Select Page

প্রসঙ্গ: মেড ইন বাংলাদেশ

প্রসঙ্গ: মেড ইন বাংলাদেশ

রুবাইয়াত হোসেনেরআন্ডার কনস্ট্রাকশন’-এর রয়া বা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এর শিমু। এদের হয়তো আমরা মাঝে মাঝে দেখি। দূরে থেকে দেখি। এমন না যে, এ দেখাটা দিয়া তাদের জানি। বা যতটা জানি মনে করি, ততটা আসলে জানি না।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখতে দেখতে এই ভাবনা এলো। সে জায়গা থেকে ক্যারেক্টারগুলা কী কী করে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। যদি সেভাবে বিষয়টা দেখানো হয় আরকি। রুবাইয়াতের ‘মেহেরজান’ (পুরো দেখি নাই)-সহ ধরলে একটা আত্ম-আবিষ্কারের গল্প আছে। আলাদা আলাদা জায়গা থেকে। রয়া ও শিমুর দ্বিধা থেকে একাগ্রতা। দুইটা আলাদা জিনিস বটে। শ্রেণিগত জায়গা থেকেও। সোসাইটিতে দায়ও ভিন্ন তাদের। কিন্তু ওই আবিষ্কারের জায়গা, আর নিজেদের গল্পের মূল চরিত্র হয়ে উঠার মধ্যে একটা মিনিং আছে। যেখানে আমরা সাধারণ দূর থেকে দেখা মানুষকে আলাদা করে চিনতে পারি না, সে জায়গায়ও (ইভেন আমাদের নিজেদের কাছের মানুষদেরও চিনতে পারি না)।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখার ডিলেমা হলো একটা খুবই বাস্তবিক জায়গা থেকে ছোট ছোট ডিটেইলস নিয়া তৈরি। এতটা বাস্তবে থাকা অস্বস্তির বটে, এ কারণে যে এ সব অনেক ক্ষেত্রে দেখেও না দেখার ভান করি। আবার এ ছবি একটা বড় গল্পকে ছোট স্পেসের মধ্যে যথেষ্টভাবে দেখানোর একটা ভালো উদাহরণ। রুবাইয়াতের ভঙ্গিও এমন। দুটো সিনেমা তার চিত্রভাষ্য সম্পর্কে এমন ‘সৎ’ ধারণাই দেয়। আর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এর যেখানটাই শেষ, সেখানে ‘বাস্তবিক’ বলতে নৈতিক ও ভালোমানুষি একটা ব্যাপার যা মূলত এ সমাজে হার মানার নামান্তর তার বিরুদ্ধে একটা চ্যালেঞ্জ আছে। মানে যেভাবে শিমু তার দাবি আদায় করে নেয়। তবে এ দেশের প্রতিষ্ঠিত অনাচারের বিরুদ্ধে, ক্ষমতা বিরুদ্ধে পাল্টা ক্ষমতার একটা উদাহরণ। এটাও ভালো। বিশেষ করে শিমুর মধ্যে কর্তব্য ও অধিকারবোধ নিয়ে একটা রূপান্তর ঘটে, এটা দিয়া একটা গুড ফিলিং জাগে।

 

পোশাক শ্রমিকদের নিয়া ‘গার্মেন্টস কন্যা’ নামের একটা ছবি দেখছিলাম অনেক বছর আগে। সেখানে গার্মেন্টস কন্যা তার নায্য দাবি নিয়া লড়ে। বাট, এফডিসির ফর্মূলা মতে, গার্মেস্টস মালিকরা খারাপ না, মূলত ম্যানেজার টাইপের লোকগুলায় শয়তান। ‘শ্রমিক নেতা’ সম্ভবত এ নামের ছবিতেও ব্যাপারটা এমন কিছু ছিল। শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘পালাবি কোথায়’ ও এই অপবাদ থেকে মুক্ত নয়। (আবার ‘রানা প্লাজা’ নামের ছবি সেন্সর পায় নাই। নামটাই তো যথেষ্ট নাকি)।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ এ সবের পরোয়া করে নাই। বা করা লাগে নাই (এ ছবি সেন্সরও পাই নাই। বিদেশে বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে সবচেয়ে বেশি হল পাইছে)। তার ছোট ছোট দৃশ্যের মধ্যে মালিক থেকে বিদেশি ক্রেতা সবার সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়, যেটা আমরা জানি বলেও দাবি করি। এবং মেনে নিই, এমনই হবে। এই মেনে নেওয়ার বিরুদ্ধে একটা চ্যালেঞ্জ বটে। আর এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এনজিও’র আপা নয়, সচেতন কর্তা হয়ে উঠছেন শিমু, তার শ্রেণির মধ্য থেকে। এগুলা গুড ফিলিং তৈরি করে হয়তো। তবে পুরো জার্নি যে, অদেখা একটা জগত নিয়া অস্বস্তি নিয়া তৈরি অস্বীকারের উপায় নাই। বা, এ বিষয়গুলা নিয়ে আমরা এত নির্লিপ্ত যে, যথেষ্ট ধাক্কা মারে। এমন একটা ছবি দেখা ভালো অভিজ্ঞতা।

এটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া মাত্র।


Leave a reply