নাসরিনের কথা
নাসরিন দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারের একজন তারকা। অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছে। নব্বই দশক থেকে শুরু করে শূন্য দশকের পর ডিজিটাল সময় পর্যন্ত চলচ্চিত্রে কাজ করেছে।
সোহানুর রহমান সোহানের ‘লাভ’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন। বেশিরভাগ ছবিতে নায়িকার বান্ধবী, সাইড নায়িকা বা বোনের ভূমিকায় তাকে দেখা গেছে। কিছু ছবিতে নায়কের সাথে তার গানও আছে যেমন ‘টোকাইর হাতে অস্ত্র কেন’ ছবিতে মান্নার সাথে, ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে ‘বাবার বাবা’ ছবিতে। ‘নয়নের কাজল, মিথ্যা অহংকার, আব্বাজান, বন্ধু যখন শত্রু, আসলাম ভাই’ সহ আরো কিছু ছবিতে দ্বিতীয় নায়িকা ছিল।
নায়িকার বান্ধবীর চরিত্রেও নাসরিনকে পর্দায় যথেষ্ট স্ক্রিনটাইমে দেখা গেছে। শাবনূরের সাথে ‘কাজের মেয়ে’ ছবিতে রিয়াজকে ফলো করতে দেখা যায়। শাবনূরকে পরামর্শ দেয় বিভিন্নভাবে এমনকি দুজনকে ফাইটও করতে দেখা যায়। বোনের চরিত্রেও বেশকিছু ছবি আছে তার মধ্যে ‘শান্ত কেন মাস্তান’ ছবিতে নাসরিন মান্নার বোন থাকে। নাসরিনকে কলেজ থেকে ফেরার পথে ড্যানিরাজ অসম্মান করলে মান্না নাসরিনকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ড্যানির হাত উপড়ে ফেলে এবং এরপর থেকেই মাস্তান শান্তর ভূমিকায় চলে যায় মান্না। ছবিটিতে বোন নাসরিনই ছিল মান্নার পরিবর্তনের কারণ।
নাসরিনকে একসময় দর্শক ‘দিলদারের নায়িকা’ বলেই জানত। দিলদার মানেই নাসরিন থাকবে এটা অবধারিত ছিল। উল্লেখযোগ্য অনেক ছবি আছে তাদের দারুণ কেমিস্ট্রির। বলা যেতে পারে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ছবির দুর্দান্ত জনপ্রিয় এ গানের কথা –
‘যদি সুন্দর একখান বউ পাইতাম
দিবানিশি তারে আমি ভালোবাসিতাম,
আয়না করে তারে দেখিতাম
কলিজা করে বুকে রাখিতাম
আইল না কেউ আইল না
আমার বউ হইল না
জ্বালাইয়া গেল মনের আগুন
নিভাইয়া গেল না’
গানে দিলদারের অদ্ভুত সব অঙ্গভঙ্গির সাথে নাসরিনও ছিল গ্ল্যামারাস। আরো কিছু ছবিতে তাদের গান ছিল। কমেডির দিক থেকে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ছবিতে নাসরিনের বাড়িতে লজিং মাস্টার থাকে দিলদার যার উদ্দেশ্য নাসরিনের সাথে প্রেম করা। মজার কিছু সিকোয়েন্স আছে তাদের। ‘গরিবের রাণী’ ছবিতেও তাদের কমেডি ছিল দারুণ।
দিলদারের পর নাসরিন ধারাবাহিকভাবে নায়িকা ছিল কমেডিয়ান আফজাল শরীফ ও কাবিলার। আফজাল শরীফের সাথে তার কেমিস্ট্রি মোটামুটি থাকলেও কাবিলার সাথে কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে দিলদারের সাথেই নাসরিনের কেমিস্ট্রি সেরা ছিল।
নাসরিন নাচে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। মূল নায়িকাদের সাথে তার নাচের পারফরম্যান্স বিভিন্ন ছবিতেই নজরকাড়া ছিল। ‘রাক্ষস’ ছবির স্টেজ পারফরম্যান্স সং ‘এখনো সে যে এলো না’তে মৌসুমীর সাথে নাসরিনও দুর্দান্ত নেচেছে। মৌসুমীর পাশাপাশি তার লিপেও গানটি ছিল এবং অভিনয়ও অসাধারণ। ‘দেশদ্রোহী’ ছবিতে মান্নার ‘ক্রিমিনাল চারিদিকে ক্রিমিনাল’ গানে নাসরিনের নাচ ছিল দেখার মতো। গানটি অসাধারণ ছিল। ‘তোমার আমার প্রেম’ ছবিতে জনপ্রিয় ‘ওগো সাথী আমার’ গানটি নাসরিনের লিপে ছিল। এ গানে নাসরিনকে গ্ল্যামারাস লাগে। হুমায়ূন ফরীদির সাথে ‘কালো চশমা’ ছবিতে ‘নাচো নাচো সব সুন্দরীরা’ গানেও তার নাচ দেখার মতো। ‘আকাশছোঁয়া ভালোবাসা’ ছবিতে ট্রেনের ছাদে তার দারুণ নাচের গান আছে। বাণিজ্যিক ছবির মূল নায়িকাদের সাথে টক্কর দেয়ার মতো নাচে পারদর্শী ছিল।
নাসরিন নেগেটিভ রোলেও অসাধারণ অভিনয় করেছে বেশকিছু ছবিতে। নেগেটিভ রোলে পর্দায় তাকে সত্যিকারভাবেই মানাত। বলা যেতে পারে শাবনূরের ‘ফুলের মতো বউ’ ছবিতে তার নেগেটিভ রোলের কথা। শাবনূরের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে ডনের সাথে তার ষড়যন্ত্র এবং শাবনূরকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যায়। পরে শাবনূর মোকাবেলা করে তার। নাসরিন এ ছবিতে দারুণ অভিনয় করেছে নেগেটিভ রোলে। ডিজিটাল সময়ের প্রথমদিকের ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’-এও নাসরিন ছিল নেগেটিভে।
সর্বশেষ ‘সত্তা’ ছবিতে নাসরিনকে টলিউডের অভিনেত্রী পাওলি দামের সাথে পার্শ্ব চরিত্রে দেখা গেছে এবং এ ছবির জন্য ‘বাচসাস পুরস্কার’ লাভ করে।
অশ্লীল সময়ের সাথে নাসরিন খাপ খাইয়ে নিয়েছিল এবং অনেক ছবিতে কাজ করে সমালোচিত হয়েছে।
নাসরিন অনেক তারকার ভিড়ে অনালোচিত থেকে যায় কিন্তু তারও একটা সফল ক্যারিয়ার আছে।