Select Page

হুমায়ূন পরিবারের শর্তের জালে বাতিল ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’

হুমায়ূন পরিবারের শর্তের জালে বাতিল ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ অবলম্বনে ছবির বানানোর জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে অনুদান পেয়েছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। কিন্তু প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এলেন ‘আয়নাবাজি’ নির্মাতা, সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথম কিস্তির টাকা জরিমানাসহ ফেরত দেওয়ার।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ছবিটি নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকার প্রথম কিস্তি ১৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে এরমধ্যে জমা পড়েছে অমিতাভের অ্যাকাউন্টে। এখন অনুদান কমিটির সঙ্গে আলাপও করে অমিতাভ নিজের নতুন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যে পুরো টাকাটাই ফেরত দিচ্ছেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউনকে এই নির্মাতা ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ নির্মাণের জন্য তার দশ বছরের প্রস্তুতির কথা জানান। তিন বছর ধরে এর চিত্রনাট্য করেছেন রঞ্জন রব্বানীকে সঙ্গে রেখে। তারও আগে দুই দফা সরাসরি হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে ছবিটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন নিয়েছেন। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার এই ছবি নির্মাণের বিষয়ে পজিটিভ আলাপ হয়েছে।

শেষ মুহূর্তে কেন পিছিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মূল কারণ বলার আগে একটু প্রেক্ষাপট বলি। এই ছবিটি নির্মাণের জন্য প্রথম স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নেন নির্মাতা আবু সাইয়ীদ ভাই। একসঙ্গে দুটি। এরমধ্যে ‘নিরন্তর’ তিনি নির্মাণ করেছেন। তখনই আমি সাইয়ীদ ভাইয়ের কাছ থেকে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ নির্মাণের অনুমোদন নিই। এবং আমি আবার স্যারের কাছেও যাই। তিনি চোখ বন্ধ করে আমাকে অনুমোদন দেন। তাই নয়, স্যার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে যখন দেখা করতে যাই, তখনও তিনি তাগাদা দিচ্ছিলেন, ‘ছবিটা বানাও না কেন?’ তখন ‘আয়নাবাজি’র জন্য সুযোগ করতে পারিনি। এরপর স্যার মারা গেলেন। স্বাভাবিক নিয়মেই আমি সিনেমার বিষয়টি স্যারের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও জানাই। তারা পজিটিভ ছিলেন। তাছাড়া এই ছবিটি অনুদান নিয়ে বানাবো- তেমন একটা বাসনাও ছিলো আমার মধ্যে। সেটি পেলামও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের ছবিটি আমি বানাতে পারছি না। এটাই হলো চরম বাস্তবতা।’’

জানা যায়, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য ও নির্মাণ বিষয়ে কিছু নিয়ম তৈরি করা হয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে। যে বোর্ডে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন।

‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবিটি অনুদান পাওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে গেলে বেশ কিছু নতুন শর্ত সামনে আসে অমিতাভ রেজার। যে শর্তগুলো মেনে ছবিটি নির্মাণ করতে গেলে ‘গল্পটি’র প্রতি অবিচার করা হবে বলে মনে করেন অমিতাভ।

একাধিক সূত্র বলছে, অমিতাভের এই ছবিটি না করতে পারা বা অনুদান ফেরত দেওয়ার মূল কারণ হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের বড় অংকের অর্থনৈতিক শর্ত। সিনেমা নির্মাণের আগে তো বটেই, মুক্তির পরেও রেভিনিউ শেয়ার করার নানা শর্ত রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমকে এসব প্রসঙ্গ এড়িয়ে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। সেটা তো থাকবেই। তবে হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের শর্ত বা নিয়মগুলোকে আমি রেসপেক্ট করি। বাস্তবতা হচ্ছে এই, ১০ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়মের মধ্যে থেকে ছবিটি আমি নির্মাণ করতে পারছি না। মনে রাখতে হবে, সরকার আমাকে ৬০ লাখ টাকা দিলেও এরসঙ্গে সমপরিমাণ টাকা আমাকে লগ্নি করতে হবি- যদি ছবিটি প্রপারলি বানাতে চাই। সেই প্রস্তুতিও ছিলো। কিন্তু শেষে এসে যখন জানলাম শর্তগুলো- তখন আসলে নিরুপায় হয়ে গেছি।’

এর আগে হুমায়ূনের একই নামের উপন্যাস থেকে জয়া আহসানের প্রযোজনা ও অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় নির্মিত হয় ‘দেবী’। সে সময়ও শুধু মেহের আফরোজ শাওনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া নিয়ে আপত্তি জানান নুহাশ হুমায়ূন ও শিলা আহমেদ। পরে এ অভিনেত্রী নিজে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করেন। তবে ওই সময় তাদের দাবিকৃত বা পরিশোধ করা রয়্যালিটি সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।


মন্তব্য করুন