দেশা দ্য লিডার: নতুন কিন্তু নতুন না
বাংলাদেশে গত ১০ বছরে কমার্শিয়াল সিনেমা বলতে তেমন কিছু নাই (দুই একটা ব্যতিক্রম বাদে)। যেগুলো আছে সেগুলো ‘ভাদাইম্যা সিরিজ’* এর ঢাকাই সংস্করণ ছাড়া আর কিছু নয়। আমার মাথায় এই বাক্য রীতিমত ডিফল্ট হয়ে গেছে। তারপরও আমি প্রায়ই হলে সিনেমা দেখতে যাই। এখনতো হলে সিনেমা দেখাও এখন একটা বিলাসিতা। ঢাকায় একটা মঞ্চ নাটকের শো এর টিকিট যেখানে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা সেখানে বলাকায় ডিসি’র টিকিট ২০০ টাকা। এইটা অতিরিক্ত মনে হয় আমার কাছে।
ঐদিন সন্ধ্যায় যখন আমি বলাকায় ছবি দেখতে ঢুকলাম, ডিসিতে দেখলাম আমার মতো জনা ত্রিশেক মানুষ। অথচ ছবির ট্রেলার দেখে আমার ধারণা ছিলো আমি বোধহয় আগেভাগে না গেলে টিকিটই পাবো না। দেশা’র ট্রেলার দেখে মনে হইছিলো আমরা যেমন ভারতীয় কমার্শিয়াল ছবি ছবি দেখি, এবার বোধহয় তেমন কোনও কমার্শিয়াল ছবিই বাংলাদেশে নির্মিত হয়েছে।
ছবির শুরুতেই দেখি সাংবাদিক মুঞ্জুরুল করিম এর একটা উপস্থাপনা। উল্লেখ্য শেষ দৃশ্যেও তারই একটা প্রেসেন্টেশন ছিলো। যার সাথে ছবির কোনও সম্পর্কই পাইলাম না আগা গোড়া। পর মুহূর্তেই দেখি টিভি চ্যানেলে একজনের এন্ট্রি। একটা টিভি চ্যানেল এই ছবির মিডিয়া পার্টনার, তার জন্য বিশাল একটা দৃশ্য। অথচ অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীনভাবে দেখানো হলো। তারপর ছবি শুরু।
বলে রাখি, সিনেমার কথা বলতে গিয়ে সিনেমার গল্প বলে দেয়া আমার কাছে পছন্দ না। তাই আমি ছবির গল্প বললাম না। তবে ছবির প্রথমার্ধের গল্প আমার ভাল্লাগছে। গল্প বলার ধরণও খারাপ না। কমার্শিয়াল ফিল্মের জন্য এমন সহজ করে গল্প বলা বলতে গেলে দর্শকদের দাবি। ছবির ইন্টারভেলের আগে একটা সময় মনে হচ্ছিলো ছবির গল্প তো বলতে গেলে শেষ।
তাহলে মূল গল্প কি? মূল গল্প আসলে ছবিটার পর। তবে ঐটুক না হলে বলা যেতে পারতো ছবিটা বাংলাদেশের সিনেমায় নতুন গল্পের। এখন বলা হচ্ছে তামিল-তেলেগু’র নকল-কপি। তবে পরিচালকের যে দর্শককে একটা রাজনৈতিক থ্রিলার দেয়ার ইচ্ছা ছিলো আর তা তিনি গছিয়েছেন কোনওরকম তা আমরা সিনেমা শেষে বুঝতে পারি। কারণ, সিনেমাটা থ্রিলার হইলেও থ্রিলটা দিতে পারে নি। মানে ছবিতে সবই ছিলো পলিটিক্যাল ক্ল্যাশ, খুন, গ্ল্যামার। কিন্তু প্রাণ ছিলো না। মনে হচ্ছিলো প্রাণ পাচ্ছি না।
ছবির গানগুলো কেমন যেন গান হিসেবে শুনতে ইচ্ছা করছিলো না। প্রিয় শিল্পী জেমস এর টাইটেল গানটার ভিস্যুয়াল ছবির ভিস্যুয়ালের মতোই আহামরি কিছু নাই। পুরো ছবিতে তারিক আনাম খান এর অভিনয় দেখা ছাড়া চমৎকারিত্বের কিছুই নাই। ট্রেলারে, ছবি মুক্তির সময় নায়ক শিপনকে নিয়ে সংবাদ ফিচার পড়ে মনে হচ্ছিলো মনে হয় বাংলা ছবিতে আরও একটা ম্যানলি লুক নিয়ে নতুন নায়ক চলে এসেছে। এই নায়কের (কিঞ্চিৎ ভুড়ি থাকলেও) বডি ফিগার খারাপ না। দেখতেও ম্যানলিই। কিন্তু মুখ খুললেই মনে হয় এই ছিলো আমাদের কপালে?
ছবির আরও কয়েকটা ভালো দিকের একটা হলো কয়েকটা দৃশ্যের বেশ ভালো নির্মাণ। যেমন মাহির চরিত্র সৃষ্টি’কে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরে ফেলার দৃশ্য আমার চোখে লাগছে। এমন দুর্ঘটনার দৃশ্য বাংলাদেশের ছবিতে দেখিনাই আগে। যদিও খুব আহামরি কিছু হয় নাই, তবুও খারাপ না। সব শেষে যে কথাটা না বললেই নয়, তা হইলো এই পরিচালকের মতো তরুণ পরিচালকরা যদি নিয়মিত বাণিজ্যিক ছবি বানায় আর প্রত্যেক ছবিতে নিজেদের কাজের উন্নতি ঘটায় তাহলে বাংলা ছবির দিন বদলাতে বেশি দিন লাগবে না।
*ভাদাইম্যা সিরিজ = টাঙ্গাইল জেলার দুই ভাড় নিজেরা কৌতুক লিখে তা ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে শ্যুট করে তা বাজারজাত করে। বৃহত্তর ময়মনসিংহে ব্যাপক জনপ্রিয় এই ভাদাইম্যা সিরিজ।