‘প্রথম আলো যদি বলে পুরস্কারটা দিয়েছি’, ছুড়ে ফেলবেন রিয়াজ
প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে কিছুদিন আগে পত্রিকাটি নিয়ে সরব হয়েছিল অনেকেই। যাদের মধ্যে ছিলেন ‘সরকারপক্ষ’ নেয়া একদল শোবিজ তারকা। প্রসঙ্গতই তাদের অন্যতম রিয়াজ আহমেদ। দৈনিক পত্রিকার নিবন্ধন জাতীয় কিছু না থাকা সত্ত্বেও নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এ নিয়ে অনেকে এই নায়কের ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ নিয়ে খোঁটাও দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন ‘মনের মাঝে তুমি’ সিনেমার নায়ক। সেখান থেকে নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে এরই মধ্যে নানা বিষয়ে কথা হচ্ছে। যেমন প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন―এটা আসলে কেন? আসলেই কি আপনি এটা চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রিয়াজ বলেন, বিষয়টা হচ্ছে এই স্বাধীনতা তো ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি, বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের অর্জন এই স্বাধীনতা। তার সারা জীবনের আত্মত্যাগের ফসল পাওয়া এই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার শত্রুরা স্বাধীনতার পর থেকেই ছিল বাংলাদেশে। বিভিন্ন রকম রং বদল করে ছিল। যার ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্ট মারা যান। এর পরও কিন্তু এই চক্র নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেই গেছে। আজকে এত বছর পরে এসেও কেউ যখন প্রশ্ন করে এই স্বাধীনতা দিয়ে কী করব, চালডাল বা মাংসের স্বাধীনতা চাই। স্বাধীনতার সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।
আপনি আমেরিকাতে যান বা যেকোনো দেশে যান দেখবেন প্রচুর মানুষ রাস্তায় কার্টন বিছিয়ে ঘুমায়, তারা কখনো দাবি করে না যে আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে কী করব। এমন প্রত্যেকটা দেশেই আছে। যখন দায়িত্বশীল পত্রিকা এমন সংবাদ করে তখন এটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ বলে মনে হয়। এ ধরনের সংবাদ কাম্য না, অন্তত স্বাধীনতাকে নিয়ে।
কিন্তু আপনি তাদের, মানে একাধিকবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন, আবার তাদের বিরুদ্ধেই মানববন্ধন করছেন―এমন কথা নিয়ে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি; নেতিবাচকটাই কিন্তু বেশি…
রিয়াজ বলেন, আমিও ফেসবুকে দেখেছি, রিয়াজ সাতটা মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন, উনি উপস্থাপনা করেছেন, তার পরও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে উনি কেন দাঁড়াচ্ছেন? আমার কথা হচ্ছে, প্রথম আলো আমাকে কোনো পুরস্কার দেয়নি। আমাকে পুরস্কার দিয়েছে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের দর্শকরা। আমার দর্শকরা তারকা জরিপের মাধ্যমে পুরস্কার দিয়েছে। সেটা প্রথম আলোর মাধ্যমে আমি পেয়েছি। এই পুরস্কারে প্রথম আলোর কোনো ক্রেডিট নেই। প্রথম আলো যদি বলে পুরস্কারটা আমি দিয়েছি, তাহলে সেটা আমি ছুড়ে ফেলে দেব। এটা আমাকে দিয়েছে আমার অডিয়েন্স, আমার দর্শক। তারা ভালো মনে করেছে, যোগ্য মনে করেছে। দর্শকরা যোগ্য মনে না করলে তো আমি প্রথম আলোর কাছ থেকে পুরস্কার পেতাম না।
তার পরও ধরলাম প্রথম আলোর কাছ থেকে পুরস্কারটা আমি পেয়েছি। বা প্রথম আলোই আমাকে পুরস্কারটা দিয়েছে। এখানে যদি আমি বলতে চাই, আমার বাবা যদি গলা টিপে আমার মাকে মেরে ফেলে, তাহলে কি আমি আমার বাবাকে ছেড়ে দেব? আমি বলব না যে আমার বাবা অন্যায় করেছে? তার বিরুদ্ধে মামলা করব না? কারণ আমার মা তো আমাকে জন্ম দিয়েছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশে কোনো ছাড় নয়, এই যে আমরা অক্সিজেন নিতে পারছি―এটার প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেওয়ার পক্ষে না আমি, সে যে-ই হোক না কেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে, বাবাকেও আমি ছাড় দিতে রাজি নই।
আপনি নাকি হালুয়া রুটির পক্ষে যান― এমন উল্টাপাল্টা নানা কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, এমন কোনো প্রসঙ্গ খেয়াল করেছেন কি? উত্তরে তিনি বলেন, আমিও দেখেছি ফেসবুকে কেউ কেউ বলেছে আমরা নাকি হালুয়া রুটির পক্ষে যাই। হালুয়া রুটি কথাটাকে আমি নোটেবল মনে করব এ কারণে, তারা ঠিকই বলেছে। তারা তাদের পূর্বপুরুষের কথা বলেছে। হালুয়া রুটি তাদের পূর্বপুরুষের প্রধান খাবার ছিল। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত, ডাল, মাছ বা আমরা মাছেভাতে, ডালভাতে বাঙালি। হয়তো তাদের বাংলাদেশি এনআইডি আছে, তাদের আত্মাটা বিলং করে ওই দেশে। যার ফলে তাদের মুখ থেকে বারবার ডালভাতের বদলে হালুয়া রুটি কথাটা চলে আসে। তাদের কথাতে আমার কোনো যায়-আসে না। তবে আমি মনে করি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, এখন মানুষের একটু বুঝেশুনে তারপর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা উচিত। হয়তো এটা আমাদেরই ব্যর্থতা।
আজকে স্বাধীনতা না হলে আমি রিয়াজ হিসেবে কখনো আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। আপনি সাংবাদিক হয়ে হয়তো আমাকে খুঁজতেন না বা সাংবাদিক হতে পারতেন না। এখানে উর্দু ভাষায় কথা বলতে বাধ্য করা হতো এবং আমরা সারা জীবন চাকরবৃত্তি করেই যেতাম। আমরা কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতাম না। যে দেশটি থেকে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সে দেশ থেকে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। এটি একটি অত্যন্ত অন্তর্দাহের ব্যাপার তাদের কাছে। স্বাধীনতার বিষয়ে যারা প্রশ্ন তুলবে তাদের সঙ্গে আমার কোনো আপস নেই।আমার জন্মদাতা পিতাও হলে আমি আপস করতাম না।