নবাবগঞ্জের শাহেনশাহ এবং রনী বাবুর্চির নয়া রেসিপি!
শাহেনশাহ (২০২০)
ধরণঃ রোম্যান্টিক এ্যাকশন ড্রামা
গল্পঃ অংশুমান-প্রমিত
পরিচালনাঃ শামীম আহমেদ রনী
প্রযোজনাঃ শাপলা মিডিয়া
অভিনয়ঃ শাকিব খান (শাহেনশাহ/ডিজে), নুসরাত ফারিয়া (লায়লা), রোদেলা জান্নাত (প্রিয়া), মিশা সওদাগর (দাউদ/বিগবস), আহমেদ শরীফ (বড় নবাব), নানা শাহ (ছোট নবাব), সাদেক বাচ্চু (খাজা খাঁ), অমিত হাসান (বিগ বসের ভাই), ডি.জে সোহেল (ডিজে), বড়দা মিঠু (এমপি), সুব্রত, শিবা শানু, কমল পাটেকার, ববি, ডন, রেবেকা রউফ, মারুফ খান, লিটন হাশমি, আমিন সরকার, সাংকো পাঞ্জা, উজ্জ্বল (বিশেষ চরিত্র) প্রমুখ।
শুভমুক্তিঃ ৬ মার্চ, ২০২০
নামকরণঃ এ ছবির মূল চরিত্র, যাকে কেন্দ্র করে পুরো ১৫২ মিনিটের গল্প বলা হয়েছে, সেই চরিত্রের নামানুসারে ছবির নাম “শাহেনশাহ” রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতে এটি একটি সাধারণ বিষয়। নামকরণটি আমার কাছে ঠিকঠাক মনে হয়েছে।
কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপঃ ছবির গল্প লিখেছেন ভারতের দুই গল্পকার অংশুমান প্রত্যুষ এবং প্রমিত সিং। গল্প অনুসারে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পরিচালক শামীম আহমেদ রনী, সেইসাথে সংলাপ রচনা করেছেন দেলোয়ার হোসেন দিল। গল্প খুবই সাধারণ, এধরনের মাসালা এন্টারটেইনার গল্প আমাদের দেশের ছবিতে অহরহ দেখা যায়। ছবির ট্রেইলারেও গল্প অনেকটা খোলাসা করে দেওয়া হয়েছে, তাই সে ব্যাপারে আর আলোচনা না করি।
কথা বলা যাক এছবির চিত্রনাট্য নিয়ে, যেটি প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্দিষ্ট ছবির নকল কিংবা রিমেক হয়তো নয়। এটা বলার কারণ হলো পূর্বে শামীম আহমেদ রনীর চিত্রনাট্য সাজানো সব চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধেই নকলের অভিযোগ উঠেছে। এছবি মুক্তির পর এখন পর্যন্ত সেরকম বড় আকারে তেমন সমালোচনা হয়নি। তবে এ ছবি কোনো নির্দিষ্ট ছবির নকল নয়, এটা ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলারও সুযোগ নেই। কারণ নকলকাণ্ড নিয়ে অতীতে বিতর্কিত এবং সমালোচিত হওয়ার পর এইবার তিনি এমন একখানা চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন, যেটি অগণিত উত্তর ভারত কিংবা দক্ষিণ ভারতীয় ছবির সাথে মিলে যায়! কিছু পরিচিত, আবার কিছু অপরিচিত; যেমনঃ
★ছবিতে থাকা শাকিব খানের এন্ট্রি সিন একদম হুবহু মিলে যায় তেলেগু ছবি “ব্রুস লি দ্য ফাইটার” (২০১৫) এ থাকা চিরঞ্জীবীর এন্ট্রির সাথে।
★এন্ট্রির পরে দুই বন্দুক হাতে নিয়ে এক সিরিয়ালে আট-দশজন গুণ্ডাকে মেরে ফেলার ইউনিক সিকোয়েন্সটি মিলে যায় তেলেগু ছবি “আরবিন্দা সামেথা” (২০১৮) এর ওপেনিং ফাইট সিনের সাথে। ওখানে ছিল রামদা, আমাদের এখানে বন্দুক।
