পিএ কাজলের অশ্লীল প্রস্তাব ফাঁস করলেন অমৃতা খান
নবাগতা অমৃতা খানকেও কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন পরিচালক পিএ কাজল। সোমবার এ তথ্য সরবরাহ করেছেন অমৃতা নিজেই। যদিও এর আগে গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করে পরিচালকদের অশ্লীল প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানান তিনি।একই সঙ্গে অমৃতা খান তার সঙ্গে পিএ কাজলের ফেসবুক কথপোকথনের কথা জানান।
এর আগে তাবাসসুম রিয়া নামের এক নারীর সঙ্গে কথোপকথন ফাঁসের খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন পিএ কাজল। এছাড়া, সোমবার শীর্ষ একটি নিউজপোর্টাল পিএ কাজলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথপোকথনের দুই ফেসবুক আইডিকে ভুয়া বলে দাবি করে।কিন্তু অমৃতা যেসব তথ্যপ্রমাণ সরবরাহ করেছেন তাতে পিএ কাজলের পার পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।যে কারণে মুখ খুললেন অমৃতা খান।
অমৃতা খান বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে পিএ কাজল আমাকে বাজে প্রস্তাব দিয়ে ফেসবুকে ও ফোনে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরির জন্য পিড়াপীড়ি করতে থাকেন। আমি এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে ফেসবুকে ব্লক করে দেই। এবং নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমে পরিচালকদের এসব আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু সম্প্রতি পিএ কাজলের সঙ্গে এক নারীর ফেসবুকে কথপোকথনটি গণমাধ্যমে ফাঁস হলে ব্যাপারটি আমার নজরে আসে। আমি আবার পিএ কাজলকে আনব্লক করে দেখি পিএ কাজলও আমাকে ব্লক করেছেন। ফলে তার সঙ্গে আমার কথোপকথনে তার ছবি দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমের পিএ কাজলকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা দেখে আমার অত্যন্ত খারাপ লেগেছে। তাই আমি শেষমেষ মুখ খুলতে বাধ্য হলাম।’
শরীর না দেয়ায় অমৃতাকে ‘হাজী’ বললেন কাজল
অমৃতা আরো বলেন,‘বয়োজ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পিএ কাজলকে আমি প্রথমে সম্মানের সঙ্গেই গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে চলচ্চিত্রে কাজ করার বিনিময়ে বারবার বিশেষ সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যান। আমি বারবার তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেয় তিনি আমাকে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার অনুরোধ করতে থাকেন। কখনো ফোনে কখনো ফেসবুক কথপোকথনে পিএ কাজল আমাকে বিব্রত করতে থাকেন। তিনি বলেন, এক সঙ্গে ৬০ থেকে ৭০টি হলে আমার ছবি মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। চিত্রনায়িকা মাহীর সঙ্গেও তার শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ করার উদাহরণ দিয়ে তিনি আমাকে ফোনে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।এক পর্যায়ে না পেরে তিনি আমাকে হাজী বলে কটাক্ষ করতে থাকেন।’
অমৃতার প্রতিবাদ
চলচ্চিত্রে কাজ করতে এসে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে এরকম পূর্বধারণা থাকলেও এবার তার প্রমাণ পেলাম। আমি এর আগে গণমাধ্যমে পরিচালকদের কুপ্রস্তাব নিয়ে যে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম তা এই পিএ কাজলের বিরুদ্ধেই। তখন নাম প্রকাশ করতে সাহস পাইনি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় যখন তার মুখোশ চতুর্দিকে উন্মোচিত হতে থাকে তখন আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।আমি দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সুস্থ পরিবেশ রক্ষার্থে চলচ্চিত্র পরিচালকদের এসব মানসিকতার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
অমৃতা আরো বলেন, ‘খুব সুস্থ মন মানসিকতা নিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে এসেছিলাম। কিন্তু দুটি ছবি করার পরই এরকম অশ্লীল মানসিকতার পরিচালকদের দেখে চলচ্চিত্রে কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলছি। এরকম চলতে থাকলে শিক্ষিত ভদ্র পরিবারের মেয়েরা ইন্ডাস্ট্রিতে আসবে না।’
ফ্ল্যাশব্যাকৃ
এর আগে তাবাসসুম রিয়া নামের এক নারীর সঙ্গে কাজলের ফেসবুক কথোপকথন প্রকাশের পর তা মিডিয়া জগতে তোলপাড় শুরু হয়। কথোপকথনটিতে কাজল চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে ওই নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন।
শারীরিক সম্পর্কের বিনিময়ে চলচ্চিত্র জগতে কাজ করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলে বুঝিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। যুক্তিটি জোরালো করতে চলচ্চিত্র জগতের বেশকিছু নায়িকার নামও তিনি ফাঁস করেন যারা তার এবং অন্য পরিচালকদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে এসেছেন।
এ প্রসঙ্গে কথোপকথনটিতে উদাহরণ হিসেবে আসে সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় নাম মাহিয়া মাহী, সাহারা, পূর্ণিমার নাম। নারী শিকারী পরিচালক হিসেবে এসব কাজে জড়িত হিসেবে উঠে আসে সোহানুর রহমান সোহান, মুশফিকুর রহমান গুলজার ও আবদুল আজিজের নাম।
কথোপকথনটি ফাঁস হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পরিচালক প্রযোজকদের এবং প্রতিষ্ঠিত নায়িকাদের নিয়ে সন্দেহ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
ওই ঘটনার পর গণমাধ্যমে খবর বের হয়, এ পরিচালকের বিরুদ্ধে পরিচালক সমিতিতে অভিযোগ করেছেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা।পরিচালক সমিতি যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানা যায়।চিত্রনায়িকা মাহীও পিএ কাজলের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন বলে খবরে প্রকাশ পায়।
এদিকে, পরিচালক সিমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন গত শুক্রবার জানান, পিএ কাজল দেশের বাইরে থাকায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।দেশের ফিরলেই সমিতির বিধান অনুযায়ী কাজলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।