Select Page

নকলের ধকল ২০১৮

নকলের ধকল ২০১৮

 

২০১৮ সালে মোট মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ১০-১২% ছিল নকল/রিমেক কিংবা, যা বিগত বছর গুলোর তুলনায় খুবই কম। আসুন এক নজর দেখে নিই ২০১৮ এ কোন কোন ছবি অফিসিয়াল রিমেক, প্রবল অনুপ্রেরণা কিংবা নকলের দোষে দুষ্ট..

১. নূর জাহান
সদ্য ভার্সিটিতে ওঠা দুই তরুণ-তরুণীর মধ্যকার প্রেমের গল্প নিয়ে পরিচালক অভিমন্যু মুখার্জী নির্মাণ করেন যৌথ প্রযোজিত রোম্যান্টিক ট্রাজেডি ছবি “নূর জাহান”। ছবিতে নূর ও জাহান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অদ্রিত রয় ও পুজা চেরী। এছবিটি নাগরাজ পোপাটরাও মাঞ্জুলে পরিচালিত বক্স অফিসে হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়ে দেওয়া মারাঠি ছবি “সাইরাত” এর অফিসিয়াল রিমেক। ২০১৬ এ মুক্তি পাওয়া মাত্র পাঁচ কোটি রূপি বাজেটের মারাঠি এই ছবিটি প্রায় ১১০ কোটি রূপি আয় করে, বিপরীতে আমাদের দেশী ছবিটি সে অনুপাতে ততটা আলোচিত হয়নি।

২. কালের পুতুল
এক রহস্যময় ব্যক্তির আমন্ত্রণে দশজন ভিন্ন ঘরানার ব্যক্তি এক‌টি নির্জন পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত এক বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে অদ্ভুত কায়দা তাদের অতীত পাপ গুলো মনে করিয়ে দেওয়া হয় এবং এর জন্য প্রত্যেকের যথাপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়। উপস্থিত মেহমানরা তেমন একটা গুরুত্ব সহকারে না নিলেও পরবর্তীতে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য খুনিকে ধরতে উঠেপড়ে লাগে। এমনই রহস্য ও উত্তেজনায় ঠাসা এক গল্প নিয়ে পরিচালক আকা রেজা গালিব নির্মাণ করেন মিস্ট্রি থ্রিলার ঘরানার ছবি “কালের পুতুল”। এছবিটি বিখ্যাত লেখক অগাথা ক্রিস্টির লেখা জগৎখ্যাত উপন্যাস “এন্ড দ্যান দেয়ার ওয়্যার নন” অবলম্বনে তৈরি, তবে এছবির কিছু বিষয় দেখলে মনে হয় ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান ছবি “টেন লিটল ইন্ডিয়ান্স” থেকে অনুপ্রাণিত। দুইটি ছবিই একই উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি।

৩. পোড়ামন ২
গলায় দড়ি দিলে কিংবা আত্মহত্যা করলে মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়া হয় না – এমন স্পর্শকাতর এক‌টি বিষয় নিয়ে পরিচালক রায়হান রাফি নির্মাণ করেন রোম্যান্টিক ট্রাজেডি ছবি “পোড়ামন ২”, যেটি ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যবসাসফল ছবি “পোড়ামন” এর সিক্যুয়েল। “পোড়ামন ২” এ মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, পুজা চেরী, বাপ্পারাজ, নাদের চৌধুরী, সাঈদ বাবু, ফজলুর রহমান বাবু সহ আরো অনেকে। এছবিটি সরাসরি কোনো ছবির নকল না হলেও, দ্বিতৗয়ার্ধের অনেকখানি আমির সুলতান পরিচালিত ২০০৭ সালে মুক্তিপাওয়া তামিল ছবি “পারুভেথারান” এর সাথে মিলে যায়। যেখানে কার্থি শিবকুমার সিয়াম আহমেদের চরিত্রে এবং পিয়া মনি অভিনয় করেছেন পুজা চেরীর চরিত্রে।