★ নায়িকা রোদেলা জান্নাতের এন্ট্রি সিন টি মিলে যায় তেলেগু ছবি “রামাইয়া ভাস্তাভাইয়া” (২০১৫) তে থাকা সামান্থা আক্কিনেনির এন্ট্রি সিনের সাথে। ওখানে ছিক ব্যাঙ, আমাদের এখানে পায়রা।
★ লাইটার দিয়ে সিগারেটে আগুন ধরানোর ফাইট সিনটি একদম হুবহু মিলে যায় তেলেগু ছবি “শিভাম” (২০১৫) এর একটি ফাইট সিনের সাথে।
★ অপর নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার এন্ট্রি সিনটি কস্টিউম, সেট ডিজাইন সহ একদম হুবহু মিলে যায় হিন্দি ছবি “রাম-লীলা” (২০১৩) এর একটি সিকোয়েন্সের সাথে।
★ বাড়ির নিচতলায় দাড়িয়ে থাকা শাকিব খানের দোতলায় দাড়িয়ে থাকা নুসরাত ফারিয়াকে প্রেম নিবেদন করার সিকোয়েন্সটি কস্টিউম সহ একদম হুবহু মিলে যায় হিন্দি ছবি “রাম-লীলা” (২০১৩) এর একটি সিকোয়েন্সের সাথে।
★ বিগ বস এবং তার আন্ডারে থাকা দুই নবাবের নবাবগঞ্জে আতংক বিরাজমান রাখার গল্পটুকু মিলে যায় তেলেগু ছবি “ডন ছিনু” (২০১০) এর গল্পের একটি অংশের সাথে। অনুপ্রাণিত বলা যায়। উল্লেখ্য, “ডন ছিনু” অলরেডি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় একবার রিমেক হয়ে গেছে।
★ দুই নবাবকে একত্র করে ফেলার সিকোয়েন্সগুলো মিলে যায় তেলেগু ছবি “ব্রিন্দাভানাম” (২০১০) এর সাথে। এটাও অনেকটা অনুপ্রাণিত বলা যায়।
★ ছবির দ্বিতৗয়ার্ধে শাহেনশাহর চরিত্রে যে টুইস্ট টি দেখানো হয়েছে, সেই দেখানোর ধরণটি মিলে যায় তেলেগু ছবি “পকিরি” (২০০৬) এর শেষার্ধে থাকা টুইস্ট টির সাথে।
এর বাইরেও আরো কিছু সিকোয়েন্স রয়েছে যেগুলো তিনি ধার করে কিংবা দেখেদেখে তার তৈরি করা চিত্রনাট্যে বসিয়েছেন। এভাবে বসানো যে খুবই ন্যাক্কারজনক কাজ, বিষয়টি সেরকম নয়। অন্তত একদম সিন তুলে এনে বসিয়ে দেওয়ার থেকে এগুলো করা মন্দের ভালো। তবে এক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হলো ভালো উপস্থাপনা। সেটা কীরকম হলো, তা অনেকখানি এই লেখা পুরোটা পড়লে বুঝতে পারবেন।
শক্তিশালী পাঞ্চলাইন যেকোনো বাণিজ্যিক ছবির শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছবিতে সেরকম কিছু পাঞ্চলাইন খুজেঁ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি স্থুল এবং অশ্লীল কিছু ইঙ্গিত করে এমন পাঞ্চলাইনও এছবিতে খুজেঁ পাওয়া যায়। চিত্রনাট্যটি কিছুটা কোলকাতা ঘরানার বাংলা ভাষায় সাজানো, যেখানে আপনি “কেলাবো, উদম কেলানি দিবো” এর মতো সংলাপ খুজেঁ পাবেন। আবার “রিশতেমে হাম তুমহারে..” এর মতো কিছু হিন্দি ভাষার সংলাপও শোনা যায়, হয়তো আমাদের দেশের দ্বিতীয় মাতৃভাষা মনে করে এগুলো সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সাবটাইটেল না দেওয়াটা ছিল এক্ষেত্রে অনেক বড় একটি ভুল!
