দেশপ্রেমিক : যে গল্পের প্রেক্ষাপট আজ আরও বাস্তব
কাজী হায়াৎ নামের বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে একজন অসাধারন পরিচালক আছেন যা আজকের ডিজিটাল চলচ্চিত্রের তথাকথিত মেধাবী গোষ্ঠীর অনেক ডিজিটাল নির্মাতারা স্বীকারই করতে চান না। এই সকল নব্য মেধাবীরা মনে করে যে উনারা আজ যা দেখাচ্ছেন সেটাই মূলত চলচ্চিত্র আর কাজী হায়াৎ ও তাঁর সমমনা যারা ছিলেন তাঁরা সব বস্তাপোঁচা ছবি দেখিয়েছেন আমাদের !!! যা তাঁদের চরম মূর্খতার প্রমাণ দেয়। আমাদের নতুনধারার চলচ্চিত্রে এমনও কিছু নির্বোধ আছে যারা বলে ‘’ তখন (৮০/৯০ দশক) বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে ‘’So called মেধাবী‘’ ছিল যারা আসলে মেধাবী না ‘’যা শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাইনা। যারা মনে করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র কিছু গতানুগতিক ফর্মুলার ছবি তাঁদেরকে বলবো দেশপ্রেমিক ছবিটা পারলে একটু দেখেন।
১৯৯৪ সাল, বাংলা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সালমান –সানির মতো নতুন তারকাদের জয় জয়কার চলছিল। নতুনদের সাথে আলমগীর, সোহেল রানা, জসিম , রুবেল, মান্না ,ইলিয়াস কাঞ্চন’রাও যেন জ্বলে উঠলেন। শহুরে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত শ্রেণীর কিশোর তরুণ সিনেমার দর্শকরা সালমান সানির ভক্তের চেয়ে যেন বাংলা সিনেমার ভক্ত হয়ে উঠলো নতুন করে। মান্না তাঁর ক্যারিয়ারের সহ নায়ক হিসেবে ৭ টি বছর পর ‘কাশেম মালার প্রেম’ দিয়ে একক নায়ক হিসেবে প্রমাণ দেখানো মাত্রই ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’ ,’প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘সাক্ষাত’, ‘শাদী মোবারক’ , ‘আন্দোলন’, ‘অন্ধ প্রেম’ ছবিগুলো দিয়ে যখন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের পথে হাঁটছেন তখনই মুক্তি পেলো কাজী হায়াতের দেশপ্রেমিক ছবিটি। আমরা সবাই ভেবেছিলাম ছবিটি হয়তো আলমগীর ও মান্নাকে কেন্দ্র করে ‘দাঙ্গা’ ,’ত্রাস’ এর মতো কোন আগুনঝরা ছবি হবে। যা ভেবে সিনেমা হলে ‘দেশ্রপ্রেমিক’ ছবিটি দেখতে গেলাম ফেরার পথে চোখেমুখে আমি ও আমার বন্ধুদের রাজ্যর বিস্ময় ভর করেছে। পুরো ছবিটি মান্না’র নয় আলমগীরের বা আলমগীর কেন্দ্রিক যা এককথায় অসাধারন একটি ছবি। মান্নাকে মান্নার মতো না পেয়ে দর্শকরা ধাক্কা খেলেও ছবিটি দেখে নিরাশ হয়নি বরং ছবিটি দেখে অন্যদের দেখার জন্য উৎসাহিত করেছিল ।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
আলমগীর একজন চিত্রপরিচালক। সংসারে স্ত্রী (ডলি জহুর) ও এক শিশু কন্যা (চম্পা) নিয়েই সুখেই আছেন। স্ত্রী ডলি জহুর শিল্পপতি পিতার একমাত্র মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও বাবার অমতে খুব সাধারন আলমগীরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন । যিনি আলমগীরকে নিয়ে গর্ব করেন। শ্বশুর আরিফুল হকের কাছে আলমগীর হলো পৃথিবীর সবচেয়ে নির্বোধ ব্যক্তি। যিনি পরিচালক আলমগীর’কে পছন্দ করেন না। আলমগীর দেশপ্রেমিক নামের একটি নতুন ছবি নির্মাণ করছেন যা ছিল নষ্ট সমাজ ও নষ্ট রাজনীতির এক সাহসী চিত্রায়ন। কিন্তু ছবিটি মুক্তির আগেই সমালোচিত হয় সরকারের পক্ষ থেকে। আলমগীর’কে তথ্যমন্ত্রী বাসায় ডেকে নিয়ে ছবিটি মুক্তি না দিতে অনুরোধ জানায় এবং এর বদলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেন । আলমগীর তথ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব সরাসরি ফিরিয়ে দেন এবং শুরু করেন ছবিটি মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া । কিন্তু সরকারের নির্দেশে তাঁকে এফডিসির ল্যাবে ছবিটি প্রিন্ট করতে দেয়া হয় না। পদে পদে আলমগীর বাধাগ্রস্থ হোন। কোন প্রযোজক, পরিবেশক ছবিটির বাকি কাজ শেষ করতে অর্থ প্রদানে আগ্রহী হয় না। আলমগীর বিদেশ থেকে ছবিটি প্রিন্ট করিয়ে আনার জন্য এফডিসির সম্পাদক আশিস কুমার লৌহের কাছ থেকে টাকা ধার নেন এবং স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে বাকি টাকা যোগাড় করেন । সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন দেখলেন কোন ভাবেই আলমগীরকে থামানো যাচ্ছে না তখনই রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং একটি স্বর্ণচোরাচালানের মামলায় জড়িয়ে দেয়। রিমান্ডের নামে চলে পুলিশের অমানুষিক নির্যাতন। স্ত্রী ও সন্তানের কথা চিন্তাকরে পুলিশের কথায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে রাজী হয়। স্বীকারোক্তি দেয়ায় আলমগীরের ২০ বছরের জেল হয়। আলমগীর চলে যান অন্ধকার কারাগারে । স্ত্রী ডলি জহুর শিল্পপতি বাবার সহযোগিতায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চলে যান দেশের বাহিরে।
২০ বছর বৃদ্ধ আলমগীর জেল থেকে বের হোন এবং ঠিকানাবিহীন ভাবে পথে পথে ঘুরেন। একদিন শ্বশুরবাড়ীতে যান স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজে। শ্বশুর তাঁকে তাড়িয়ে দেন। আলমগীরের মেয়ে চম্পা বিদেশ থেকে ফিরে আসে এবং তাঁর বাবাকে খুঁজে বেড়ায় । চম্পার বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়ায় মান্না। মান্না ও চম্পা সারাদিন আলমগীরকে খুঁজে বেড়ায়। নানা ঘটনা ও নাটকীয়তায় ছবিটা এগিয়ে যায় এবং একসময় চম্পা তাঁর বাবা আলমগীরকে খুঁজে পায়। আলমগীরকে খুঁজে পেয়ে নানা আরিফুল হক’কে ছেড়ে আলাদা ভাবে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে বসবাস করতে থাকে এবং আলমগীরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনার চেষ্টা করে। চম্পা আলমগীরের নির্মিত সেই দেশপ্রেমিক ছবিটা মুক্তির প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করে যা ছিল আলমগীরের স্বপ্ন । এরমধ্য আলমগীর আক্রান্ত হোন মরনব্যাধি রোগ লিভার ক্যান্সারে। মৃত্যুপথযাত্রী আলমগীরের ছবি মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মধ্যে সাড়াফেলে। দর্শকরা আলমগীরের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে সেই অন্যায়ের বিচার দাবী করে । চীনের বেইজিং তে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আলমগীরের ছবিটি পুরস্কার লাভ করে যা চম্পা আলমগীরের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহন করেন। আলমগীর পুরস্কারটি হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এবং চিরবিদায়ের আগে সবার কাছে অনুরোধ করেন যে ‘’ কখনও শিল্পীর কণ্ঠকে স্তব্দ করতে যেও না। তাঁর উপর যে অন্যায়টা করা হয়েছে আর কোনদিন যেন শাসকগোষ্ঠীর এমন নির্যাতন কোন শিল্পীর জীবনে না ঘটে ।‘’ সবশেষে মেয়ে চম্পা , মান্না, আশিস কুমার লৌহ সহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে আলমগীর সমবেত কণ্ঠে ‘’ ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’’ গানটি গাইতে গাইতে মৃত্যুবরণ করেন । ছবির শেষ দৃশ্যটি ছিল আমার দেখা সেরা ৫ টি শেষ দৃশ্যর একটি যা ছিল বাংলা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের অন্যতম ক্লাসিক সমাপ্তি। একটি মূলধারার বাণিজ্যিক বিনোদনধর্মী ছবি অথচ মারপিট ছাড়াই কত চমৎকার সমাপ্তি ভাবা যায়?
