পোস্টারেই ঘুম হারাম করে দেয় ‘তোমাকে চাই’
ফার্স্ট ডের ফার্স্ট শোতে হাজির হয়ে গেছি ঢাকার পূরবী হলের সামনে সালমান-শাবনূরের ‘তোমাকে চাই’(২১/০৬/১৯৯৬) দেখবো বলে। এমনিতেই রেডিওর বিজ্ঞাপন তরঙ্গে বাজানো ছবিটির গান আর সংলাপ শুনে শুনে আগ্রহ তখন চরমে, তার ওপর আবার সালমান-শাবনূরেদের মতো তারকারা। এ যেন একেবারে সোনায় সোহাগা!
যাই হোক, মর্নিং শো হওয়ায় দর্শক স্রোতের কারণে হলের ব্ল্যাকাররাও স্রোতের মতো টিকিটের দামও দিয়েছে বাড়িয়ে। বলে রাখা ভালো, নব্বইয়ের শেষভাগ পর্যন্তও কিন্তু দারুণ দর্শকদের স্রোত থাকত প্রায় সব ছবির ক্ষেত্রেই। তবে সালমানের আলাদা ক্রেজের কারণে তার ছবির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ থাকতো তার সমসাময়িক নায়কদের থেকে সবার ওপরে। তাইতো সালমানের নতুন কোন ছবি মুক্তি পেলেই দর্শকদের ঢল নামতো।
যাই হোক, কাউন্টারে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে ব্ল্যাকেই চড়া দামে টিকিট কিনে বিনোদিত হতে বসে গেলাম মন মাতানো সব গান সঙ্গে চমৎকার এক গল্পের অসাধারণ প্রেম কাহিনির চিত্ররূপ ‘তোমাকে চাই’ দেখতে!
আজ হঠাৎ চমৎকার হল পোস্টারটি দেখে ছবি দেখার সুন্দর স্মৃতিটুকু মনে পড়ে গেল, যা দেখেছিলাম আজ থেকে ২৪ বছর আগে। আসলে একটি চলচ্চিত্রের আকর্ষণীয় কোন পোস্টার যে দর্শকদের হলে টেনে নিয়ে যায় তার উদাহরণ আগেও আমার অনেক পোস্টে বলেছি, যার উদাহরণ চাইলে আরও বহু দেওয়া যাবে। এ রকম বহু ছবিই আছে শুধু মাত্র পোস্টার দেখেই দর্শকেরা ছুটে গেছে ছবি ঘরে। ঠিক তেমনি এই ‘তোমাকে চাই’ ছবিটির চমৎকার আকর্ষণীয় পোস্টারটি দেখে যেন বহু দর্শকদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল, স্বয়ং আমার ক্ষেত্রেও সে-সময় ছবিটির প্রতি আলাদা একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
পোস্টারটি একটু লক্ষ্য করে দেখা যাবে ছবির প্রধান দুই তারকা সালমান-শাবনূরকে হাইলাইট করে পুরোটা পোস্টার জুড়ে তাদের তুলে ধরা হয়েছে। লাজে রাঙা শাবনূরের আঙুলে দুষ্টু-মিষ্টি এক ভালোবাসার আবেশ দিয়ে সালমান তার আঙুলে কামড়ে ধরে আছে। সেই ভালো লাগার পরশ যেন শাবনূরের সারা মুখে ফুটে উঠেছে লজ্জারাঙা লাল হয়ে। ঘাগড়া/চোলি ড্রেসে বরাবরই শাবনূরকে দারুণ আকর্ষণীয় লাগে, সঙ্গে পুরো পোস্টারে তার এমন উপস্থাপনে যেন বহু তরুণদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পোস্টারটির সৌন্দর্যও যেন আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আসলে সুন্দর আর নান্দনিকতার মাধ্যমেও যে একজন নারীকে আকর্ষণীয়ভাবে পর্দায় বা পোস্টারে তুলে ধরা যায় তার প্রমাণ হিসেবে ‘তোমাকে চাই’ স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ছবিটির চমৎকার কাহিনি ও সেই সঙ্গে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। পরিচালক মতিন রহমানের দক্ষ নির্মাণের কথা না বললেই নয়, দারুণ মুনশিয়ানা দেখিয়েছিলেন তিনি। প্রতিটি ফ্রেম যেন তিনি ধরে ধরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, যার কিছুই কমতি ছিল না সেখানে, যার যেখানে যতটুকু দরকার তাই যেন তিনি বসিয়ে দিয়েছিলেন সেলুলয়েডের ফিতায়। তাইতো আমরাও পেয়েছিলাম দক্ষ নির্মাণের মন মাতানো গল্পের চিত্ররূপ ‘তোমাকে চাই’!
আর হ্যাঁ, পুরো ছবিটিকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে ছবির সব কটা সুপার হিট মুগ্ধময় গানের গীতিকার সুরকার-জনাব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সাহেবের কাজকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয়।
উল্লেখ্য, ছবিটি ছিল অভিনেতা সালমান ও শাবনূর জুটির সপ্তম ছবি।