এ অংশ পাবে ২০% মার্ক।
পরিচালনাঃ পরিচালক শামীম আহমেদ রনীর এটি পঞ্চম পরিচালনা। এর মধ্যে চারটিতেই তিনি শাকিব খান কে মূলচরিত্রের অভিনেতা হিসেবে পেয়েছেন। শামীম আহমেদ রনী তার প্রথম নির্মাণ থেকেই নকল গল্প ইস্যুর জন্য সমালোচিত। তবে তার নকল করার পদ্ধতিটি ভিন্ন। অতীতে আমাদের দেশে যত গণ্যমান্য পরিচালকেরা নকল করেছেন তারা যেকোনো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন; হয় তারা কোনো একটি বিদেশী ভাষার ছবি হুবহু দেখে তৈরি করেছেন, অথবা বিদেশী ভাষার ছবি থেকে গল্পের মূল বিষয়বস্তু অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে নিজের মতো করে চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। মাঝে কয়েক বছর আগে দাপটের সাথে কাজ করে যাওয়া কিছু পরিচালক ভালোভাবে নকল করতে না পারলে সরাসরি মূল ছবি থেকেই ক্লিপ তুলে এনে নিজেদের ছবিতে লাগিয়ে দিতো!
শামীম আহমেদ রনী অবশ্য এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম। তিনি উপরের কোনো পদ্ধতি অনুসরণ না করে ১০-১৫ টি ছবি থেকে সিকোয়েন্স টুকলিফাই করেন। এভাবে ১০ টি ছবি থেকে যদি ১০-১২ মিনিটের সিকোয়েন্স তুলে আনা হয় তাহলেই দুই ঘণ্টার ছবি হয়ে যায়। সাথে সংযুক্ত করা হয় চার/পাঁচটি গান, ব্যস, ছবি রেডি!
পরিচালক শামীম আহমেদ রনী এই কাজটি তার পূর্বের দুইটি ছবিতে করেছিলেন, এখন আবার এই “শাহেনশাহ” তেও করেছেন। তাই তার পরিচালনা আমার কাছে বিশেষকিছু লাগেনি, যেমনটা তার “বসগিরি” কিংবা “রংবাজ” এর সময় লেগেছিল, তেমনটাই লেগেছে।
অভিনয়ঃ “শাহেনশাহ” ছবিটি যে ঘরানার, এই ঘরানার ছবিতে শাকিব খান ভীষণ পারদর্শী। কারণ তার ক্যারিয়ারে একশোর অধিক ছবি এই ফরমেটেই নির্মিত হয়েছে, এধরনের রোম্যান্স-এ্যাকশন-হিরোয়িজম যুক্ত চলচ্চিত্র করতে করতে তিনি মুরুব্বি পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন। তাই তার কাছ থেকে যে ভালো পারফরমেন্স পাওয়া যাবে, সেটা প্রত্যাশিত ছিল। হয়েছেও তাই। তবে এক্ষেত্রে তার সবথেকে বড় সমস্যা হলো দুইটি; ১। তার থলথলে শরীর, ২। লুকের সামঞ্জস্যতা ধরে রাখতে না পারা। যার কারণে এধরনের চরিত্রে তাকে এখন আর উপযুক্ত মনে হয় না। তার ছবির দূর্বল ফাইট সিন নিয়ে দর্শকদের যে অভিযোগ থাকে, সেটারও মূল কারণ এই প্রথম দুটি।
এছবির মূল নারী চরিত্রে দুজন লাস্যময়ী গ্ল্যামারকন্যাকে খুজেঁ পাওয়া গেছে; নুসরাত ফারিয়া এবং রোদেলা জান্নাত। দুজনকেই খুব ভালোভাবে পুরো পর্দাজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। দেখে দেখে বানানো হলেও তাদের দুজনেরই পর্দায় এন্ট্রি সিকোয়েন্সটি খুবই আকর্ষণীয় ছিল। দুজনের অভিনয়ে এক ধরনের ন্যাকামো দেখা গেছে, যেটা এ ধরনের চরিত্রে দরকার, দর্শক বেশ উপভোগ করে।
