Select Page

প্রতিশোধে পথ হারায় গ্যাংস্টার

প্রতিশোধে পথ হারায় গ্যাংস্টার

Tumi-Aj-Hat-Dhoro

শুধু কি এটা ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’র ক্ষেত্রে সত্য। নাকি আমাদের জীবনেও। আমরা তো দিন দিন আরো প্রতিশোধপরায়ন হচ্ছি। এতে আর যাই থাক— বিচার বুদ্ধি খরচের বালাই নাই। আর তাই সিনেমা জীবনের চেয়ে বড় দৈর্ঘ্যের হতে গিয়েও পারে না! এই সিনেমার গল্পে যে সম্ভাবনা ছিল— খারাপ জগত থেকে পালায়া যেতে চায় নায়ক। কিন্তু ওই অংশে ফোকাস না করে পুরানা মেলোড্রামায় লেখক নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন। তাই আফসোস!

বাংলা সিনেমায় এটা পুরনো ধারা। নায়কের বংশ শুদ্ধ টান মারবে ভিলেন। এটাই ভিলেনকে ধ্বংস করার প্রধান রসদ। নইলে বাংলা সিনেমার সৎ পুলিশ অফিসারও ফুল ফোর্স অ্যাকশনে নামে না। কোনো কোনো সময় সেটা প্রতিশোধে রূপ নেয়। প্রতিশোধও নৈতিক বিচারে বা সামাজিক স্থিতাবস্থা বিচারে সুবিধাজনক কিছু নয়। এটা আমাদের বোঝা উচিত।

কোনো কোনো সিনেমার শেষ অংশে ‘নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না’ সংলাপ শোনা যায়। এ যুগের পরিচালকদের কাছে হয়ত ব্যাপারটা বেশ ক্লিশে— তাই এটাও থাকে না। কিন্তু খোদ গল্পটাই যে ক্লিশে তার কী হবে!

নানা বিচারে আমার কাছে আশিকুর রহমানের দ্বিতীয় সিনেমা ‘কিস্তিমাত’র চেয়ে প্রথম সিনেমা ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ আরামদায়ক লাগছে। তবে আলাদা করে বিচার করলে ততটা সন্তুষ্ট করে নাই। কারণ গল্পের ডেপথ নাই। অনেক অস্পষ্টতা আছে। কিন্তু ‘কিস্তিমাত’র গতানুগতিক কাহিনীটা নেন ঢালিউডের ফর্মুলা কাহিনীকার থেকে। সেই মেদবহুল গল্পের সঙ্গে আশিকুর একাত্ম হতে পারেন নাই বুঝা গেছে। এবারের সিনেমার গল্প আশিকুরের। ব্যতিক্রমী কিছু নয়, সিম্পল। কিন্তু আশিকুর যা লিখছেন বা ভাবছেন— হয়ত তা বানাতে পারছেন। কারণ এমন কিছু ডিল করতে দেখি নাই- যা তিনি পারেন না।

আশিকুর যে প্রজন্মের ছেলে তাদের চাহিদা নিত্য পাল্টে যাচ্ছে। পুরনো গল্পও খোল-নলচে বদলে বলা যায়। এই পরিশ্রমটুকু না করলেই নয়।

ভিজুয়ালি সিনেমাটি আকর্ষণীয়। যদিও গল্পের থিম ততটা ‘ডার্ক’ না, মানে হতে গিয়েও হয় নাই। তাই কালার কম্পোজিশন আলাদা মাত্রা দিলেও নতুন কিছু হয়ে উঠে নাই। মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লেগেছে। কিন্তু কিছু কিছু লোভ আসলেই সামলাতে হবে। কারো মাথায় ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ হওয়া মানে আক্ষরিকভাবে দেখাইয়া দিতে হবে এমন না। আবার কম বাজেট দিয়া বেশি বাজেটের কাজ দেখানোর ঝামেলাও কম নয়।

gangstar returns

অভিনয়ের কথা বললে সবাই মোটামুটি ভালো করছেন। অপূর্ব টাইগার রবির দৃশ্যগুলোর বৈপরীত্য সিনেমাটির প্রাণ। টাইগার রবির অভিনয়ের ধরন অতিপরিচিত, চরিত্রটা দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুললেও তাই বিরক্তিকর। এ ধরনের ভিলেন আর কতো দেখব! শেষের অ্যাকশন ভালো হলেও দ্বিতীয় অ্যাকশন দৃশ্যটা ততটা জমে নাই।

সিনেমার গান ও মিউজিক ভালো লাগছে। যদিও ‘তুমি আজ হাত ধরো’ ছাড়া কোনোটাই মনে থাকার মতো না। লোকেশনে চমৎকারিত্ব আছে। কিছু কিছু লোকেশনের ব্যবহার পুনরাবৃত্তিমূলক। এ বিষয়ে আরো সচেতনতা দরকার। আর গল্পের রাশ ধরে রাখার জন্য আরো টেকনিক খাটানো দরকার ছিল।

আশিকুর রহমানের সম্ভব অ্যাকশন সিনেমায় সাচ্ছদ্যবোধ করেন। তার সামনের সিনেমাগুলোও এ ঘরানার। ভিজুয়াল চাকচিক্যের বাইরে গিয়ে জমজমাট গল্পের কিছু আশা করছি তার কাছে। এ আশা করাই যায়!


Leave a reply