পুরোদমে লোকাল
‘লোকাল’ ছবি পুরোদমে লোকাল। জোন-ভিত্তিক পাওয়ার প্র্যাকটিসের বিষয় আমাদের দেশের সব শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হিন্দিতে আছে-‘আপনা গলি মে কোই ভি শের হোতে হে।’ শের হবার সেই নেশার ছবি হচ্ছে ‘লোকাল’।
লক্ষীনগরের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয় বিপ্লব। লোকাল ক্রাইম জোনের অঘোষিত বাদশায় পরিণত হয় বিপ্লব। বিপ্লবের একটা স্বপ্ন থাকে যা পূরণ করার জন্য আবির্ভাব ঘটে রূপালির। একের পর এক অপরাধে লিপ্ত থাকা শক্ত সিন্ডিকেটকে ভাঙার জন্য এ দুজনের চেষ্টা থেকে ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’-র মতো একটা গল্পে এগিয়ে যায় ‘লোকাল’ ছবি। ছবির পরিচালক সাঈফ চন্দন।
বিপ্লব চরিত্রে আদর আজাদ তার লুক ও অভিনয় দিয়ে নিজেকে ইন্ডাস্ট্রির একজন নির্ভরশীল নায়কের সম্ভাবনায় উন্নীত করেছে। ইন্ডাস্ট্রির বডিবিল্ডার হিরোদের মধ্যেও সে অন্যতম। বুবলীর অভিনয় এত ন্যাচারাল যে তাকে ইন্ডাস্ট্রির সেরা কমার্শিয়াল নায়িকা বললে ভুল হবে না। ছবির ভিলেনদের মধ্যে সেকাল-একাল সংযোগ ঘটেছে। আহমদ শরীফ, মিশা সওদাগর থেকে শুরু করে ডন, শিবা সানু হয়ে বড়দা মিঠু, সাঞ্জু জন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। সাঞ্জু জনের বডি ফিটনেস অসাধারণ, তার ভিলেন চরিত্রে সম্ভাবনা নায়কের থেকে বেশি মনে হচ্ছে।
ছবির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নায়কের থেকে নায়িকার চরিত্রের ট্রান্সপরমেশন বেশি ছিল। সম্ভবত পরিচালক সাঈফ চন্দন এ বিষয়টিকে বিশেষভাবে দেখাতে চেয়েছেন।
আদর আজাদ-বুবলীর পরিচয়টা ভিন্নভাবে শুরু হলেও তাদের মধ্যে রসায়ন দারুণ। নায়ক নায়িকাকে ডাকে ‘রূপালি ভাই’ ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। তাদের দুজনের রসায়নের এখানেই শুরু। সময়ের সাথে সাথে সেটা ভালো পর্যায়ে গেছে।
ছবির সংলাপও ভালো ছিল :
১.
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর একাত্তরের যুদ্ধের রক্ত আমগো শরীলে এত ডর কিসের?
২.
- জীবনটা তো গোছাই নিছস, ক্যামনে পারস?
- খুবই সোজা। নিজের বাড়ির বারান্দায় গিয়া জোরে নিঃশ্বাস নিবা আর নিজেরে সময় দিবা।
বেশ ভালো সংলাপ।
৩.
ভাতের সাথেও বিপ্লবের সম্পর্ক আছে, অনেক মানুষ ভাত খাওয়ার জন্য বিপ্লব করে, ভাত খেয়েই তারা খুশি।
৪.
সমুদ্রের বালিতে মানুষ নিজের নাম লেখে, সে জানে কিছুক্ষণ পর ঢেউ আইসা নামটা মুছে দেবে কিন্তু তাও সে লেখে। ক্যান লেখে জানোস? কারণ এটা তার নিজের নাম, নিজের পরিচয়।
৫.
একজন মানুষের স্বপ্ন যত বড় তার কিছু একটা করার ক্ষমতাও তত বড়।
বঙ্গবন্ধু-র ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-র বিখ্যাত লাইন-‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে’ সংলাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুরু থেকেই ভালো ছিল। গানের মধ্যে ‘খেলা হবে’ সেরা। গানটি প্রকাশের পর থেকেই প্রশংসিত হয়েছে। ‘মন পাগলা’ গানটিও রোমান্টিক গান হিসেবে মানসম্মত।
ছবির দুর্বলতার মধ্যে পুলিশের ভূমিকার কথা প্রধানভাবে বলা যায়। মহিলা পুলিশ অফিসারের অভিনয়ও রোবোটিক লেগেছে। ছবির ডিটেইলে আরো কিছু যোগ করা যেত বলে মনে হয়।
ছবির ফিনিশিংও বেশ ভালো।
একটি ওভারঅল মানসম্মত কমার্শিয়াল ছবির সবকিছুই এ ছবির মধ্যে আছে। একদম পুরোদমে লোকাল।
রেটিং – ৭.৫