রোদেলা জান্নাতের এটাই প্রথম কাজ, সে তুলনায় নুসরাত ফারিয়া অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তাদের দুজনেরই একটি সাধারণ সমস্যা হলো দূর্বল ডায়লগ ডেলিভারি বা ডাবিং। মানুষের কথোপকথনে এক ধরনের আবেগ মিশে থাকে, যে আবেগ অনুভুত হলে বোঝা যায় কোন কথা কি অর্থে বোঝানো হয়েছে। যেমন, কেউ যদি কোনো বাক্য জোর দিয়ে বলে তবে বোঝা যায় সে কিছু একটা সত্য প্রমাণ করতে চাইছে/ভয়ানক কিছু বোঝাতে চাইছে/অবাক করার মতো কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। আবার, যদি কোনো বাক্য আলতোভাবে বলা হয়, এটার মানে হলো সে সংকোচবোধ করছে/বলতে ভয় পাচ্ছে/যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত না। এভাবে কথা মাধ্যমেই মানুষের আলাদারকমের এক্সপ্রেশন বের হয়। এছবির দুই নায়িকার মধ্যে এই বিষয়টার যথেষ্ট অভাব আছে। পর্দায় তাদের কথা শুনলে মনে হয় যেনো তারা দেখে দেখে ডায়লগ দিচ্ছে, যেমনটা আমরা ছোটকালে ক্লাসে বই রিডিং পড়তাম!
ছবিতে একঝাঁক খল অভিনেতাদের নেওয়া হয়েছে; বড় নামের মধ্যে মিশা সওদাগর, আহমেদ শরীফ ও সাদেক বাচ্চু কে খুজেঁ পাওয়া যায়। মিশা সওদাগর তার গতানুগতিক অভিনয়ের তুলনায় এছবিতে কিছুটা আন্ডারটোন ছিলেন, এটা বেশ ভালো দিক। দ্বিতৗয়ার্ধে তার পর্দায় এন্ট্রি হয়। তবে তার কথায় কথায় উর্দু শায়েরী বলার পেছনে তেমন কোনো ব্যাখ্যা খুজেঁ পেলাম না। এটা অবশ্য তার দোষ না। আহমেদ শরীফ কে লম্বা গ্যাপের পর বড়পর্দায় দেখতে পেলাম। বয়সের ভারে তাকে আর আগের মতো বলিষ্ঠ রূপে বড়পর্দায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার চরিত্রটি মানানসই ছিল। সাদেক বাচ্চু কে তার গতানুগতিক চরিত্রগুলোর তুলনায় একটু ভিন্নরূপে পাওয়া গেছে। তবে তার উচ্চকিত অভিনয়টা যদি আরেকটু সীমিত করা যেতো তবে হয়তো ভালো হতো।
এছাড়া নানা শাহ কে ছোট নবাব এর চরিত্রে পাওয়া গেছে, মোটামুটি কাজ উপহার দিয়েছেন। রেবেকা, সুব্রত, শিবা শানু, কমল পাটেকার, সাংকো পাঞ্জা, ববি, মারুফ খান দের অন্যান্য গতানুগতিক ছবিতে যেভাবে পাওয়া যায়, এছবিতেও সেরকমই ছিলেন। ডি.জে সোহেল এছবিতে একটু আলাদাভাবে গুরুত্ব পেয়েছেন। তার অভিনয় নিয়ে দর্শকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছি, কারো ভালো লাগে আবার কেউকেউ ভুলভাল ইংরেজী শুনে হাসতে থাকে।
ছবিতে ছোটখাটো অনেকগুলো চরিত্র আছে। কিছু কিছু চরিত্র প্রয়োজনীয় আবার এমন কিছু চরিত্র আছে যেগুলো অপ্রয়োজনীয়। তেমন একটি চরিত্র হলো অমিত হাসানের। এছবিতে এই চরিত্রটি না থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা হতো না। ইদানিংকালে উনি কেন এরকম গুরুত্বহীন চরিত্র নিচ্ছেন, উনিই ভালো জানেন। মেগাস্টার উজ্জ্বল কে একটি বিশেষ চরিত্রে এছবিতে পাওয়া গেছে। বয়সের ভারে তিনিও বেশ দূর্বল হয়ে গেছেন, তবুও তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে সিনেমাহলে করতালি বেজেছে।
