Select Page

দেশেই পাইরেসির শিকার ‘সুড়ঙ্গ’, রায়হান রাফী বললেন ‘পরিকল্পিত’

দেশেই পাইরেসির শিকার ‘সুড়ঙ্গ’, রায়হান রাফী বললেন ‘পরিকল্পিত’

ঢাকাই সিনেমায় পাইরেসি এক সময় কালো ব্যাধির মতো ছড়ালেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব কমেছিল। সম্প্রতি কলকাতার রিলিজের পরপরই ডিজিটাল দুনিয়ায় ছেয়ে যায় রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, পার্শ্ববর্তী দেশের হল থেকে ছড়িয়েছে সুপারহিট সিনেমাটি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের হল থেকেই বড় কোনো মহলের যোগসাজশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’।

ছবিটির সম্পাদক সিমিত রায় অন্তর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “সুড়ঙ্গ’র পাইরেসি কপি পর্যবেক্ষণ করে যা বুঝলাম, এটা কোনো রেগুলার শো চলাকালীন রেকর্ড করা হয়নি। কারণ, ভিডিওতে দর্শকদের কোনও রিঅ্যাকশন সাউন্ড নাই। দর্শকদের হাসির শব্দ নেই, কোনও উচ্চবাচ্য নেই! তার মানে, এটা দর্শকশূন্য হলে রেকর্ড করা হয়েছে। ক্যামেরাকে ট্রাইপডে রেখে ভিডিওটি করা হয়েছে। ক্যামেরার কোনও ধরনের নড়াচড়া দেখা যায়নি। অতএব, এটার সঙ্গে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ জড়িত। একটা ফাঁকা হলে ট্রাইপডে ক্যামেরা সেট করে আড়াই ঘণ্টার সিনেমা রেকর্ড করা তো সম্ভব না, যদি হল কর্তৃপক্ষ এতে জড়িত না থাকে।”

সিমিতের বক্তব্য স্পষ্ট, যে হল থেকে এই ছবিটি চুরি হলো সেটির সঙ্গে কর্তৃপক্ষ সরাসরি জড়িত। তা না হলে, ফাঁকা হলে পুরো সিনেমা চালিয়ে ভিডিও ধারণ করা অসম্ভব।

সিমিতের পর্যবেক্ষণে এ-ও বোঝা গেছে, ছবিটি কোন দেশ থেকে পাইরেসি করা হয়েছে। কারণ, অনেকেই বলতে চাইছিলেন কলকাতা যাওয়ার পরই ছবিটি চুরি হলো অনলাইনে। তবে সিমিতের ভাষ্য ভিন্ন, “সুড়ঙ্গ’ বাংলাদেশ থেকেই পাইরেসি হয়েছে। ভারতের সিনেমা কপি আর বাংলাদেশের কপির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে, যা শুধু আমরাই (পরিচালক, সম্পাদক ও প্রযোজক) জানি। এরমধ্যে একটার কথা বলি, তা হলো পেপসির টাইটেল কার্ড। যা ভারতের অংশে ছিল না।”

ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’। এর মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে আফরান নিশোর। তার সঙ্গে আছেন তমা মির্জা। ছবিটি দেশের বাজারে দারুণ ব্যবসা করছে এখনও। চলতি সপ্তাহে দেশজুড়ে প্রায় অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহে চলছে এটি। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায়ও ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে।

পাইরেসিকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে রায়হান রাফী ফেসবুক পোস্টে বলেন বলেন, ‘একটা ফিল্মকে পাইরেসি করা হলো পরিকল্পনা করে। শুরুতেই ছেড়ে দেয়া হলো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাইম্যাক্স সিন। তারপর নিজেদের লোক দিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে সেটা ভাইরাল করে দেওয়ার চেষ্টা হলো। এরপর এখন তো পুরো সিনেমাই। শুরুতে ইন্ডিয়ান অ্যাড জুড়ে দেওয়া হলো যেন মনে হয় ইন্ডিয়া থেকে পাইরেসি হয়েছে! কিন্তু পাইরেসি হয়েছে বাংলাদেশের ভার্শন। সিনেমার দুই দেশের ভার্শনে কী কী ফারাক, সেগুলো আর কেউ না জানলেও আমরা তো জানি! একটি সুনির্দিষ্ট চক্র সুড়ঙ্গের পেছনে লেগেছে, তাদের কারণে পাইরেসির শিকার হয়েছে সুড়ঙ্গ।

এই পাইরেসি কারা করেছে, তা আমরা আইডেনটিফাই করছি। এটা বাংলাদেশ থেকেই হচ্ছে। আমাদের সাথে আইনী সংস্থাগুলোও কাজ করছে। এই ভিডিওগুলো যারা অনলাইনে ছড়িয়েছে; ফেসবুক, ইউটিউব, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, বিভিন্ন সাইটে আপলোড করেছে কিংবা শেয়ার করেছে- তাদের সবার বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে। পাইরেসি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবং এই অপরাধের শাস্তি অপরাধীদের পেতেই হবে। আমরা সেটা নিশ্চিত করবোই।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, যেকোনো ইস্যু নিয়ে কত লেখালেখি হয়, ভিডিও কনটেন্ট হয়, প্রতিবাদ হয়। অথচ এই বিষয়ে তারা নিশ্চুপ! অনেককেই দেখছি আমাদের সিনেমা পাইরেসি হয়ে যাওয়াকে সেলিব্রেট করতে। কিন্তু তারা জানে না, যারা সত্যিকারের সিনেমাপ্রেমী, তারা পাইরেসির সিনেমা দেখছে না। তারা হলে গিয়েই দেখছে। এখনো দেশে সুড়ঙ্গ হাউজফুল, টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের সীমারেখা পেরিয়ে সুড়ঙ্গ দারুণ সাফল্য পাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। আমেরিকায় ১০৮টি হল পাচ্ছে, কলকাতায় দারুণ প্রশংসা পেয়েছে, যিদিও কলকাতায় আমাদের প্ররিক্ষা মুলোক মুক্তি ছিলো যা আলোচিত হয়েছে আমরা খুশী

সামনে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা দেশে মুক্তি পাচ্ছে সুড়ঙ্গ। বাংলাদেশী সিনেমার জন্য নিঃসন্দেহে এ এক দারুণ এচিভমেন্ট। সুড়ঙ্গকে থামিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।’

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুধু মুভি-সিরিজ ডাউনলোড ওয়েবসাইটে নয়, ইউটিউবেও ছড়িয়ে পড়েছে ‘সুড়ঙ্গ’র অসংখ্য কপি। তবে এটা সরানোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। কপিরাইট ক্লেইমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ইউটিউবের সব কপি বন্ধ করা হয়েছে। তবে ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে এখনও রয়ে গেছে কিছু কপি। সেগুলো ব্লক করার বিষয়ে কাজ চলছে।


মন্তব্য করুন