প্রেক্ষাগৃহ সংকটে ঈদ চলচ্চিত্র
এখনো পর্যন্ত ঈদে মুক্তির জন্য তিনটি চলচ্চিত্র চুড়ান্ত হয়েছে। হল সংকটের কারণে নতুন কোন ছবি এতে যোগ হবার সম্ভাবনা কম। যদি তাই হয়, তবে এটা হবে ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন সংখ্যক। মূলত: ডিজিটাল-এনালগ রশি টানাটানিতে এই ছবিগুলো প্রেক্ষাগৃহ সংকটে ভুগছে।
বর্তমানে দর্শক ৩৫ মিলিমিটার অর্থাৎ এনালগ প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র দেখতে চায় না। কারণ এতে ঝাপসা ও দাগযুক্ত ছবি দেখতে এবং অস্পষ্ট শব্দ, শুনতে কষ্ট হয়। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র মুক্তি দিলে প্রতিটি প্রিন্ট বাবদ খরচ হয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। এজন্য নির্মাতারাও চান ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের ছবি মুক্তি দিতে। তাই বেশির ভাগ ছবি এখন ডিজিটালে নির্মিত হচ্ছে।
ঈদে মুক্তি চূড়ান্ত এম এ জলিল অনন্ত’র ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা‘, বদিউল আলম খোকন‘র ‘মাই নেম ইজ খান‘ এবং পি এ কাজল‘র ‘ভালোবাসা আজকাল‘ চলচ্চিত্র তিনটি ডিজিটাল প্রযুক্তিতেই মুক্তির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে চাহিদা মতো প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তি দিতে না পারার কারণে নায়করাজ রাজ্জাক ‘আয়না কাহিনী’ ঈদের দুই সপ্তাহ পরে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনি করে অনেকেই সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার পরও ঈদে ছবি মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
তিনটি চলচ্চিত্র ডিজিটালে মুক্তি দিতে গেলে কমপক্ষে আড়াই শতাধিক প্রেক্ষাগৃহের প্রয়োজন। কিন্তু এ প্রযুক্তির প্রেক্ষাগৃহ আছে মাত্র একশটি। আবার, এই একশটি প্রেক্ষাগৃহকে ডিজিটাল বলতে নারাজ নির্মাতারা। কারণ দুটি প্রযোজনা সংস্থা প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল ভিডিও প্রজেক্টর স্থাপন করে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছে।
একদিকে ভিডিও প্রজেক্টর অন্যদিকে রেড ক্যামেরা দিয়ে চিত্রায়নের নাম ডিজিটাল নয়। চলচ্চিত্রের পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ যদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা না হয় তাকে কোনোভাবেই ডিজিটাল চলচ্চিত্র বলা যায় না। পএক্ষেত্রে একমাত্র এমএ জলিল অনন্তই এগিয়ে আছেন। ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’য় ডিজিটালের পাশাপাশি এবার থ্রি ডি প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। ফলে ঈদে মুক্তি দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এ চলচ্চিত্রটি। কারণ একমাত্র বসুন্ধরা সিটি মলের স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়া অন্য কোথাও থ্রি ডি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সুযোগ নেই।
এদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়া মুক্তি দিচ্ছে তাদের চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা আজকাল’। ফলে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রেক্ষাগৃহগুলোর বেশিরভাগ থাকছে তাদেরই দখলে।
প্রদর্শক সমিতি জানায়, এ সমস্যার উত্তরণে তারা ঈদের আগে কমপক্ষে ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল সিনেমা প্রজেক্টর স্থাপনের চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টা সফল হলে ঈদে বাকি দুটো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। নির্মাতাদের দাবি এ মুহূর্তে দেশে কমপক্ষে চারশ প্রেক্ষাগৃহ পরিপূর্ণভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে চলচ্চিত্র ব্যবসা আবার মুখ থুবড়ে পড়বে।
এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসার জন্য সবাই দাবি করছেন। সরকারি উদ্যোগে, বিশেষ করে এফডিসি’র তত্ত্বাবধানে যদি প্রেক্ষাগৃহগুলো ডিজিটাল করা যায় তাহলে চলচ্চিত্র প্রযোজকরা শান্তিমতো ছবি মুক্তি দিতে পারবেন এবং এর জন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। চলচ্চিত্রের প্রায় সবাই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সুত্র: মানবজমিন ও বাংলাদেশ প্রতিদিন
ঈদের আগে কি আরো ৫০ টি হল ডিজিটাল হবে? আর পূর্ণ ডিজিটাল সিনেমা কবে দেখতে পাব?>