Select Page

নায়করাজের ক্ষোভ

নায়করাজের ক্ষোভ

razzakজাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অভিনয়শিল্পীদের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নায়করাজ রাজ্জাক। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের বেহাল দশা ও যৌথ প্রযোজনা নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি এফডিসি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পৃখক পৃথক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন রোববার।

এফডিসিতে সকালে বলেন, ‘আমরা একটি চলচ্চিত্র দিবস পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু আজ যা ঘটল, তা রীতিমতো দুঃখজনক। এমন একটি দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় এই সময়ের জনপ্রিয় তারকাদের কারও দেখা পেলাম না!’

দিনজুড়ে এফডিসিতে নানা আয়োজন থাকলেও সেখানে তারকার উপস্থিতি ছিল কম। চলচ্চিত্র দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

রাজ্জাক আরও বলেন, ‘কী বলব! এখানে তো পরামর্শ নেওয়ার লোকই নাই। এখন যারা চলচ্চিত্রের কাজ করছেন, তাদের অবস্থা এমন—চলচ্চিত্রে কয় দিন কাজ করেই চলে যাবেন। এভাবে চললে তাঁদের কেউ মনে রাখবে না।’

উল্লেখ, এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রাজ্জাক।

এ দিকে সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিজিটাল ও যৌথ প্রযোজনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিজিটাল ছবির নামে যেটা হচ্ছে সেটা অন্যায়। আজকাল ছবিতে সেন্টিমেন্ট পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতিতে গোলমাল লাগিয়ে দেওয়া। চরিত্রগুলোর পরিচয়ও স্পষ্ট হয় না। …কিছু লোক বদমাইশি করে ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা করে আমাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে আরো নষ্ট করছে। আমি দীর্ঘ ৫০ বছর এই জগতের সঙ্গে জড়িত আছি। বেশ কয়েক বছর সেন্সরবোর্ডের সদস্য ছিলাম। কিন্তু অবশেষে আমি সেই সেন্সরবোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। বর্তমান সময়ের ছবি নির্মাতাদের যে রুচি তা আমাকে বেশ আহত করেছে।’

এমনকি চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন গুণী এ অভিনেতা ও নির্মাতা, ‘আমাদের শিল্পী বানাতে তৎকালীন সাংবাদিকরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমাদের গাইড করেছেন। আমার তৃতীয় ছবি মুক্তির পর একজন সাংবাদিক আমাকে প্রথম বলেছিলেন, আপনি তো ভালো অভিনয় করছেন! কিন্তু এখন একটা ছেলে বা মেয়ে কাজ শুরু করলে ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই বলে আপনি তো নায়ক রাজ্জাককে বা নায়িকা কবরীকে ছাড়িয়ে গেছেন।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকার আমাদের চলচ্চিত্র দিবস উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আমরা কি করছি এ দিবসকে ঘিরে? আজ সকালে আমি আমার ছেলে-নাতিদের নিয়ে এফডিসিতে গিয়েছিলাম। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর ছিলেন। কিন্তু আমি, আমার ছেলে-নাতিরা এবং দু’একজন ভিলেন চরিত্রের অভিনেতা ছাড়া কাউকে পেলাম না। আমি দুঃখ করে বলেছি চলচ্চিত্র দিবসটি বন্ধ করে দিন। যাদের জন্য চলচ্চিত্র দিবস সেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই এ দিবসকে সম্মান দিচ্ছেন না।’

বাংলা সিনেমার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব তৈরি হওয়া প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রের পাকিস্তান আমলের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলেন, “আমরা পাকিস্তান আমলে উর্দু ছবির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলা ছবিকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির শুটিং করার সময় পাকিস্তানি আর্মি এফডিসির ফ্লোর ঘেরাও করে ফেললো। আমাকে এবং জহির রায়হানকে আর্মি ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলো। আমাদের নৈতিক চরিত্র এতটাই অবক্ষয় হয়েছে যে, এখন আমাদের প্রভাত ফেরিও হয় না।”

তিনি বলেন, ‘এই আমি অভিনয় শিখে চলচ্চিত্রে এসেছিলাম। কিন্তু তারপরও নায়ক হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারিনি। নায়ক আমি একদিনে হই নি। স্টার একদিনে হওয়া যায় না।’

সূত্র : প্রথম আলো, পরিবর্তন ডটকম

 


Leave a reply