এ অংশ পাবে ৫০% মার্ক।
কারিগরিঃ এই ডিপার্টমেন্টের সবথেকে জঘন্য কাজ হয়েছে তার, যিনি মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন! দুই মুখ্য নারী চরিত্র বাদে বাকি কারো সাজসজ্জায় তিনি রিয়েলিস্টিক ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। হয়তো তিনি চেয়েছিলেন সবার গড়নে একটা রাজকীয় ভাব আনতে। সেটা তো আসেইনি, উল্টো আলগা চুল, আলগা গোঁফ, আলগা দাড়ি তে একেকজনকে বিচ্ছিরি দেখাচ্ছিল। শাকিব খানকে কি লুক দিতে হবে সেটাও তারা ঠিকঠাকভাবে মেইনটেইন করতে পারেননি। চরিত্রানুসারে এছবিতে তার লুক থাকার কথা দুটি, বড়জোর তিনটি। কিন্তু এখানে তাকে প্রায় পাঁচটি ভিন্নভিন্ন লুকে খুজেঁ পাওয়া গেছে! সাদেক বাচ্চুর মুখে যে গোঁফ টি লাগানো হয়েছে, সেটির পজিশন পরিবর্তন হচ্ছিল, ভালোভাবে খেয়াল করলে এগুলো চোখে স্পষ্ট ধরা পড়ে। এমন হাস্যকর ভুলত্রুটি কখনোই কাম্য নয়।
তবে কারিগরি দিকে যে কোনো ভালো দিক নেই ঠিক তা নয়। সিনেমাটোগ্রাফির কাজ বেশ ভালো হয়েছে। সাইফুল ইসলাম শাহীন চওড়া ফ্রেমে পুরো ছবিটি শ্যুট করেছেন। তাই পর্দায় যতই খারাপ কিছু থাকুক দেখতে বেশ ভালোই লাগে। কালার গ্রেডিং এর প্রশংসাও আলাদাভাবে করতে হয়, পুরো ছবিটিকে কালারফুল দেখানো হয়েছে, যা দেখতে খুবই ভালো লেগেছে। শাকিব খানের এন্ট্রি মিউজিক টি বেশ ভালো ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ মোটামুটি ভালো হয়েছে।
বিপরীতে সম্পাদনার কাজ ছিল খুবই দূর্বল। তৌহিদ হোসেন চৌধুরী একের পর এক দূর্বল সম্পাদনার কাজ করে যাচ্ছেন, তার আরো দক্ষতা বাড়ানো অতীব জরুরী। ভিএফএক্স এও বেশ ভালো দূর্বলতা নজরে পড়বে। ফাইট ডিরেকশন দিয়েছেন ভারতের রাজেশ কান্নান ও আমাদের ডি এইচ চুন্নু। শাকিব খানের রিসেন্ট ছবিগুলোতে ফাইট সিনগুলি খুব দূর্বল কোরিওগ্রাফির সাথে করা হয় এবং এই ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
এ অংশ পাবে ২০% মার্ক।
বিনোদনঃ “শাহেনশাহ” তে লজিক কে একটু দুরে ঠেলে এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টর কে বেশি গুরুত্ব রাখা হয়েছে। তাই এছবিতে অনেক কিছুই খুজেঁ পাওয়া যাবে, যেগুলো অযৌক্তিক কিন্তু উপভোগ্য। যেমন, এছবিতে এমন একজন এমপি কে খুজেঁ পাওয়া যাবে যার কোনো ম্যানপাওয়ার নেই। নায়ক নবাবী বংশের দুই বাড়ির দুই মেয়ের সাথে প্রেম করবে এবং তাদের পিতামাতাকে আনন্দের সহিত সেগুলো মেনে নিতে দেখা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো আপনি তখনই উপভোগ করতে পারবেন যখন আপনার বুদ্ধিতে ভরপুর মস্তিষ্ক টি বাড়ি তে রেখে তারপর সিনেমাহলে যেতে পারবেন। এছাড়া মাস অডিয়েন্সের কাছে সুপারস্টার শাকিব খানকে পর্দায় দেখতে পারা মানেই তো অর্ধেক পয়সা উসুল! আর তার হিরোয়িজম, সোয়্যাগ দেখতে পারলে তো কথাই নেই!