ছবিটা আলমগীরের জীবনের সেরা অভিনয় সমৃদ্ধ একটি ছবি এতে কোন সন্দেহ নেই। চম্পা, মান্না, মিজু আহমেদ, আরিফুল হক প্রতিটা চরিত্র সাবলীল অভিনয় করেছেন। আলমগীরের পর চম্পা ছিলেন ছবিতে অনবদ্য। পুরো ছবিটা কাজী হায়াৎ খুব যত্ন করে বানিয়েছেন সেটা স্পষ্ট। ছবিতে কাজী হায়াৎ একটা নির্দিষ্ট গল্প ছক বেঁধে নির্মাণ করেছেন এবং কাহিনি,সংলাপ ও চিত্রনাট্য এই তিনটি মূল বিষয়ের উপর কাজী গুরুত্ব সহকারে কাজ করেছেন যার ফলে ছবিটি পর্দায় মনে হয়েছে কোন বাস্তব ঘটনা আড়ালে থেকে ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে। একবারও মনে হয়নি পর্দায় যা দেখছি তা কোন ছবির গল্প যা বাস্তবে মিথ্যা। প্রতিটা দৃশ্য বাস্তবতার সাথে মিল রেখে কাজী এগিয়েছেন। মূল বক্তব্যটা শিক্ষিত, অশিক্ষিত কোন শ্রেণীর দর্শকদের কাছেই দুর্বোধ্য ছিল না । সব শ্রেণীর মানুষগুলোর চেহারায় পর্দার আলমগীরের জন্য একটা হাহাকার স্পষ্ট দেখা গেছে। এখানেই পরিচালক সফল। ছবির যে বিষয়বস্তু সেটা আজ থেকে ২১ বছর আগেও যেমন ছিল এখন তাঁর চেয়েও বেশি /প্রকট। সালমান ,সানি, রুবেল,মান্না’র সেরা সময়ে সিনিয়র অভিনেতা আলমগীর’কে কেন্দ্র করে ছবি বানানো এবং কোন খলনায়কের কুটলামি ও প্রতিশোধ নির্ভর ছবির ভিড়ে খলনায়ক ছাড়া সম্পূর্ণ একটি ব্যতিক্রমধর্মী গল্প নিয়ে সব শ্রেনির দর্শকদের মন জয় করার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ কাজী হায়াৎ খুব দারুন ভাবেই সফল হয়েছিলেন। মান্নার দেশপ্রেমিক ছবিটা দেখে আজকের চলচ্চিত্রের তথাকথিত ১নং নায়ক ও তাঁর ভক্তদের সেখা উচিৎ কিভাবে ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকাবস্থায় একজন নায়ক নিজেকে পার্শ্ব চরিত্রে রেখে অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা কুঁড়াতে পারে । ক্যারিয়ারে সস্তা জনপ্রিয় ছবি অনেক পাওয়া যাবে কিন্তু মনে দাগ কাটার মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ বারবার আসেনা যা মান্না সেইসময় নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ দিয়েছিলেন ।
আজাদ রহমানের সুর সঙ্গীতে ছবির গানগুলো ছিল মানানসই। কাজী হায়াৎ এর আগে তাঁর চলচ্চিত্রে বিদ্রোহী নজরুলকে বারবার এনেছিলেন আর দেশপ্রেমিক ছবিতে আনলেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথকে। দেশপ্রেমিক ছবিতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে একাধিক রবীন্দ্র সঙ্গীতে ছিল। বিশেষ করে ডলি জহুর যখন তাঁর শিশু কন্যাকে গান ‘‘’ মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে / তা তা থৈ থৈ , তা তা থৈ থৈ , তা তা থৈ থৈ ……’’ শেখাচ্ছিল এবং আলমগীর যখন ছবি মুক্তি দেয়ার দেয়া জন্য হন্য হয়ে টাকা খুঁজছিলেন সেই সময়ে আবহে ‘’ সংকটেতে বিহবলতা নিজেরই অপমান’’ রবীন্দ্র সঙ্গীত দুটো ছবির