Select Page

প্রিয় পরিচালক মনোয়ার খোকনের কথা

প্রিয় পরিচালক মনোয়ার খোকনের কথা

আমাদের বাণিজ্যিক ছবির অন্যতম প্রধান একজন পরিচালক মনোয়ার । তিনি নিজস্বতার ছাপ রেখে তাঁর ছবিগুলো নির্মাণ করেছিলেন। অনেক পরিচালকের ভেতর থেকেও তাঁকে আলাদা করা যায় তাঁর ছবি দিয়ে।

পরিচালক মনোয়ার খোকনের জন্ম ৭ মার্চ ১৯৫৬, কুষ্টিয়ায়।

যোগ্য গুরুর যোগ্য শিষ্য মনোয়ার খোকন। বাণিজ্যিক ছবির মাস্টারমেকার নামে পরিচিত পরিচালক এ জে মিন্টুর ছাত্র ছিলেন তিনি। এ জে মিন্টু-র ‘লালু মাস্তান’-সহ আরো ছবিতে প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন। নিজে ‘মায়ের দোয়া’ ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রথম পরিচালিত ছবি ‘লক্ষীর সংসার’ (১৯৯২)।

উল্লেখযোগ্য ছবি :
স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ, ঘাত প্রতিঘাত, জ্যোতি, সংসারের সুখ দুঃখ, গরিবের রাণী, জিদ্দি, একটি সংসারের গল্প, স্বপ্নের পুরুষ, ক্ষত বিক্ষত, প্রেম সংঘাত, খুনি শিকদার, পাওয়ার, ব্যাডসান, মায়ের হাতের বালা, কসম বাংলার মাটি।

মনোয়ার খোকনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তিনি তাঁর গুরু এ জে মিন্টু-র কাছেই আয়ত্ত্ব করেছিলেন। মিন্টুসাহেব যেমন সব ধরনের দর্শকের জন্য ছবি বানাতেন, ছবিকে সব ধরনের উপাদানে জমজমাট করে তুলতেন মনোয়ার খোকনও তাই করতেন। তাঁর ছবিও সব ধরনের দর্শকের জন্য সহজে রিলেট করার মতো ছিল।

তাঁর ছবিতে বিষয়বৈচিত্র্যের সাথে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, নারীর বাস্তবতা, অপরাধ, শাস্তি ইত্যাদি ফুটে উঠেছে। ফ্যামিলি ড্রামার সাথে অ্যাকশনকে মিলিয়ে জবরদস্ত ছবি ‘স্বামী কেন আসামী, ঘাত-প্রতিঘাত, জিদ্দি’, অ্যাকশনে ‘পাওয়ার, ক্ষত বিক্ষত, ব্যাডসান’, নারীর সামাজিক বাস্তবতায় বক্তব্যধর্মী ‘মেয়েরাও মানুষ, গরিবের রাণী’, লেডি অ্যাকশনে ‘জ্যোতি’, পুরোদস্তুর ফ্যামিলি ড্রামায় ‘সংসারের সুখ দুঃখ, একটি সংসারের গল্প’, রোমান্টিক ড্রামায় ‘স্বপ্নের পুরুষ, প্রেম সংঘাত’, অপরাধ ও শাস্তির সামাজিক বক্তব্যে ‘খুনি শিকদার’ এভাবে তিনি ডাইমেনশনাল ডিরেক্টরে পরিণত হন।

তাঁর ছবিতে জসিম-শাবানা জুটির একটা শক্ত অবস্থান ছিল। এর বাইরে মৌসুমী-ওমর সানী জুটিও তাঁর ছবির জুটি ছিল। টলিউডের ঋতুপর্ণা ও বলিউডের চাঙ্কিপাণ্ডে-কে প্রথম তাঁর ছবিতেই দেখা যায় প্রথমে ‘স্বামী কেন আসামী’ এবং পরে ‘মেয়েরাও মানুষ’ ছবিতে। শাকিব খানের ক্যারিয়ারে অভিনয়ের দিক থেকে প্রশংসিত ‘খুনি শিকদার’ ছবিটি তাঁরই পরিচালনায় ছিল। জসিমকে যেমন দুর্দান্ত অ্যাকশন নায়কে তিনি দেখিয়েছেন শাবানাকে ড্রামাটিক পার্টে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। মৌসুমী, শাহনাজকে নায়কের থেকেও বেশি গুরুত্বে তুলে ধরেছেন গল্প ও অভিনয়ের জোরে ‘গরিবের রাণী, জ্যোতি’ ছবি দুটিতে। শাকিব খান-কে ক্যারিয়ারের প্রথমদিকেই তিনি সম্ভাবনাময় করে দেখিয়েছেন ‘খুনি শিকদার’ ছবিতে। একজন আর্টিস্টকে তুলে ধরার বিশেষ এই দক্ষতা মনোয়ার খোকনের ছিল। তিনি শেষের দিকে অশ্লীল ছবিতে ঝুঁকেছিলেন এটা তাঁর ভুল ছিল।

মনোয়ার খোকনের ছবির গানও কালজয়ী এবং জনপ্রিয়। নির্বাচিত কিছু গান :
বাতাসটা এসে কি বলে গেল – স্বামী কেন আসামী
তুই আমার ছোটবোন – স্বামী কেন আসামী
মানুষ তো খেলনা নয় – স্বামী কেন আসামী
হাজার জনের মাঝে – মেয়েরাও মানুষ
নাই নাই নাই রে সারাদেশে নাই – ঘাত প্রতিঘাত
এক দুই তিন চার আমরা সবাই সবার – ঘাত প্রতিঘাত
পৃথিবীর জন্ম যেদিন থেকে – জ্যোতি
তুমি আমার জীবন প্রিয়া – সংসারের সুখ দুঃখ
হইয়াছে হইয়াছে ভূতের খবর হইয়াছে – সংসারের সুখ দুঃখ
চলার নামই তো জীবন – সংসারের সুখ দুঃখ
ও চাঁদ তুমি দূরে যাও – গরিবের রাণী
তুমি ডাকলেও আসি – গরিবের রাণী

তিনি দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতাসহ অন্যান্য রোগে ভুগে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

একজন মনোয়ার খোকন মূলত বাণিজ্যিক ছবির আদর্শ পরিচালক। তাঁর জমজমাট বিনোদনমূলক ছবিগুলোকে স্টাডি করলে আজকের পরিচালকরা শিখতে পারবে।


Leave a reply