ছবিতে মোট চারটি গান রয়েছে। সবগুলো গানই অত্যন্ত সুন্দর। নব্বই দশকের জনপ্রিয় গান “রসিক আমার” গানটিকে এছবিতে রিক্রিয়েট করা হয়েছে। স্যাভি ও কণার গাওয়া গানটি শুনতে ও দেখতে বেশ ভালো, তবে ছবিতে গানটিকে জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি গানগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য এই সমস্যা নেই। সবথেকে সুন্দর লেগেছে ইমরানের সুর দেওয়া এবং ইমরান-আনিশা র গাওয়া “তুই আমি চল” গানটি। গানগুলোর ভিজ্যুয়ালস দারুণ, ভারতের বাবা যাদব এক্ষেত্রে বিশেষ ক্রেডিট ডিজার্ভ করে। সবগুলো গানই উপভোগ করার মতো।
এ অংশ পাবে ৭০% মার্ক।
ব্যক্তিগতঃ “শাহেনশাহ” ছবিটি মোট পাঁচবার তারিখ পরিবর্তন করে এরপর সিনেমাহলে আলোর মুখ দেখলো। এছবিটি যে জনরার সে ধরনের ছবিগুলো আমাদের দেশে বেশ ভালো ব্যবসা করে, তবে পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পূর্বের কাজ সম্পর্কে ধারণা থাকায় পার্সোনালি তেমন বিশেষ কিছু প্রত্যাশা ছিল না।
যেরকমটি প্রত্যাশা করেছিলাম সেরকম ছবি দেখতে পাওয়ায় এছবি আমার কাছে তেমন বিশেষ কিছু মনে হয়নি। আমাদের দেশের প্রযোজকরা এখনো সম্ভবত দর্শকদের বোকাসোকা ভেবে ছবি নির্মাণ করে। যার কারণে পরিচালককে এরকম সাউথের ছবি দেখে দেখে তৈরি করার সুযোগ দেয়। ভুলে গেলে চলবে না, এখন সবার ঘরে ঘরে ইন্টারনেট। অনেক বছর তো হয়ে গেলো, এগুলো করে আর কতদিন?
সব মিলিয়ে বলবো “শাহেনশাহ” সেরকমই ছবি, যেরকমটা আমরা “বসগিরি” তে দেখতে পেয়েছি, যেরকমটা আমরা “রংবাজ” এ দেখতে পেয়েছি।
রেটিংঃ ৪/১০
ছবিটি কেন দেখবেনঃ শাকিব ফ্যানদের মনোরঞ্জনের জন্য এটা একটা আদর্শ ছবি। “বীর” মুক্তির পর অনেক অন্ধভক্তের মুখে শুনেছি তারা ছবিটি উপভোগ করতে পারেননি, এছবি তাদের তেমন লাগবে না। আর নিরপেক্ষ দর্শকেরা যদি মস্তিষ্ককে বাড়িতে তালাবন্দি রেখে আড়াই ঘণ্টা শুধু উপভোগ করবেন, এই উদ্দেশ্য নিয়ে সিনেমাহলে যেতে পারেন, তবে অবশ্যই যান, ভালো লাগবে।