দৃশ্যগুলো ছিল দারুন চিত্রায়ন। এই ছবিতে কাজী হায়াৎ ‘’ তুমি দেখেছো কভু ‘’ গানটিকেও নতুন করে নির্মাণ করেন যা ছবির গল্পের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য বজায় ছিল। এমন একটি বিষয়বস্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য খুবই বিপদজনক একজন পরিচালকের জন্য, অথচ কাজী হায়াৎ সেই কঠিন বিষয়টাকেই বাণিজ্যিক বিনোদনধর্মী ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে নিয়েছেন এবং তা সার্থকভাবে নির্মাণ করে সফলও হয়েছেন। এমন বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি কোন বিকল্পধারার পরিচালকদেরও কোনদিন নির্মাণ করতে দেখিনি ,হয়তো দেখবোও না। এমন একটি বলিষ্ঠ বক্তব্যর সাহসী ছবি হয়তো আমাদের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে আর দেখা যাবে না।
সত্যি কথা বলতে দেশপ্রেমিক ছবিটা সম্পর্কে লিখে বর্ণনা করে বুঝানো সম্ভব নয় যে ছবিটি কত অসাধারন ছিল। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল আজ থেকে ২১ বছর আগে । আজ ২০১৫ সাল অথচ আজ আমরা বাস্তবে একাধিক ঘটনা দেখছি দেশপ্রেমিক ছবিটার গল্পের চিত্র । রাষ্ট্রশক্তির মতামত উপেক্ষা করে বা বিরোধিতা করলে কিছু প্রকাশ করতে গেলে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা সহ সাধারন মানুষের উপর কি রকম নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে যা এক কথায় জনগণের মৌলিক অধিকার বাকস্বাধীনতা’র হরনের বাস্তবচিত্র। সরকারের রোষানলে পড়ে আজ অনেক সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল বন্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিক, শিল্পী, টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক সহ সাধারন অনেক মানুষকে আজ আমরা জেলে যেতে দেখেছি । অথচ আজ থেকে ২১ বছর আগে বাংলা মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের গুণী পরিচালক কাজী হায়াৎ তাঁর দেশপ্রেমিক ছবিটার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরনের নির্মম এক চিত্র সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দি করেছিলেন যা দেখে সেদিন অসংখ্য দর্শকের চোখে অস্রু এসেছিল । শুধু টাই নয় ছবিটা সব শ্রেণীর দর্শকসহ সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল যার ফলে দেশপ্রেমিক ছবিটি ১৯৯৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে হুমায়ুন আহমেদ এর ‘আগুনের পরশমণি’’ এর সাথে ‘শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র’ পুরস্কারের শাখায় ভাগ বসিয়েছিল এবং একাধিক শাখায় পুরস্কার লাভ করেছিল যা হলো – যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (আলমগীর), শ্রেষ্ঠ পরিচালক (কাজী হায়াৎ), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার (কাজী হায়াৎ) ।
