Select Page

দ্য স্টোরি অফ সামারা : উচ্চাকাঙ্খী প্রচেষ্টার হতাশাজনক ফলাফল

দ্য স্টোরি অফ সামারা : উচ্চাকাঙ্খী প্রচেষ্টার হতাশাজনক ফলাফল

scene from Story of samaraসামারা নামের এক ভিন গ্রহের দুই বাসিন্দা এসেছে পৃথিবীতে। তাদের অশুভ শক্তির হাত থেকে মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে এক হয় পাঁচ তরুণ। সম্মিলিতভাবে তারা মোকাবেলা করে অশুভের। অনেকটা এমনই কাহিনী দ্য স্টোরি অফ সামারার

কাহিনী পুরোটাই বাকওয়াস। হ্যাঁ, এ ছবির কাহিনী সম্পর্কে এরচেয়ে ভাল বিশেষণ ব্যবহার করা যায় না। ছেলেমানুষি এ ছবির কাহিনীতে কি নেই? প্রেম-ভালোবাসা, ইমোশন, রোমান্স, একশন, থ্রিল, সায়েন্স, হরর – সবই আছে। আর সবকিছু মিলে একটা জগাখিচুড়ি। কিন্তু এই জগাখিচুড়ির মধ্যে সত্যিকারের উপাদেয় কিছু ছিল কিনা সন্দেহ। থাকলেও তা চোখ এড়িয়ে গেছে।

চিত্রনাট্য ও কাহিনীবিন্যাস অসহ্য। সামারা, আরাকান, প্রিন্সেস, পঞ্চপান্ডব, বই, আত্না – আরও কি কি সব বস্তুকে কেন্দ্র করে ছবির কাহিনী। কিন্তু সেসবের ওপর হাইলাইট করা হয়েছে খুবই কম। ছবির প্রথম এক ঘন্টা আর শেষ আধ ঘন্টা দর্শককে যা দেখানো হল, ছবির মূল কাহিনীর সাথে কি সেসবের আদৌ কোন সম্পর্ক ছিল? আর সামারা নামক গ্রহের প্রেক্ষাপটে ছবির মূল যে কাহিনী, সেটাকে এমন অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য ও দুর্বোধ্যভাবে উপস্থাপন করা হল, একজন সাধারণ বাংলাদেশী চলচ্চিত্র দর্শকের পক্ষে তা প্রকৃত অর্থে অনুধাবন মোটেই সম্ভব না।

সংলাপ অতিমাত্রায় হাস্যকর এবং বিরক্তিকর। ছবির প্রথম কিছু অংশ রোমান্টিক দৃশ্যে ভরপুর। আর সেসব দৃশ্যে যাত্রাপালার মত নায়ক নায়িকারা যেসব সংলাপ আউড়াল, তা আধুনিক দর্শকের গায়ে জ্বালা ধরাতে বাধ্য।

গান খারাপ না। কিন্তু মনে রাখার মতও না। গানের দৃশ্যায়নও মন্দ নয় কিন্তু ফিল্মের উপযোগী না। গানগুলো দেখে মনে হয়েছে মোটামুটি ভাল বাজেটে নির্মিত কোন সিঙ্গেল মিউজিক ভিডিও।

ট্রেইলারে দেখে ছবির এনিমেশন ও গ্রাফিক্সের কাজ যতটা খারাপ হবে বলে আশংকা করেছিলাম, ততটা খারাপ ছিল না। বাংলা ছবির মাপকাঠিতে মোটামুটি ভালোই বলা চলে। কিন্তু যে ছবি নিজেকে বিশাল বাজেটের ব্যয়বহুল হিসেবে দাবি করে, সে ছবির গ্রাফিক্স আরও কয়েকগুণ ভাল হওয়ার কথা।

পরিচালনা হতাশাজনক। অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয় ছেড়েই দিলাম, একজন পরিচালক যদি সত্যিই ভাল হন তাহলে তার ছবিতে অভিনেতা অভিনেত্রীরা এতটা দায়সারা অভিনয় কখনোই করতে পারে না। তাছাড়া এই ছবির বাজেট হিসেবে একটা বিশাল অংকের কথা কানে এসেছিল। তো সেই বাজেটের অর্ধেক দিয়েও যদি এই ছবি বানানো হয়ে থাকে, তারপরও এই ছবির ফাইনাল প্রোডাক্ট অনেক ভাল হওয়ার কথা ছিল। আর যাইহোক, দর্শক ছবিটিকে পনের বিশ বছর আগের আলিফ লায়লা বা শাকালাকা বুমবুমের সাথে তুলনা করতে পারত না।

অভিনয় চূড়ান্ত রকমের হতাশাজনক। এক ঝাঁক আনাড়ি অভিনেতা অভিনেত্রী মিলে ছবিটাকে আর ছবি রাখেননি। সার্কাসে পরিণত করেছিলেন। সানজু সনজের হিরোসুলভ চেহারা আছে, শরীর আছে, চাহনি আছে। কিন্তু যেটা নেই তা হল অভিনয় দক্ষতা। পিয়ার অভিনয়ে কোন বৈচিত্র্য নেই। তিনি নিজের নামে একটা ট্রেডমার্ক তৈরী করে ফেলেছেন আর তা হল, চরিত্র যেমনই হোক, কাহিনীর ডিমান্ড যাইহোক, তিনি তার স্বভাবসুলভ ওভারস্মার্ট গিমিক বজায় রাখবেন। তবে এ ছবির সিনিয়র অভিনেতাদের অভিনয় ভাল লেগেছে। এটিএম শামসুজ্জামান, চিত্রলেখা গুহ, কাবিলা আর শিমুল খান – এনারা দারুণ কিছু উপহার না দিলেও অন্তত নিজেদের নামের প্রতি কিছুটা হলেও সুবিচার করতে পেরেছেন। এটিএম শামসুজ্জামানের সার্বিক অভিনয়, এটিএম শামসুজ্জামানের সাথে চিত্রলেখা গুহর কেমিস্ট্রি, কাবিলার কমেডি, শিমুল খানের অতি সাবলীল অভিনয় – এগুলোই ছবির কিছু ইতিবাচক দিক। কিন্তু ডনের এ ছবিতে কি কাজ বুঝলাম না। তার ক্যামিও এপেয়ারেন্স, কাহিনী অনুসারে চরিত্রটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তাকে দেখে আলাদিনের পেট মোটা দৈত্য (নো অফেন্স) বৈ আর কিছু মনে হয়নি।

মোটের উপর দ্য স্টোরি অফ সামারা একটা বিলো এভারেজ ছবি। পরিচালক, প্রযোজকরা যে নতুন ও ভিন্ন ধরণের কিছু একটা করতে চেয়েছেন, সে চেষ্টাটা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ জন্যে তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তাদের এটাও বোঝা উচিৎ যে শুধু উচ্চাকাঙ্খী হলেই জীবনে সফল হওয়া যায় না, সে উচ্চাকাঙক্ষাকে বাস্তবে রূপদানের মত দক্ষতাও থাকা দরকার। আপনার যদি ডানা না থাকে, দয়া করে ওড়ার বৃথা চেষ্টা করবেন না। কারণ এতে লাভের মধ্যে লাভ কিছুই হবে না, শুধু লোকে হাসবে।

পরিশেষে বলব, এ ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে একটা নতুন ঘরানার উদ্ভব ঘটল। আশা করি অনাগত ভবিষ্যতে মেধাবী নির্মাতারা এই ঘরানাটিকে তাদের সুন্দর ও মানসম্মত কাজ দিয়ে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হবেন।


Leave a reply