দেশে না দেখলে বিদেশেও বাংলা ছবি দেখছে না দর্শক!
গত কয়েক বছর ধরে বিদেশে বাজারে ভালো ব্যবসা করে বাংলাদেশি সিনেমা। কোনো কোনোটির আয় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চলতি বছরও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু পরপর কয়েকটি সিনেমা উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য অঞ্চলে ভালো যাওয়ার পর অচমকা সে ধারায় স্থবিরতা নেমেছে।
‘অন্তর্জাল’ ও ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’ সিনেমার দৃশ্য
চলতি বছরে দেশে সফল ছবি বলতেই দুটো নাম আসছে- হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’ ও রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’। দেশের মতো সিনেমাটি উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য অঞ্চলে ভালো ব্যবসা করেছে। রেকর্ডধারী না হলেও সাড়া সন্তুষ্টজনক। এমনকি কোনো কোনো দেশে স্বল্প পরিসরে প্রদর্শিত হয়ে ভালো করেছে চয়নিকা চৌধুরীর ‘প্রহেলিকা’।
এমন পরিস্থিতিতে আরো দুটি সিনেমা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল। এমনকি বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক পর্দা দখল করে উত্তর আমেরিকায়। কিন্তু সেই প্রত্যাশার সঙ্গে দর্শক সাড়ার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
ছবি দুটো হলো আসিফ আকবরের ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’ ও দীপংকর দীপনের ‘অন্তর্জাল’।
কাজী আনোয়ার হোসেনের আইকনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। কয়েক বছর ধরে হাইপও ধরে রেখে ছিল জাজ মাল্টিমিডিয়া। দেশি-বিদেশি তারকাদের সেই সম্মিলনকে উদযাপনকে আগ্রহও ছিল দর্শকদের। গত ২৫ আগস্ট দেশের ১৬ ও উত্তর আমেরিকার ১৫১ পর্দায় মুক্তি পায়। কিন্তু মুক্তির পর মিশ্র থেকে নেতিবাচক রিভিউ পায়। ফলে যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটি রেকর্ড হল পেয়েও দেশের বাইরে থেকে কোনো ভালো ফল আনতে পারেনি।
এর পরের মাসের শুরুতেই মুক্তির কথা ছিল ‘অন্তর্জাল’-এর। বারবার পিছিয়ে যাওয়া সিনেমাটি পড়ে শাহরুখ খানের ‘জাওয়ান’-এর চক্করে। এ দফায় দুই সপ্তাহ পিছিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ‘জাওয়ান’ দুই সপ্তাহ নয়, এখনো মাস পেরিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে। অন্যদিকে ইতিবাচক থেকে মিশ্র রিভিউ পেয়েও ‘অন্তর্জাল’ সুবিধা করতে পারেনি। সিনেমাটি ২২ সেপ্টেম্বর দেশের ৩৪ ও উত্তর আমেরিকার ১৫০ হলে মুক্তি পায়, যা দেশি প্রযোজনার বাংলা সিনেমা হিসেবে শীর্ষ হলের রেকর্ডধারী। কিন্তু কোথাও ভালো ফল পায়নি।
সিনেমাটি দুটো উত্তর আমেরিকা পরিবেশক স্বপ্ন স্কোয়ারক্রো। প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই বাংলা সিনেমার প্রচারে উদারহস্ত। সাফল্য উদযাপনে কার্পণ্য করে না। খোলাখুলি প্রকাশ করে এসেছে হল পরিস্থিতি ও বক্স অফিস রিপোর্ট। গত ঈদের ‘প্রিয়তমা’র ব্যবসার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে সরব থাকলেও ‘এমআর নাইন’ ও ‘অন্তর্জাল’ নিয়ে একদম নীরব। সিনেমা মুক্তির পর কোনো আপডেিই শেয়ার করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সিনেমার বক্স অফিস রিপোর্ট একদমই সন্তোষজনক নয়। তাই তারা এ নিয়ে আপাতত কথা না বলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামনের অবস্থা নিয়েই ভাবছে।
অবশ্য শুধু এ দুটি সিনেমাই নয় বিদেশে সফল বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে একটা সাধারণ বিষয় হলো, সাফল্যের ক্ষেত্রে হোমগ্রাউন্ড হলো বাংলাদেশ। অতীতে দেখা গেছে, শুধু ‘পাপ পূন্য’ (দেশে প্রচার থাকলে আরো ভালো করতো) বাদ দিলে দেবী, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, পরাণ, হাওয়া, প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ ও প্রহেলিকা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সে দিক থেকে ধারণা করা যায়, কনটেন্টের ভালো-মন্দ বা হাইপ অনেকটাই নির্ভর করছে দেশের ওপর। প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়, দেশি দর্শকদের মন জয় করতে পারলে সেই ছবি বাইরেও সফল হবে।