২১ টি বছর আগে সিলেটের নন্দিতা সিনেমায় দেখেছিলাম এরপর আর দেখা হয়নি ছবিটি, কিন্তু এখনও বাংলা বাণিজ্যিক ছবির গল্প উঠলে আমি দেশপ্রেমিক ছবিটাকে মনে করি। খুব ইচ্ছে করে এমন একটি ছবি আবার আমাদের চলচ্চিত্রে দেখতে কিন্তু এমন ছবি বানানোর সাহসী ,দূরদর্শী নির্মাতা,প্রযোজক আমাদের দেশে নেই। প্রযোজক শেখ মুজিবুর রহমান (হাসনাবাদ কথাচিত্র) এর অন্যতম সেরা ও সফল ছবি দেশপ্রেমিক। পুরো ছবিতে কাজী হায়াৎ এমন কিছু বিষয়ের অবতারনা করেছেন যা আপনাকে ভাবাবেই। সেদিনের দেশপ্রেমিক ছবিটার গল্প যেন আজ অহরহ ঘটছে। শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পরে একজন মেধাবী মানুষের জীবন কি ভাবে তছনছ হয়ে যায় সেটা দেশপ্রেমিক ছবিতে সাহসিকতার সাথে তুলে ধরতে পেরেছিলেন কাজী হায়াৎ । কাজী হায়াৎ ছবিটির মাঝে বারবার বলতে চেয়েছেন জনগণের বাকস্বাধীনতা হরন করা কোন সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তিজীবন কোন কিছুর জন্যই সুফল বয়ে আনে না। আমাদের রাষ্ট্রে যখন বাকস্বাধীনতা থাকে না তখন সমাজে নানাক্ষেত্রে অসংগতি দেখা দেয় যা নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারেনা। শাসকগোষ্ঠী থেকে যায় সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে ফলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভবপর হয়না । দেশপ্রেমিক ছবিটার মতোই আজ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পরে অনেক মেধাবী মানুষ অকালে হারিয়ে যাচ্ছেন যার প্রতিবাদ আমরা করতে শিখিনি । আমাদের এই ব্যর্থতার কারণে শাসকগোষ্ঠী যেন আজ আমাদের বুকে পাথর হয়ে বসে আছে । আজ ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র’ নামের যেসব চলচ্চিত্র তথাকথিত মেধাবীরা তৈরি করছে তাঁদের বলবো কাজী হায়াতের দেশপ্রেমিক ছবিটার মতো জীবন ঘনিষ্ঠ সাহসী একটি বাণিজ্যিক ছবি আজ নির্মাণ করে দেখান তো ? জানি পারবেন না , কারণ ঐ তথাকথিত মেধাবীরা আসলে কি সেটা গত ১০ বছরে বারবার প্রমাণ হয়েছে যারা বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির ইতিহাসটাই জানে না সঠিক ভাবে । ভালো ছবি বানাতে গেলে ‘বিকল্পধারা’ বা ‘অফট্র্যাক’ যাওয়া লাগে না এবং টেলিভিশনের নাট্যশিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করানো লাগে না। ভালো ছবি বানানোর মেধা থাকলে সব শ্রেণীর দর্শকদের জন্য মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির অভিনেতা অভিনেত্রীদের দিয়েই মনে দাগ কাটার মতো বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ করা যায়।
প্রিয় ছবির হারিয়ে যাওয়া দুর্লভ এই পোস্টারটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন কাজল রিপন ভাই যার কাছে কৃতজ্ঞতা’ শেষ নেই ।
ফজলে এলাহী (কবি ও কাব্য)