‘প্রিয়তমা’র ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়
সিনেমা হলে দেখার সুযোগ না করতে পারলেও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপের বদৌলতে মাত্র ১৮ টাকায় ‘প্রিয়তমা’ উপভোগ করলাম। কেমন লাগলো?
হিমেল আশরাফের প্রথম সিনেমা ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ হলে দেখেছিলাম। খুবই দুর্বল গল্প ও মেকিং ছিলো। ‘প্রিয়তমা’য় মেকিংয়ের দিকে হিমেল আশরাফ কিছুটা উন্নতি করতে পারলেও স্ক্রিপ্ট ও ভালো ফিল্মমেকিং সম্পর্কে তিনি এখনো অনেকটাই অজ্ঞ।
#স্পয়লার_অ্যালার্ট
সিনেমার গল্প শুরু ছন্নছাড়া বেকার যুবক সুমনকে নিয়ে। সুমন তার বড় ভাইয়ের খুব কাছাকাছি থাকে ও ভাইয়ের টাকায় ফুটানি মারে। তো একদিন কুরবানির পশুর হাটের ইজারা নিয়ে ভাইয়ের সাথে কিছু লোকের ঝামেলা হলে সুমন তাদের কেলিয়ে বিদায় করে। তো তারপর ঈদের গান শুরু হয়। কিন্তু গানের পর বোঝা যায় যে ঈদের গান হয়েছে ঠিকই কিন্তু ঈদ এখনো আসেনি। চিত্রনাট্যে ঘাপলা ও গান প্লেসমেন্টে ভুল।
একদিন সুমনের ভাইকে চট্টগ্রাম যেতে হয় একটা জরুরি কাজে। পথে এক্সিডেন্টে মারা যায় সে। তবে সুমন খুব জ্ঞানী, সে আত্মবিশ্বাসী যে ভাইকে খুন করা হয়েছে। হোয়াট আ কনফিডেন্স ও চিত্রনাট্য! তো সে ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ আর পাওনা টাকা বুঝে আনতে গিয়ে এক মেয়ের সাথে প্রেমপিরিতি শুরু করে। তো এভাবেই চলতে থাকে সিনেমার কাহিনি…
লাস্ট ২০-২৫ মিনিট ছাড়া ‘প্রিয়তমা’র আর কোনো পজিটিভ কিছু খুঁজে পেলাম না। এইটা পুরোদস্তুর বাংলা গতানুগতিক বাণিজ্যিক ধারার ফর্মুলা চিত্রনাট্য, যা আমরা অতীতেও দেখে এসেছি। ‘প্রিয়তমা’র চিত্রনাট্য খুবই সাধারণ, এমনকি নির্মাতা মূলত কী দেখাতে চেয়েছেন তাতেই ক্লিয়ার ছিলো না।
এই অহেতুক ভিলেনকে মেরে সব উড়িয়ে-ফুড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু আবার সেই শাকিব খানই পুলিশের কাছে শেল্টার চাচ্ছে। চিত্রনাট্যে অনেক কিছুই খাপছাড়া। তার ওপর সম্পাদনার অনেক জায়গায় চোখে লাগছিলো। টেকনিক্যাল দিকেও খুব বেশি ভালো না। সিনেমাটোগ্রাফি মোটামুটি ছিলো, সম্পাদনা আরও বেটার হতে পারতো, কন্টিনিউটি ব্রেক ছিলো কিছু দৃশ্যে। অ্যাকশনে নতুনত্ব নেই।
প্রিন্স মাহমুদের ‘ঈশ্বর’ গানটা ছাড়া বাকি গানগুলো ভালো না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও খুব একটা ভালো হয়নি। সাউন্ড ডিজাইন দূর্বল।
ফারুক হোসেনের লেখা গল্পটা মোটামুটি ভালোই ছিলো। কিন্তু চিত্রনাট্যে ঝামেলা হয়েছে। তার ওপর এত অল্পদিনে ছবি শ্যুট করা হয়েছে ঈদে রিলিজ দেওয়ার জন্য, যে কারণে এক্সিকিউশন ভালোভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রি-প্রোডাকশন ও পোস্ট প্রোডাকশনে।
সিনেমায় অনেকগুলো নেগেটিভ বিষয়ের মধ্যে দুয়েকটা পজেটিভ দিক হচ্ছে ইধিকা পাল ও শাকিব খানের কেমিস্ট্রি। তাদের অভিনয় অনেক জায়গায় যেমন ভালো লেগেছে তেমনি তাদের কেমিস্ট্রি ভালো ছিলো। শহিদুজ্জামান সেলিমের অভিনয়ও ঠিকঠাক লেগেছে।
পরিশেষে এইটুকু বলতে চাই, ‘প্রিয়তমা’ একটা ঠিকঠাক গল্পের দূর্বল মেকিং ও চিত্রনাট্যের সিনেমা। যার ফার্স্ট দুই অ্যাক্ট যা-তা এবং থার্ড অ্যাক্ট ভালো।
আরশাদ আদনান এই টিমকে নিয়ে আবার প্রযোজনার ঘোষণা দিয়েছে, ‘রাজকুমার’। আশা রাখি এ সিনেমায় হিমেল আশরাফ মেকিং ও চিত্রনাট্যের দিকে খেয়াল করবে। যাতে এই সিনেমার ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়।
আইএমডিবি রেটিং: ৫.১০
আমার রেটিং: ৫/১০ (শুধু শেষাংশ ও শাকিব-ইধিকার রসায়নের জন্য)