৪. প্রেমিক ছেলে
একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে তাদের আবেগ নিয়ে খেলাকে কেন্দ্র করে পরিচালক এ.আর মুকুল নেত্রবাদী নির্মাণ করেন রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি “প্রেমিক ছেলে”। নবাগত অভিনেতা আদনান আদির বিপরীতে এছবিতে আটজন নায়িকাকে অভিনয় করতে দেখা যায়, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যা বিরল ঘটনা! একদম হুবহু নকল না হলেও মনিশ শর্মা পরিচালিত ২০১১ সালের হিন্দি ছবি “লেডিস ভার্সেস রিকি বাহল” এর সাথে এছবির বেশ কিছু মিল রয়েছে, যেখানে আদনান আদির চরিত্র রূপদান করেছেন রনভীর সিং।

৫. প্রেমের কেন ফাঁসি
বিশেষ এক কারণে দশ বৎসর বয়সী এক ছেলের সাথে দশ মাস বয়সী এক মেয়েকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে রাজদরবার থেকে তাদের বনবাসে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়… পরবর্তীতে যখন মেয়েটি বড় হয় সে তাদের অতীত অস্বীকার করে এবং অন্য আরেক ছেলের প্রতি মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে।
কি হলো? গল্পটি কি চেনা চেনা লাগছে? জি, এছবিটি বরেণ্য পরিচালক সালাউদ্দিন পরিচালিত ষাটের দশকের তুমুল সাড়াজাগানো ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবি “রূপবান” এর পুরুষ সংস্করণ। যেখানে রূপবানে থাকা সুজাতার চরিত্র এখানে রূপদান করেছেন সাইফ খান। আবু সুফিয়ান পরিচালিত এছবিটি নিম্নমানের নির্মাণশৈলীর কারণে সেসময় ব্যাপক সমালোচিত হয়।

৬. ক্যাপ্টেন খান
ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে শহরে এসে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া এবং প্রকৃত প্রতারক কে খুজেঁ বের করার গল্প নিয়ে পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন নির্মাণ করেন ক্রাইম ঘরানার ছবি “ক্যাপ্টেন খান”; যেখানে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শবনম বুবলী, সম্রাট, মিশা সওদাগর সহ আরো অনেকে। এছবিটি এন.লিঙ্গুস্বামৗ পরিচালিত তামিল ছবি “আঞ্জান” (২০১৪) হুবহু নকল। যেখানে শাকিব খানের চরিত্রে সুরিয়া শিবকুমার, বুবলীর চরিত্রে সামান্থা আক্কিনেনি, মিশা সওদাগরের চরিত্রে মনোজ বাজপায়ি এবং সম্রাটের চরিত্রে বিদ্যুৎ জামওয়াল অভিনয় করেছেন। “ক্যাপ্টেন খান” ঈদ উল আযহা তে মুক্তি পেয়ে ব্যবসাসফল হয়।

৭. স্বপ্নের ঘর
নতুন দম্পতি তাদের নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার পর থেকে মানুষরূপী পিশাচের নজরবন্দী হন। একসময় পিশাচ তার সন্তানকে মানুষরূপে পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ করতে চান এবং সেই অনুসারে ঐ দম্পতিকে নিজের বশে আনার চেষ্টা করেন। এরকমই শিরহণ জাগানো এক গল্প নিয়ে পরিচালক তানিম রহমান অংশু নির্মাণ করেন সাসপেন্স হরর ঘরানার ছবি “স্বপ্নের ঘর”; যেখানে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলন, জাকিয়া বারী মম, শিমুল খান, কাজী নওশাবা আহমেদ সভ আরো অনেকে। এছবিটি ইরা লেভিনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হলেও, কিছু কিছু সিকোয়েন্স রোমান পোলানস্কি পরিচালিত আমেরিকান ছবি “রোজমেরি’স বেবী” (১৯৬৮) থেকে অনুপ্রাণিত। “স্বপ্নের ঘর” মুক্তির পর সমালোচকদের কাছ থেকে ভালো প্রশংসা অর্জন করেছিল।

২০১৭ সালে যেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির এক তৃতীয়াংশ নকল পাওয়া গিয়েছিল, সে তুলনায় এবছর কম নকল ছবি আমরা পেয়েছি, যা খুবই ভালো দিক। সামনের বছর এই ধারা অব্যাহত থাকবে, এই প্রত্যাশা কামনা করি।


Leave a reply