পাইরেসি নিয়ে আব্দুল আজিজের ব্যাখ্যা উদ্দেশ্যমূলক, অভিযোগ অনন্য মামুনের
ঈদুল আজহার আলোচিত দুই সিনেমা পাইরেসির শিকার হলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’। মূল অপরাধীকে ধরা না হলেও এর মধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জাজ মাল্টিমিডিয়ার আব্দুল আজিজের অভিযোগ, নতুন পরিবেশকের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়ার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এই ব্যাখ্যাকে উদ্দেশ্যমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানকে বাধা দিতে করা হয়েছে বলে দাবি অনন্য মামুনের, যিনি ‘সুড়ঙ্গ’-এর পরিবেশক।
গত ২৭ জুলাই জাজের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক বার্তায় আব্দুল আজিজ বলেছেন, “গত পাঁচ বছরে কোনও সিনেমা হল থেকে পাইরেসি হয়নি। তাহলে ‘সুড়ঙ্গ’ কেন পাইরেসি হলো? কারণ, ‘সুড়ঙ্গ’ জাজের সার্ভারে রিলিজ হয়নি। অন্য নতুন এক কোম্পানির সার্ভারে রিলিজ হয়েছে। জাজের সার্ভার থেকে কেউ কপি করেতে পারে না। জাজের সার্ভারে একবার এনক্রিপ্টেড হয়ে গেলে জাজের পক্ষেও কপি করা সম্ভব না। যদি কেউ কপি করতে পারে, তাহলে তাকে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা আমরা আরও ৭ বছর আগেই দিয়ে রেখেছি। আর হল থেকে ভিডিও রেকর্ডিং হলে, সেই হলের নাম চলে আসবে। তাই জাজের সার্ভারে চলা কোনও সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ পাইরেসি করতে দেবে না।”
আজিজের অভিযোগ স্পষ্টভাবে ‘সুড়ঙ্গ’র পরিবেশক অনন্য মামুনের প্রতিষ্ঠান ‘দ্য কনটেন্ট স্পেশালিস্ট’র দিকে। চার দিন পর সোমবার (৩১ জুলাই) জবাব দিলেন তিনি। তার মতে, হল থেকে ভিডিও করে পাইরেসি শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর সব দেশেই হয়। এটা বন্ধ করার কোনও উপায় নেই।
অনন্য মামুন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোনও টেকনোলজি আবিষ্কৃত হয়নি, যেটা দিয়ে আপনি হল থেকে প্রিন্ট করা পাইরেসি বন্ধ করতে পারবেন। যদি তা-ই হতো, তাহলে পৃথিবীর বিখ্যাত বড় বড় ছবিগুলো রিলিজের তিন ঘণ্টার মধ্যে পাইরেসি হতো না। এবার আসি আমাদের দেশের কথায়। সাধারণত বাংলাদেশের সিনেমা ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করার পরে জাজ মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমেই হলের ছবি প্রদর্শিত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, জাজ থেকে রিলিজ হওয়া ছবি পাইরেসি হয় না? শাকিব খানের ‘বিদ্রোহী’ ছবি রিলিজের সাত দিনের মাথায় পাইরেসি হয়েছিল। ‘পাসওয়ার্ড’ ছবি রিলিজের চার দিনের মাথায় পাইরেসি হয়েছিল। যেটা নিয়ে প্রযোজক মামলা পর্যন্ত করেছিলেন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ জাজের সার্ভার থেকেই পাইরেসি হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, এবার ‘সুড়ঙ্গ’ পাইরেসি হওয়া নিয়ে কেন সেই কোম্পানি অন্য ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে দোষারোপ করছে? কারণ একটাই, মার্কেটে নতুন কোনও কোম্পানিকে কম্পিটিশনে টিকতে না দেওয়া।”
মামুন জানান, ‘পাঠান’ আমদানির সময় ভারত থেকেই নতুন সার্ভার নিয়ে আসেন তিনি। এরপর সেই সার্ভারেই ছবি মুক্তি দেন। সেই সঙ্গে চালু করেন ই-টিকিটিং। এই নির্মাতা-প্রযোজক পাল্টা অভিযোগের সুরে বললেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের এই পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য জাজ মাল্টিমিডিয়া একটি ভুল ব্যাখ্যা জাতির সামনে তুলে ধরলো। প্রতি সপ্তাহে আট হাজার টাকা করে যাদের মেশিন ভাড়া ছিল। যখন ইকবাল সাহেব ও শাকিব খান মিলে নতুন একটি সার্ভার কোম্পানি করলেন, তারা রেন্ট করলেন চার হাজার টাকা; লাভবান হলো প্রযোজক। জাজ মাল্টিমিডিয়ার সেটা সহ্য হলো না; তারা এসকে সার্ভার সিস্টেমকে কীভাবে মার্কেট থেকে আউট করা যায়, সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। এবার আমরা যখন নতুন করে প্রযোজক এবং হল মালিকদের আন্তর্জাতিক কোয়ালিটির সার্ভারের মাধ্যমে প্রজেকশন সিস্টেম স্টাবলিশ করার চেষ্টা করছি, তখনই এই মিথ্যা অপপ্রচার।’
পাইরেসির জন্য সার্ভারের চেয়ে কিছু মন্দ লোককেই দায়ী করলেন অনন্য মামুন। তার ভাষ্য, “পাইরেসি করে কিছু খারাপ লোক, সামান্য কিছু টাকার জন্য তারা এই কাজটি করে থাকে। আজ ‘সুড়ঙ্গ’র মতো একটি বড় ছবিকে পাইরেসি করা হলো। ‘প্রিয়তমা’র মতো ছবি পাইরেসি হলো। তাহলে কি আমরা বুঝে নেবো, প্রতিপক্ষ ইচ্ছা করেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে প্রতিরোধ করার জন্য পাইরেসির হোতাদের নিজস্ব আক্রোশ থেকে সহযোগিতা করছেন?”
সবশেষে নিজের স্বার্থ না দেখে ইন্ডাস্ট্রির কল্যাণে সিনেমার সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অনন্য মামুন।