‘পেশাগত কারণ ছাড়া কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই’, তবুও রাজনৈতিক বিতর্ক!
পেশাগত কারণ ছাড়া কোনো কিছুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই— সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তোপের মুখে পড়ে এ কথা বললেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। মূলত শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নীরবতা ও পরবর্তী পরিস্থিতির বাঁক বদলের সময় তার মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক উঠে।
যখন আন্দোলন দানা বাধে তখন চঞ্চল চৌধুরী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর ১৭ জুলাই ফেসবুকে আবেগঘন বার্তা দেন তিনি। এ অভিনেতা লিখেছিলেন, ‘সমাধানের অন্য কোনো পথ কি খোলা ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? বুকের রক্ত না ঝরিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করা যেত না? যা ঘটে গেল, এটা যেমন মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়, বিষয়টা তেমনি হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক ও সভ্যতাবহির্ভূত।’
ছাত্র ও জনতার ২৩ দিনের আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা গত সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বঙ্গভবন থেকেই হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পর মন খারাপের খবর দিলেন দেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। জানালেন, তিনি মানসিকভাবে বেশ অস্বস্তিতে আছেন। কারণ, তাকে নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য লেখালেখির চর্চা হচ্ছে।
চঞ্চল চৌধুরী সেসব উল্লেখ করে নিজের ফেসবুক পেজ ও আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি চঞ্চল চৌধুরী বলছি। আমার নাম ব্যবহার করে কোনো বিদেশি/দেশি পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যদি কিছু লেখা হয়, তার দায় আমার নয়। কারণ, এখন পর্যন্ত আমি কোনো পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেইনি। আমি সাধারণ একজন শিল্পী। পেশাগত কারণ ছাড়া কোনো কিছুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার মায়ের চরম অসুস্থতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি সক্রিয় নই। দেশে শান্তি বিরাজ করুক, সকলের মঙ্গল হোক।’
ফেসবুকে এমন ঘোষণার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, কিন্তু ঘটেছে উল্টো। মন্তব্যের ঘরে নেতিবাচক মন্তব্যের ঢেউ।
পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি একজন শিল্পী। শিল্পীর বাইরে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। পেশাগত কারণ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। আমি আমার পোস্টে পরিষ্কার করছি। এদিকে এসব লেখা অনেকে পড়ে আমাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। ফোন করে খোঁজখবরও নিচ্ছেন। তাদের সবাইকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমি ভালো আছি। আমি চাই, দেশে শান্তি বিরাজ করুক।’
রাজনৈতিক বিষয় সম্পৃক্ততা নেই বললেও এর আগে মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন চঞ্চল চৌধুরী।
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টানা ১০ ম্যাচে অপরাজিত থাকা ভারতকে টেনে মাটিতে নামিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল।
এ সময় রোহিতদের হারে কেন বাংলাদেশে উৎসবের আমেজ, এমন প্রশ্ন রেখে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম কথা বলে চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে। যেখানে এই তারকা জানান, বাংলাদেশে ভারতবিদ্বেষী আছে। তবে এটা পুরো দেশের সামগ্রিক চিত্র নয়। একদল মানুষ ভারতের হারে খুশি হয়।
বাংলাদেশে কারা ভারতবিদ্বেষী এমন প্রশ্নে এই অভিনেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ আছে, যারা ভারতের সিনেমা ও খেলাকে সাপোর্ট করে। এ রকম প্রচুর আছে যারা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে স্বীকার করে। তবে কেউ কেউ আছে যারা এটা স্বীকার করে না। তারা বংশ পরম্পরায় ভারত বিরোধী। বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি। যারা বিপক্ষের শক্তি তারা পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে। ভারতকে পছন্দ করে না।’
বাংলাদেশে এ ধরনের বিভাজন সাধারণত একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই বেশি ব্যবহার হয়।
এছাড়া ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিএনপি বিরোধী একটি কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। ‘আর কত লাশ চান আপনি বেগম খালেদা জিয়া’ শিরোনামে ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিসেবী, প্রকৌশলী, আইনজীবী, নারী উদ্যোক্তা, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট প্রমুখ। সেই দলে সামিল ছিলেন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারানা হালিম, জাহিদ হাসান, সৈয়দ হাসান ইমাম, চঞ্চল চৌধুরী, নাদের চৌধুরী, কে এস ফিরোজ, গাজী রাকায়াত, জয়শ্রী কর, আফরোজা বেগম ও ঝুনা চৌধুরীর মতো পরিচিত মুখ।
ওই কর্মসূচিতে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দাবি শুধু একটাই। এটি শুধু আমাদের নয়, সারা দেশের মানুষের দাবি। দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, পেট্রলবোমা মেরে হাজার হাজার মানুষ পোড়ানো হচ্ছে, ঝলসানো হচ্ছে; তারা মারা যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ। পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে না। আমাদের স্বাভাবিক জীবন আমরা চাই। আমরা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সাপোর্ট করি না। এর প্রতিবাদ জানাতে এখানে আমরা এসেছি।’
ওই সময়ের ‘আগুন সন্ত্রাসের’ বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত। তৎকালীন সরকার ক্রমাগত বিএনপি নিয়ে বলে আসলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনের হামলায় কয়েকশ মানুষ নিহত হলেও খুব কম সংখ্যক তারকাই এ বিষয়ে শেখ হাসিনাকে দায়ি করেছেন। বরং বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে আলোচনা-সমঝোতার আহ্বান জানান তারা।