প্রচলিত স্টারডমের বাইরে হিট ‘পোড়ামন-২’
পোড়ামন ২
পরিচালক : রায়হান রাফি
শ্রেষ্ঠাংশে : পূজা চেরি, সিয়াম আহমেদ, বাপ্পারাজ, ফজলুর রহমান বাবু্, সাঈদ বাবু, আনোয়ারা, নাদের চৌধুরী, রেবেকা প্রমুখ।
উল্লেখযোগ্য গান : নাম্বার ওয়ান হিরো, ওহে শ্যাম, তুই চুল করে দে এলোমেলো ও কিছুদিন মনে মনে।
রেটিং : ৭.৭৫/১০
মুক্তি : ১৬ জুন ২০১৮ (ঈদুল ফিতর)
আজো আমাদের দর্শকদের টিপিক্যাল ধারণা ইমেজ কামানো হিট তকমার নায়ক-নায়িকা ছাড়া ছবি হিট করানো যায় না। কিন্তু না, এর বাইরেও আরো কথা আছে। ছবি হিট করাতে বা দর্শক টানতে ভালো নির্মাণ, ভালো অভিনয়, ভালো গল্প দরকার। গত ঈদের ছবি ’পোড়ামন-২’ প্রমাণ করে দিয়েছে।
ছবির নায়ক সিয়াম আহমেদের ব্যাকগ্রাউন্ড নাটক। প্ল্যাটফর্ম পাল্টানোর পর ইউটিউব কমেন্টবক্সেই হোক বা ফেসবুকের চলচ্চিত্র গ্রুপভিত্তিক ক্রিটিসিজমই হোক বারবার একটা কথাই জোর দিয়ে বলা হয়েছে ছেলেটি নাটক থেকে এসেছে তাই পারবে না ছবি হিট করাতে। অতঃপর নেগেটিভিটির বাতাস বইয়ে দেয়ার আয়োজন চলেছে। কিন্তু দর্শকের সিদ্ধান্ত দর্শকই নিয়েছে। ছবিটি অলরেডি পঞ্চম সপ্তাহ পার করছে। প্রেমের গল্পে নিজেকে প্রেমিকসত্তা থেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে। অমর নায়ক সালমান শাহর প্রতি যতটুকু সম্ভব সম্মান প্রদর্শন করতে পেরেছে। সিয়ামের অভিনয় হিরোইজমের প্রভাব থেকে বেরিয়ে চরিত্রের ডিমান্ড অনুযায়ী অনেকটাই হয়েছে। যার জন্য তাকে দর্শক গ্রহণ করেছে।
নায়িকা পূজা চেরি শিশুশিল্পী ছিলেন একসময়। তার সম্পর্কে দর্শকের জানাশোনা ছিল। তার প্রতিভা নিয়ে কারো সন্দেহ ছিল না অন্তত যারা তার সেই কাজগুলো দেখেছে। নায়িকাসুলভ টিপিক্যাল বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে সেও অভিনেত্রীর ইমেজ থেকে নিজেকে পোট্রে করেছে। বিশ্বাস বলে একটা কথা আছে যেখানে দর্শক চাইবে ছবির নায়িকাকে তার পারফরম্যান্সের সাথে একাত্ম করে তার মধ্যে ভবিষ্যতের বড় কিছু ভাবাতে সাহায্য করবে। অলরেডি সে আস্থাটিও অর্জন করতে পেরেছে পূজা।
ছবির গল্পের জায়গায় গ্রামীণ চিরকালের প্রেমের গল্পকে আবেদন যোগ করানো হয়েছে ট্র্যাজেডির মাধ্যমে। দর্শকের মনকে দুঃখী করে দিতে পারলে দর্শক ছবির প্রতি আকৃষ্ট হবেই। ছবির গল্পে এ শক্তিটা ছিল। হ্যাপি এন্ডিং ছাড়া ছবি জমে না ধারণাটা মিথ্যা হয়ে গেছে এ ছবিতে।
মাল্টিস্টারার কাস্টিং কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে ছবিতে। মাল্টিস্টারদের মধ্যে অনেকের স্টারডম থাকে সত্য তবে সেগুলো দিয়ে ওভারঅল সাফল্য আসে না যদি না ছবির নায়ক-নায়িকার রসায়ন জমে কিংবা গল্প টাচ না করে দর্শককে। রোমান্টিক দিয়ে শুরু করে ফ্যামিলি ড্রামা থেকে সোশ্যাল ড্রামা হয়ে ট্র্যাজেডি পর্যন্ত ‘পোড়ামন ২’ এর বিস্তার ঘটেছে। নায়ক-নায়িকা, বাবা-মা, বিশেষ চরিত্র (ফজলুর রহমান বাবু), খলনায়ক সব মিলিয়ে মাল্টিস্টারার হবার পরেও গল্প দিয়ে দর্শককে ধরে রেখেছে ছবি শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
গানের প্রভাব অস্বীকার করাটা হবে আস্ত বড় ভুল কাজ। সুতরাং, প্রশ্নই আসে না। ছবির গানের ভেরিয়েশনে সালমান শাহকে ডেডিকেট করে নির্মিত গান ‘নাম্বার ওয়ান হিরো’, সুন্দর লোকেশন ও রোমান্সে ‘ওহে শ্যাম’, বাস্তবতার ছাপ রেখে নির্মিত ‘তুই চুল করে দে এলোমেলো’, রোমান্টিকের বিপরীতে মাস্ট ইনক্লুড স্যাড সং ‘কিছুদিন মনে মনে’ সবগুলো মিলিয়ে ভারসাম্য রেখেছে। মিউজিক্যাল ছবি হয়ে উঠেছে এবং এ জাতীয় ছবি সাফল্য অতীতে পেয়েছে অনেক নজির হিশাবে। ‘পোড়ামন ২’-ও পেরেছে।
সমালোচনার জায়গা ছবিটি রাখেনি তা নয়, রেখেছে। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ছবির সাথে সাদৃশ্য অনেকেই পেয়েছেন। যদি সত্যিই গ্রহণ করা হয়ে থাকে থিমটি তবে আগেকার দিনের ছবির মতো ‘বিদেশি ছবির ছায়া অবলম্বনে নির্মিত’ লিখলে কাজটা ভালো হত। যেহেতু হয়নি তাই সমালোচনা হয়েছে। আবার শতভাগ প্রুভড হয়নি সোর্সটি তাই কথার পিঠে কথা থেকেও যায়।
দিনশেষে ‘পোড়ামন ২’ জাঁকজমকপূর্ণ প্রচলিত স্টারডমে ভরা আধিপত্য বজায় রাখা ছবি না হয়েও হিট হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই। দর্শকের মনে ধারণা পাল্টে গেছে কিংবা যাবে ধীরে ধীরে কারণ নতুন মুখ দিয়ে ভালো গল্প, ভালো অভিনয়, ভালো নির্মাণ ছায়াছবির এই ত্রিভুজ বন্ধন থাকলে ছবি সফল হবেই। আগামীতে এরকম ছবি যত সাফল্য পাবে ‘পোড়ামন ২’ উদাহরণ হয়ে থাকবে।