Select Page

দেশবিভাগের বাস্তবতা

দেশবিভাগের বাস্তবতা

পরিচালক আশুতোষ সুজনের যে কাজটির জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নামটি সবসময় সেটা ছিল একটা নাটক, নাম ‘বরাবর স্যার’। অত্যন্ত মর্মান্তিক গল্পের একটি নাটক ছিল। নাটকটিতে পরীক্ষার হলে একটা ছেলে তার জীবনের বাস্তবতার গল্প লিখে যাচ্ছে পরীক্ষার খাতাতেই এবং সে পরীক্ষার পর তার নিজের জীবন শেষ করবে বলে সিদ্ধান্তও নিয়েছে। অন্যরকম একটা গল্প ছিল।

এই পরিচালকের পরিচিতি নাটকের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিল। মানসম্মত নাটকের নির্ভরযোগ্য একটি নাম হয়ে ওঠে একসময়। বড়পর্দায় অভিষেক ঘটে ‘দেশান্তর‘ চলচ্চিত্র দিয়ে। কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘দেশান্তর’ উপন্যাস থেকে নির্মিত এটি একটি সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্র।

গল্পটা সহজ। দেশবিভাগের প্রেক্ষাপটে একটি হিন্দু পরিবার দোটানায় আছে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাবে কিনা। এর মধ্যে প্রতিবেশী অনেক কথা বলে তাদেরকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তারা কি যাবে শেষ পর্যন্ত নাকি অন্যকিছু ঘটবে। এর মধ্যে আরো কিছু ঘটনা ঘটে এবং ছবির শেষটা থাকে মর্মস্পর্শী।

‘দেশান্তর’ ন্যাচারাল প্রেজেন্টেশনের ছবি। কোনো আতিশয্যের বালাই নেই। দেখতে দেখতে মনে হবে যে জিনিসটা যেখানে দরকার ঠিক সেখানেই আছে এমন ন্যাচারাল করে দেখানো হয়েছে। পরিচালক আশুতোষ সুজনের কাজের দক্ষতা এটা।

পরিবারটির প্রধান দুজন আহমেদ রুবেল ও মৌসুমী দম্পতি। তাদের অভিনয় ছবিটির প্রাণ পাশাপাশি রোদেলা টাপুরের যুবতী মেয়ে ও পুত্রবধূর চরিত্রে মিশে যাওয়া যেন ভবিষ্যতের ভালো একজন অভিনেত্রীর ছাপকেই স্পষ্ট করে তোলে। ইয়াশ রোহান এ ধরনের ছবির জন্য একদম পারফেক্ট চয়েজ। শুভাশিস ভৌমিক ও মোমেনা চৌধুরী শ্বশুর-শাশুড়ির ভূমিকায় অসাধারণ। প্রত্যেকের ন্যাচারাল অভিনয়ের মধ্য দিয়েই ছবিটি অভিনয়সমৃদ্ধ ছবি হয়ে উঠেছে।

দেশবিভাগের বাস্তবতা ছবিটিতে স্তরে স্তরে এসেছে। প্রতিবেশীর আগ্রহ, নিজেদের অনাগ্রহ এরপর মেয়ের জীবনের মধ্য দিয়ে। এই ত্রিমাত্রিক আবহ ছবিটিকে মর্মস্পর্শী করে তুলেছে।

একটা ভালো গল্প থাকবে, ভালো অভিনয় দেখার সুযোগ থাকবে এমন ছবি যারা পছন্দ করে তাদের জন্য ‘দেশান্তর’ মাস্টওয়াচ।

রেটিং – ৮/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন