পরলোকে বারী সিদ্দিকী
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার, গীতিকার, বংশীবাদক ও সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বারী সিদ্দিকী। এরপর যখন তাকে দ্রুত স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তিনি অচেতন ছিলেন। তখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার দুটি কিডনি অকার্যকর ছিল। তিনি বহুমূত্র রোগেও ভুগছিলেন।
দীর্ঘদিন সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবার কাছে বারী সিদ্দিকী শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে। ওই বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে তিনি ছয়টি গান গেয়ে রাতারাতি আলোচনায় আসেন
তার জনপ্রিয় হওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাও বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলায় এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি তার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সঙ্গে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।