।সিনেমার অাবেদন দর্শক ক্লাস অনুযায়ী একেক রকম।তবে একটা সর্বজনীন বিষয় অাছে যেখানে সিনেমার অাবেদনটা ভালো নির্মাণ+ভালো অভিনয় এ দুয়ের মাধ্যমে ঘটে।এ সিনেমাও সেটাই ধারণ করেছে।
সাপের কাহিনী, রাজা-বাদশাহর কাহিনী, আঞ্চলিক গল্পের সিনেমা এগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়।এর প্রধান কারণ, দর্শক এগুলোর মধ্যে সহজে প্রবেশ করতে পারে।তাছাড়া অাবহমান সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝি সেটাই থাকে এসব সিনেমায়।’দেন মোহর’-এর গল্প দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব তবে সেটা ‘খান বাহাদুর’ বংশীয়।বংশীয় গল্পে রাজা-বাদশাহর ইমেজ ফুটে ওঠে।’folk culture’-এ লোককাহিনী বলে যে টার্মটি থাকে এ সিনেমায় সালমান-মৌসুমীর প্রেম, বিয়ে, সংসার টেকানোর সংগ্রাম এসব তুলে ধরে।লোককাহিনীতে এক একটি পরিবার, সমাজ, আচারব্যবস্থার বর্ণনা থাকে।কোন বংশের লোক কি কি করত, কে কিভাবে কত রেওয়াজ পালন করত এসব থাকত অালোচনার টেবিলে।সিনেমার গল্পে দেখা যায় সালমানের বাবা রাজিব এবং মৌসুমীর বাবা আহমেদ শরীফের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব।বংশীয় মর্যাদা রাখতে সালমান-মৌসুমীর বিয়ের দেন মোহর ঠিক করার সময় যে তর্ক চলে সেটাকে আত্মসম্মানে অাঘাত লাগার কারণ ভাবে রাজিব।তারই প্রতিশোধ নিতে রাজিব তার ছেলে সালমানকে কোরঅানের কসম খাইয়ে শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে মোহরানা অাদায় করে মৌসুমীকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়।টানাপড়েন তখনই শুরু হয়।শত্রুতার জের ধরে খুনোখুনি শুরু হয়।রাজিবের ছোট ছেলেকে কুকুর দিয়ে মেরে ফেললে প্রতিশোধে বাহাদুর নামের ঘোড়াও প্রতিশোধ নেয়।সালমান-মৌসুমীর সন্তানকে দিয়ে ক্লাইমেক্স আসে।ক্লাইমেক্সে হিংসার বশে রাজিব-আহমেদ শরীফের দুই শত্রুর মূল টার্গেট সালমান-মৌসুমীর ছেলেকে স্বয়ং মৌসুমী-ই কেটে দু-টুকরো করার সিদ্ধান্ত নেয়।তলোয়ার চালাতে গেলে রাজিব-আহমেদ শরীফ হাত বাড়িয়ে দেয় শিশুটির ওপর।রক্তাক্ত হয় তাদের হাত।ভুল স্বীকার করে নিজের।
এ গল্পে রাজকাহিনীর স্পর্শে একটা বড় প্রেজেন্টেশন কাজ করেছে।কস্টিউম, গেটআপ, ঘোড়ার ব্যবহার, নদীর ঘাটে পানি অানতে যাওয়া, জলসা, সাকী শরাব এসব ছিল স্বাভাবিকভাবেই।পরিচালক শফি বিক্রমপুরী পুরো অায়োজনটিকে সাজিয়েছেন সেভাবেই যাতে রাজকাহিনীর রেশ থাকে।অহংকারের যে জায়গাগুলোতে অটল থাকে রাজ অধিপতিরা রাজিব-আহমেদ শরীফ ক্লাসিক সেখানে।প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, মিলন সব মিলিয়ে সালমান-মৌসুমীর অভিনয় অসাধারণ।গানগুলো যেমন – শুধু একবার, আমি তোমার প্রেমে পাগল এগুলো গ্রেট।সালমানের অভিনয়ে এত ভেরিয়েশন যে কোথায় কতটুকু মেপে মেপে অভিনয়টা করতে হয় দেখিয়ে দিয়েছে।মৌসুমীর সাথে প্রথম দেখায় ছেলেমানুষি, প্রেম, বিয়ে, কোরঅানে হাত রেখে শপথের পরে মৌসুমীর প্রাসাদ ছেড়ে যাবার সময় অশ্রুভেজা চোখ, ভালোবাসা,সন্তান টিকিয়ে রাখতে নতুন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া এসব ভেরিয়েশনে সালমান অনবদ্য।
এবার সিনেমার সাবজেক্ট ও প্রেজেন্টেশন দেখে নিজেরাই মিলিয়ে নিন ‘দেন মোহর’ কিভাবে ‘ক্লাসিক’ হল..