পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড”
বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সেন্সরবোর্ডের কাজ হলো সিনেমার ধরণ অনুযায়ী “সেন্সর সার্টিফিকেট” প্রদান করা। সিনেমার গল্পের রোমান্স, ভয়াবহতা, সংলাপ ইত্যাদি অনুযায়ী কোন সিনেমা কোন বয়সের দর্শকদের দেখা উচিত/অনুচিত তা নির্ধারণ করে তদানুযায়ি সার্টিফিকেট প্রদান করাই সেন্সরবোর্ডের কাজ। এশিয়ার সিনেমার সেন্সরবোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে কড়াকড়ি অবস্থা ছিল ভারতের সেন্সরবোর্ডের। প্রাথমিক দিকের অনেক পরিচালককে এর জন্য অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যখন তারা অনুধাবন করলো তাদের এই সেন্সর আইনই তাদের সিনেমার বিকাশের পথে প্রথম অন্তরায়, তখন তারা চলচ্চিত্রের স্বার্থে সেন্সরবোর্ডে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসলেন। শুরু করলেন ফিল্ম সার্টিফিকেশন সিস্টেম। দুঃখের ব্যাপার বাংলাদেশে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের সেন্সর আইনই বলবত আছে।
কোন সিনেমা যদি সকল শ্রেণীর দর্শকদের দেখার উপযোগী হয় তবে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশের সেন্সরবোর্ডও সেই সিনেমাকে “Universal” বা সংক্ষেপে “U” সার্টিফিকেট প্রদান করে। বাংলাদেশের সিনেমার সেন্সরপত্রে যা “সা” দিয়ে সূচিত হয়।
কোন সিনেমা যদি ১৮ বছরের নীচের দর্শকদের দেখার উপযোগী না হয় তবে সারা বিশ্বের সেন্সরবোর্ড সেই সিনেমাকে প্রাপ্তবয়স্ক বা “Adult” সংক্ষেপে “A” সার্টিফিকেট প্রদান করে। আজব ব্যাপার হলো এই ধরণের প্রাপ্তবয়স্কদের দেখার উপযোগী সিনেমা বাংলাদেশেও নির্মিত হয়, এবং বাংলাদেশ সেন্সরবোর্ড সেই সিনেমাগুলোকেও “সা” সার্টিফিকেট দেয়!!! কারণ বাংলাদেশের সেন্সরবোর্ডে “সা” সার্টিফিকেট ছাড়া আর কোন সার্টিফিকেটই নেই। মোটকথা ভাল-মন্দ যে যা-ই বানান সবার জন্যই “সা”।
“A” সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ছবি বলতে শুধু রগরগে যৌনদৃশ্য সম্বলিত সিনেমা বোঝায় না। যেকোন ভৌতিক বা হরর ফিল্ম “A” সার্টিফিকেট পাবে। তেমনই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, গালাগালি ইত্যাদি সম্বলিত সিনেমা যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখা উচিৎ নয় সেসব সিনেমা-ই “A” সার্টিফিকেট পাবে।
আমার মাথায় ঢোঁকে না ডাইনি বুড়ি, রক্ত পিপাসা, সেদিন বৃষ্টি ছিল এর মত ভৌতিক সিনেমা কিভাবে “সা” সার্টিফিকেট পায় ? ১১ বছরের কোন বাচ্চা যদি এইসব সিনেমা সিনেমা হলে গিয়ে দেখে ভয় পেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায় সেই দায়ভার কি সেন্সরবোর্ড নেবে ?
“নিরন্তর”, “নষ্টা মেয়ে”, “ঘেটুপুত্র কমলা” ইত্যাদির মত এডাল্ট বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত সিনেমা কিভাবে “সা” সার্টিফিকেট পায় ? ১৮ বছরের নিচের কোন দর্শক যদি এইসব সিনেমা সিনেমা হলে গিয়ে দেখে তবে তার মনে যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সেই দায়ভার কি সেন্সরবোর্ড নেবে ?
“ধর”, “শিকারী” ও ডিপজলের বিভিন্ন ভালগার সংলাপসম্পন্ন সিনেমা কিভাবে “সা” সার্টিফিকেট পায়? ১৮ বছরের নিচের কোন দর্শক যদি এইসব সিনেমা সিনেমা হলে গিয়ে দেখে বাস্তব জীবনে সেগুলো প্রকাশ করে তাহলে সেই দায়ভার কি সেন্সরবোর্ড নেবে ?
এছাড়া এমন অনেক বাংলাদেশি সিনেমা আছে যেগুলোতে চরম ভয়াবহ হত্যাকান্ড ও রক্তারক্তির দৃশ্য আছে, সেসব সিনেমা কিভাবে “সা” সার্টিফিকেট পায় ?
সিনেমার পুরো গল্প বা গল্পের কোন অংশ যদি কোন নির্দিষ্ট জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায় তবে সেন্সরবোর্ড উপযুক্ত কারণ দর্শীয়ে উক্ত সিনেমার কিছু অংশ কর্তন বা সম্পূর্ণ সিনেমা আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। বাংলাদেশে সেন্সরবোর্ডে এই ঘটনা অহরহ দেখা যায়। তবে বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সেন্সরবোর্ড অনেক উদার হয়েছেন। অথচ বাংলাদেশের সেন্সরবোর্ড কিছু ব্যাপারে উদার হলেও রাজনৈতিক ব্যাপারে সিনেমার কোথাও একটু উনিশ-বিশ হলেই চরম কঠোরতা প্রদর্শন করেন। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে এই দেশের চলচ্চিত্র শিল্প কেয়ামত পর্যন্ত মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না।
অনেক আশা দিয়েছেন। দয়া করে এবার “সেন্সরবোর্ড” বাদ দিয়ে “বাংলাদেশ ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড” চালু করুন।