Select Page

প্রযোজকের অভিযোগ : অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও অপেশাদার আচরণ মিমের

প্রযোজকের অভিযোগ : অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও অপেশাদার আচরণ মিমের

শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ‘দাগ হৃদয়ে’ সিনেমার প্রচারণায় তিন তারকার কেউ উপস্থিত না থাকায় কিছুদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে ঢালিউডে। ছবির দুই নায়িকার একজন বিদ্যা সিনহা মিমের সাক্ষাৎকারের জবাবে ফেসবুকে তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন কাহিনিকার ও প্রযোজক কামাল আহমেদ।

‘একজন প্রযোজক ও কাহিনীকারের প্রশ্ন –
*****
আজ প্রথম আলোতে প্রকাশিত মীমের কথার প্রত্যুত্তরে পত্রিকাটি আমার মন্তব্য ছাড়াই মিমের মন্তব্য প্রকাশ করায় আমি আমার অবস্থান থেকে সবার জন্য আমার বক্তব্য তুলে ধরছি-

আমি যখন শিল্পীদের কাষ্টিং করি, বিশেষ করে বাপ্পি, মিম ও আঁচল প্রেত্যেকের প্রতিই আমার অনুরোধ ছিল তারা যেন রিলিজের সময় স্বতস্ফুর্ত অংশ নেয়। সবাই আমাকে আস্বস্তও করেছিল। এই তিন শিল্পীর কারো পেমেন্ট ডিমান্ড নিয়ে আমি দর কষাকষি করিনি।

পরবর্তীতে প্রথম লটের শুটিং শুরু হলে বাপ্পি তার ব্যাক্তিগত কারনে একাধিকবার শুটিং স্পট থেকে চলে এসেছিল। পরের লটে বৃষ্টির কারনেও একাধিকবার আমরা শুটিং প্যাক আপ করে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। এসব কারনে আমার প্রচুর টাকা নষ্ট হয়েছিল। ফলে ছবিটি যথা সময়ে সম্পন্ন হয়নি এবং সেই কারনেই রিলিজ দিতে এতটা দেরি হয়েছে।

মিমের সাথে আমার কন্টাক্ট অনুযায়ী সম্পূর্ণ পেমেন্ট করা ছিল শুটিং শেষ হওয়ার আগেই। যখন বাকি শুটিংয়ের ডেট চাওয়া হলো সে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা অতিরিক্ত দাবী করলো। টাকা ছাড়া সে শুটিং ডেট দিবেনা। আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলাম। শ্রীমঙ্গলে শুটিং করতে গেলাম। পরের দিন বাপ্পি অসুস্থ হয়ে পড়লো। তাকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে চিকিৎসরা করানোর পরও সে পরিপূর্ণ সুস্থ না হওয়ায় অসুস্থ শরীরে একদিন শুটিং করে ঢাকায় ফিরে আসে। এ নিয়ে বাপ্পির সাথে আমার কিছুটা ভুল বুঝাবুঝিও হয়েছিল। তার পরের দিনই মিমের শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার কথা ছিল। বাপ্পি ফিরে আসায় মিমের আর যাওয়া হল না।

পরবর্তীতে ডেট চাওয়া হলে মিম এডভান্স আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়া ডেট দিবেনা বলে বেঁকে বসে। তার আচরণ শিল্পী সুলভ ছিলনা। শিল্প ও চলচ্চিত্রের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। একজন শিল্পীর চলচ্চিত্রের প্রতি যে দরদ আমরা অনুভব করি, তা তার মধ্যে দেখা যায়নি। তার এই আচরণে আমি বিস্মিত ও মনঃক্ষুণ্ন হই। শিল্পীর এমন আচরণে আমি চলচ্চিত্রটি রিলিজ করার প্লান থেকেই সরে আসি। পরবর্তীতে অন্যান্যদের অনুরোধে রিলিজ দিতে সম্মত হয়।

