‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ নিয়ে যা বলছেন হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’কে চলচ্চিত্রে রূপ দিতে সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন অমিতাভ রেজা; কিন্তু দৃশ্যধারণ শুরুর আগেই সিনেমাটি নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত জানালেন তিনি। ফিরিয়ে দিচ্ছেন সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের প্রথম কিস্তি। তিনি জানান, হুমায়ূন পরিবার থেকে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা মেনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে পারছেন না।
বিষয়টি স্বীকারও করেছেন হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিশীল কাজের অন্যতম দুই সুবিধাভোগী লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও প্রথম পক্ষের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন।
২০২০-২১ অর্থবছরে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয় পেন্সিলে আঁকা পরী। প্রায় দশ বছর ধরে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ নিয়ে কাজ করছিলেন অমিতাভ। পরিচালনার পাশাপাশি মেহেজাবীন রেজা চৌধুরী ও আসাদুজ্জামানের সঙ্গে প্রযোজনার দায়িত্বেও ছিলেন ‘আয়নাবাজি’ অমিতাভ রেজা। চিত্রনাট্য লিখেছেন রঞ্জন রব্বানী।
প্রথমে মতানৈক্যের বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও পরে ছড়িয়ে পড়ে টাকা-পয়সা বিষয়েই এ জটিলতা।
অমিতাভ রেজা চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও সন্তানদের সমন্বয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়েছে। স্যারের (হুমায়ূন আহমেদ) কোনো উপন্যাস বা অন্য কিছু্র কপিরাইটসহ সার্বিক বিষয়গুলো দেখছে। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি— ট্রাস্ট থেকে ওই উপন্যাসের লেখার স্বত্ব তথা কাহিনীর স্বত্ব বাবদ বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর রেভিনিউ শেয়ারও (চলচ্চিত্রের আয়ে অংশীদারিত্ব) চেয়েছে। আমার পক্ষে এই ব্যয় এই মুহূর্তে বহন করা সম্ভব নয়।’
তবে কাহিনি স্বত্ব বাবদ অর্থ বা রেভিনিউ শেয়ারের অঙ্ক শেয়ার করেননি তিনি। তবে বিষয়ে বাজারে থাকা গুঞ্জনের সূত্র ধরে টাকার অঙ্ককে ‘অবিশ্বাস্য’ বলছেন সবাই।
বিষয়টি নিয়ে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরাও স্পষ্ট করে মুখ খোলেননি।
বিশেষ করে হুমায়ূনের ছেলে নুহাশ যিনি অমিতাভ রেজার তত্ত্বাবধানে ‘হোটেল অ্যালবাট্রস’ নাটক দিয়ে লাইমলাইটে আসেন তিনিও এড়িয়ে যান। নুহাশ হূমায়ূন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। শর্তাবলির বিষয়ে আপনারা অমিতাভ ভাইকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’
অন্যদিকে প্রয়াত লেখকের স্ত্রী শাওন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ‘উনার সঙ্গে চুক্তি হওয়ার সময় সবগুলো বিষয়ে উনি একমত হতে পারেননি বলেই উনি ছবিটা করছেন না। সবকিছুতে মেলেনি। আমরা যে রকম ভেবেছিলাম আবার পারিবারিক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেটার সঙ্গে মেলেনি; সেজন্য করতে পারছেন না।’
২০২০-২১ সালের অনুদানের ঘোষণার পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা। কিন্তু অমিতাভের সরে আশায় তারা হতাশ। তারা অমিতাভের সঙ্গে সমব্যথী। তবে সে হতাশা হুমায়ূনের সৃষ্টিশীল কাজের সুবিধাভোগীদের কতটা স্পর্শ করেছে সেটাও ভাবছেন অনেকে।