নামে শীতলতা নির্মাণে নাটকীয়
যদি একদিন (the sacrifice)
শ্রেষ্ঠাংশে – তাহসান খান, শ্রাবন্তী, রাইসা, তাসকিন রহমান, সাবেরী আলম, খায়রুল বাশার মাসুম, মিলি বাশার, আনন্দ খালেদ প্রমুখ
উল্লেখযোগ্য গান – লক্ষীসোনা, আমি পারব না তোমার হতে
মুক্তি – ৮ মার্চ ২০১৯
রেটিং – ৭.৭৫ / ১০
ফ্যামিলি নিয়ে দেখার মতো ছবি কই?
অহরহ এ প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয়। ফ্যামিলি নিয়ে দর্শক সিনেমাহলে যেতে চায় কিন্তু সে ধরনের ছবি পায় না। পারিবারিক বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ কমেও গেছে ঢালিউডে। এই পরিস্থিতির ভেতরেও দেখার মতো সুন্দর পারিবারিক বাণিজ্যিক ছবি ‘যদি একদিন।’
ছবির নাম ‘যদি একদিন’, ট্যাগলাইন ‘the sacrifice’. ট্যাগলাইন দেখে অনেকে ভাবতে পারে নামের সাথে এর কি সম্পর্ক। কিন্তু ট্যাগলাইন দেয়ার নব্বই দশকীয় প্রচলন যদি দেখা যায় ছবির নামের সাথে আক্ষরিক না করে ভাবমূলক ট্যাগলাইন ব্যবহার করা হত। কিন্তু দর্শকের একটা অংশ সাদা চোখে আক্ষরিককে প্রাধান্য দেয় অথচ গল্পের সাথে সম্পর্ক রেখে একটা ছায়া জাতীয় আবহ রেখে ট্যাগলাইন দিলে দেখতে ভালো লাগে। সেদিক থেকে সিলেকশন বেটার।
ছবি মুক্তির আগে প্রেডিকশন অনেক রকমের চলে দর্শকমহলে। কিন্তু অনেক সময় সিনেমাহল আপনাকে প্রেডিকশনের বাইরে নিয়ে যাবে। এজন্য ছবি দেখা জরুরি। ‘যদি একদিন’ ছবির ট্রেলার দেখে যারা গল্প আঁচ করা বা পুরো ছবি দেখে ফেলেছে বলে কথা বলেছে তারাও সিনেমাহলে আসলে ট্রেলারের থেকে ভিন্ন গল্প পাবে। রাইসা ও শ্রাবন্তীকে ঘিরে যাদের প্রেডিকশন ছিল অভিজ্ঞতা পাল্টে যাবে। নামের থেকে ছবিটি শীতল একটা আবহ রেখেছে কিন্তু নির্মাণে আছে নাটকীয় আবহ। ছবি এগিয়ে থাকবে নাটকীয়তায়। যাকে আমরা গল্পের প্রধান শক্তি বলে জানি সেই ‘টুইস্ট’ বা চমক আছে চারটি। দর্শকভেদে বাড়তেও পারে। টুইস্টের কারণে ছবিটি দর্শকের পছন্দ হবে।
চিরন্তন কিছু সম্পর্কের মধ্যে আমাদের বসবাস। প্রেম, সংসার, সন্তান, দায়িত্ব, দ্বন্দ্ব, নিয়তি এসব জীবনে ঘটে থাকে। ছবির গল্পে মানবিক ও বাস্তব এ অনুভূতিগুলোই প্রধান।
চরিত্রায়ণ ও নাটকীয়তা ঘিরে ছবির গল্পের বণ্টন এরকম :
* তাহসান-রাইসা
* তাহসান-শ্রাবন্তী
* শ্রাবন্তী-রাইসা
* তাহসান-তাসকিন
* তাসকিন-শ্রাবন্তী
লাইক ও কমেন্টের ফ্যাশনেবল ফুলঝুরিতে যারা তাহসানকে বিদ্ধ করতে অভ্যস্ত তাদের জন্য ছবি দেখে মন্তব্য করা জরুরি। নাটকের তাহসানের ‘যদি একদিন’-এ একদম নেই। অনেক বেশি চেন্জড। স্যাড ভার্সনের অভিনয়ে কিছুটা সমস্যা বাদে রোমান্টিক, অ্যাংরি পার্টে তার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন চমৎকার। অফিসিয়াল ও স্টাইলিশ দুই লুকেই তাকে স্মার্ট লেগেছে। তাহসান-রাইসা বাবা-মেয়ের সম্পর্ক সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম। মেয়েকে ঘুম থেকে ওঠানো, হাতে তুলে নাস্তা খাইয়ে দেয়া, স্কুলে নিয়ে যাওয়া, কপালে একটা আদুরে চুমু দেয়া এগুলো সব বাবারাই করে। তাহসানের বাবার ভূমিকা প্রশংসনীয়। বাবা-মেয়ের মাঝে শ্রাবন্তীর আবির্ভাবে নাটকীয় আবহ শুরু। তাসকিনের আবির্ভাবের পর টুইস্টের খেলা শুরু। একে একে আকর্ষণীয় গোটা চারেক টুইস্ট। টুইস্টগুলোর স্পেশালিটি হচ্ছে বেশিরভাগ দর্শক হাততালি দেবে।
ছবির ফার্স্ট হাফ স্লো স্টোরি টেলিং-এ দর্শকভেদে মতভেদ আসতে পারে তবে তাহসান ও রাইসার বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে বিল্ডআপ করতে এটার দরকার ছিল। সেকেন্ড হাফে ছবিতে ফ্লো আসা শুরু হয় নাটকীয়তায়। তাহসান ও তাসকিনের অভিনয়ের প্রতিযোগিতা আসে শ্রাবন্তীকে ঘিরে। তাসকিন যে নায়কের চেয়ে প্রতিনায়কে বেশি স্বচ্ছন্দ এবং দর্শক পছন্দ করে আরেকবার প্রমাণ হবে। কিন্তু দর্শক জানে না তাহসান ও তাসকিনের মধ্যে কে কতটা বাঁক নেবে। শ্রাবন্তী যতক্ষণ থাকে পর্দায় অভিনয়ে মাতিয়ে রাখে। তার চঞ্চলতা, সিরিয়াসনেস, দায়িত্ববোধ, হাসি-কান্না সব জীবন্ত। ছবির সৌন্দর্য বলা যেতে পারে। রাইসার অভিনয় ন্যাচারালি সুন্দর। নতুন শিশুশিল্পীর প্রতিভা দেখা পেল ইন্ডাস্ট্রি অনায়াসে বলা যায়। সাবেরী আলম মায়ের চরিত্রে ভালো সিলেকশন এবং যথারীতি সেরাটা দিয়েছে। বাশার দম্পতি তাদের জায়গায় ঠিকঠাক। আনন্দ খালেদকে দর্শক নাও পছন্দ করতে পারে।
ছবির সিনেমাটোগ্রাফিতে শহুরে লোকেশনে ড্রোন শটগুলো দেখতে ভালো লাগে। কক্সবাজারকে যান্ত্রিক জীবনের বিপরীতে অখণ্ড অবসরের প্রেক্ষিতে তুলে ধরাতে ক্যামেরা অন্যভাবে কথা বলেছে। তাছাড়া সমুদ্রের ঢেউ মিনিংফুল করে দেখানো হয়েছে তাহসান-রাইসা-শ্রাবন্তীর ত্রিভুজ সম্পর্কের কিছু বাঁকে। আরো কিছু কাজ করা যেত। তাসকিনের সুপারস্টার ইমেজকে আরো ব্রডলি তুলে ধরার চেষ্টা করলে ভালো হত। শ্রাবন্তী তাসকিনের একই গান বারবার দেখছিল সেটার টেকনিক্যাল একটা ঘাটতি ছিল। সব ছবিতেই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে এটাতেও আছে। খুব টুইস্ট পছন্দ করা দর্শক অবশ্য এই গল্পেই সম্পর্কের ফাঁদ খুঁজে আরো টুইস্ট আশা করতে পারে।
ছবির গানে ‘লক্ষীসোনা’ ইতোমধ্যে ওয়ার্ড অফ মাউথ হয়েছে। ‘আমি পারব না তোমার হতে’, ‘চুপকথা’ মানানসই। আর একটা গান আছে টুইস্টের অংশ হিসেবে। দর্শক ছবি দেখে জানুক।
তাহসানের ছবি দেখি না..
নাটক দেখে কি লাভ..
এসব ফ্যাশনেবল কথাবার্তায় পারদর্শী যারা নিজেদের চিন্তাভাবনার সমস্যা দূর করতে ‘যদি একদিন’ দেখুন। দেখে জানুন পরিবর্তিত তাহসান ও বাণিজ্যিক ভাষায় নির্মিত ছবিটি।
‘আমাদের একার গল্প নেই, অন্যের সাথে আমাদের গল্পগুলো বাঁধা’
‘যদি একদিন’ একার কোনো গল্প নয়, অনেকের গল্প।