ছবিটি লক করার আগের সপ্তাহে মিমকে ডাবিং করতে আসার জন্য অনুরোধ করি। সে ডাবিং করবেনা বলে জানিয়ে দেয়। আমি তাকে ডাবিং না করলেও ছবিটি একবার দেখে যেতে অনুরোধ করি। সেটাও সে করেনি। আমি বাধ্য হয়ে ছবিটি ওই অবস্থায় রিলিজ করি।

একজন শিল্পীকে বেশি পেমেন্ট করা বা অতিরিক্ত পেমেন্ট করা যেতেই পারে, কিন্তু সেটার জন্য শিল্প ও চলচ্চিত্রের প্রতি দায়িত্ববোধ ও ন্যায়পরায়নতার মাধ্যমে ভালবাসা অর্জন করতে হয়। যেটা আমি মিমের মধ্যে পাইনি।

রিলিজে ছবিটি হলে পাঠানোর আগে প্রচারণার জন্য আবার তার সাথে কথা হয়। সে আবারো অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ছবিটি কি শুধু আমারই, তোমাদেরও না ? ঠিক আছে টাকা দিবো, তুমি পাবলিসিটি ঠিক মতো করো, বিপিএল খেলা হচ্ছে, ওখানে একবার সবাই যাবো।” সে বলল, আমি শুধু টিভি চ্যানেলে যাবো, আর কোথাও পাবলিসিটি করবো না, অন্য কোন ছবিতেও আমি করিনি।” কথাটা শুনে এতটাই বিস্মিত হলাম যে আর কিছু না বলেই কথা বন্ধ করে দিই। বই মেলাসহ অফ লাইনে প্রায় ১৫/২০ দিন আগে থেকে মেগা পাবলিসিটির প্লান ছিল। যেহেতু আঁচল ও মিম নাই, আমি পাবিলিসিটি থেকে সরে আসি।

একটি ছবিতে কিছু কিছু শিল্পী চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় যেমন আচরণ করে ছবিটির পোষ্ট প্রডাকশন চলাকালীন ও রিলিজের সময় তারা ঠিক তার বিপরীত আচরণ করে। এমন কথা অনেক প্রযোজক ও পরিচালক আমাকে বলেছিল। আমি মিমের মাধ্যমে তার প্রমাণ পেলাম। শিল্পীরা যদি মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য শুটিং, ডাবিং, পাবলিসিটি থেকে দূরে সরে গিয়ে হীন মনমানসিকার পরিচয় দেয়, তাহলে একজন প্রযোজক বিনা লাভে কোটি টাকা লগ্নি করে কেন চলচ্চিত্র বানাবে ? আমি বিশ্বাস করি, প্রযোজকরা মূলত শিল্পকে ভালবেসেই চলচ্চিত্র বানাতে আসেন, তাদের প্রতি এমন আচরণ চলচ্চিত্রের জন্য মঙগ্ল বয়ে আনবে না।

****
কামাল আহমেদ
প্রযোজক ও কাহিনীকার
দাগ হৃদয়ে’

এর আগে প্রচারে না থাকার ব্যাপারে মিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রচারণায় অংশ নিতে চেয়েছি। কিন্তু প্রযোজকের প্রতিশ্রুতি ঠিক না থাকার কারণে প্রচারে নামিনি। তার কাছে পারিশ্রমিক বাবদ কিছু টাকা বকেয়া ছিল। প্রচারের আগে তা পরিশোধ করার কথা ছিল। পরে আমাকে জানিয়েছেন, তিনি তা দিতে পারবেন না।’

প্রচারের কারণে একটি ছবি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পেলে তো শিল্পী ও প্রযোজক—উভয়ই লাভবান হন। সে ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে নিজের ছবির প্রচার কি শিল্পীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে? জানতে চাইলে মিম বলেন, ‘অবশ্যই পড়ে। ছবির প্রযোজক সিনেমার প্রচারণার জন্য আলাদা শিডিউল প্রস্তুত করবেন, শিল্পীরা সেই অনুযায়ী প্রচারাভিযানে অংশ নেবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, ছবি মুক্তির আগে প্রযোজকদের সঠিকভাবে প্রচারের বিষয়ে পরিকল্পনাই থাকে না।’


Leave a reply