দৌড়: এক কথায় বলা যায় ‘মোশাররফ করিমস শো’
দৌড় ; পরিচালক: রায়হান খান; অভিনয় : মোশাররফ করিম, তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, ইরফান সাজ্জাদ, রোবেনা জুঁই, আজাদ আবুল কালাম, শাহেদ আলী ও অনেকে; প্ল্যাটফর্ম: হইচই
‘আল্লাহ, আমি তো পাগল হইয়া যাব আল্লাহ!’ ট্রেলারে মোশাররফ করিমের এমন ডায়লগে যে কেউ নড়েচড়ে বসতে বাধ্য। কী এমন ঘটনা, যার জন্য করিম সাহেব এমন পাগলের মত করছেন; সেটা জানতে চাঁদরাতেই দেখে নিলাম হইচইয়ের নতুন সিরিজ ‘দৌড়’।
রায়হান খানের নির্মাণে ‘দৌড়’ সিরিজে রয়েছে ৯টি পর্ব। ১৭ থেকে ৩২ মিনিট দৈর্ঘ্যের এক একটি পর্বের যা নামকরণ করা হয়েছে সেটা বাংলায় দাঁড়ায়— শুরু, শায়ান কোথায়, ঘড়ি টিকটিক করছে, চারজনের দল, কোন উপায় নেই, বাজির ঘোড়া, চূড়ান্ত দৌড়, জিম্মি ও পেছনে যে আছে!
সাসপেন্স থ্রিলার জনরার কনটেন্টের গল্প নিয়ে বেশি কিছু বলা যায় না। অল্প করে যদি বলি— এখানে তিনটি ভিন্ন পেশার মানুষের গল্প বলা হয়েছে। ব্যবসায়ী রুহুল আমিন, ডিবির এক অফিসার ও অজ্ঞাত যুবকেরা। রুহুল আমিন চরিত্রে এখানে দেখা যায় মোশাররফ করিমকে, যে একজন ব্যবসায়ী। একটা নতুন প্রজেক্টের টেন্ডার নিয়ে যখন তিনি প্রচন্ড ব্যস্ত, তখন পলাশ নামে তার একজন স্টাফ হ্ঠাৎ চলে যায়। ইন্তেখাব দিনার তার কোম্পানির ম্যানেজার আকমল যাকে সবসময় রুহুলের কথার দৌড়ে আর গালির স্রোতে ভেসে থাকতে হয়। প্যারালালি একজন বিশিষ্ট লোক গাড়ি এক্সিডেন্ট করলে ডিবি ইন্সপেক্টর হায়দার চ্যালেঞ্জ করে, এটা নিছক দূর্ঘটনা না, খুন! এর মাঝে রুহুলের গাড়িটা চুরি হয়ে যায়, গাড়িতে রাখা ছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজ। হন্যে হয়ে আইনি-বেআইনি সব রাস্তায় যখন তিনি গাড়ি খুঁজে চলেছেন তখনই জানতে পারেন গাড়ির ব্যাক ডালায় রয়ে গেছে তার একমাত্র ছেলে শায়ান।
ট্রেলারে মোটামুটি এতটুকু গল্পকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যা প্রথম তিন পর্বেই দর্শক দেখতে পাবেন। কিন্তু আসল গল্প তখনো অনেক বাকি। অনেক টার্নস আর টুইস্ট মিলে বাকি ছয় পর্ব হয়েছে সত্যিকারের ‘দৌড়’ খেলা যেন! সাধারণত ‘ক্যাট এন্ড মাউস রান’ বলা এই ধরনের গল্পের কাজ আমরা খুব কম দেখতে পাই। ‘মানি হানি’তে কিছুটা এই দৌড় দেখেছিলাম ‘চোর পুলিশের’ মাঝে। তবে ‘দৌড়’-এ আরেক লেয়ার বেড়ে গিয়ে চেজিংটা হয়েছে অপরাধী-ভিকটিম আর পুলিশের মাঝে।
রায়হান খান টিভিতে অনেক কাজ করেছেন। ‘দৌড়’ তার দ্বিতীয় সিরিজ। হইচইয়ে ‘মহানগর’-এ ওসি হারুন হিসাবে তুমুল জনপ্রিয়তার পর মোশাররফ করিম এবার করলেন বদমেজাজি এক ব্যবসায়ীর চরিত্র। ধমক, গালি, কান্না, হতাশা— কী ছিল না তার চরিত্রে! নাটকে করিম সাহেবকে প্রায় কাছাকাছি রোলে দেখতে দেখতে আগ্রহের কমতি থাকে অনেকের। কিন্তু অনীহা জন্মানো দর্শকের আনন্দের জায়গা হতে পারে সিরিজ ‘দৌড়’।
এক লাইনে ‘দৌড়’কে বলা যায় ‘মোশাররফ করিমস শো’। পুরোটা গল্পে নিজের আধিপত্য ধরে রেখে তিনি যেভাবে অভিনয় করলেন করিম, সত্যি দেখার মত। তার স্ত্রীর চরিত্রে বাস্তবের সহধর্মিণী রোবেনা জুঁই অভিনয় করায় দুজনের বোঝাপড়াটা পর্দায় বেশ ভালো লেগেছে। এ ছাড়া ডিবির ইন্সপেক্টর চরিত্রে তারিক আনাম ও তার বসের মুখোমুখি কথাবার্তা ভালো লেগেছে। সারপ্রাইজিং ক্যারেক্টার যদি বলি, সেটা ইরফান সাজ্জাদ ও ইন্তেখাব দিনার এই দুজন, যারা একটা সময় আপনাকে চমকে দেবে।
সিরিজের পর্ব আরো দুইটা কম হলেও পারতো। মাঝের কিছু পর্বের বেশ কিছু দৃশ্য থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। পারফরমেন্স বিচার করলে রোবেনা জুঁইই ছিলেন সবচেয়ে দূর্বল, অবশ্য তাকে ভারী কোন মোমেন্ট থ্রু করতেও হয়নি।
টেকনিক্যাল দিক থেকে ডাবিং ভালো হয়নি, কিছু জায়গায় লোকেশন সাউন্ড নিতে পারলে বেশ ভালো জমতো। ক্যামেরায় ক্লোজ শট ছিল বেশ কম যে কারলে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন অনেক ক্ষেত্রে আন্দাজ করে নিতে হয়েছে। কিছু ডায়লগ ও মোশাররফ করিমের এক্সপ্রেশনে পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে। এসব বাদ দিলে ঈদের আনন্দে ‘দৌড়’ খুব উপভোগ্য একটা সিরিজ।