প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি নির্মাতা আমজাদ হোসেন
# শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন কিংবদন্তি পরিচালক আমজাদ হোসেন
# ব্যাংকেক বামরুনগ্রান হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি
# আমজাদ হোসেনের মরদেহ ঢাকায় আনতে দুই একদিন সময় লাগবে
# তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমণি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’
ভাত দে, গোলাপী এখন ট্রেনের মতো জনপ্রিয় সিনেমার নির্মাতা আমজাদ হোসেন আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আমজাদ হোসেনের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী আর চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
প্রয়াতের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেন। এদিকে টেলিভিশন নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক জানান, আমজাদ হোসেনের মরদেহ ঢাকায় আনতে দুই একদিন সময় লাগবে। কারণ, তার বড় ছেলে নির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ক’দিন আগেই ব্যাংকক থেকে দেশে এসেছেন। সেখানে ছোট ছেলে নির্মাতা সোহেল আরমান থাকলেও আজ (১৪ ডিসেম্বর) রাতে অথবা কাল (১৫ ডিসেম্বর) সকাল নাগাদ ব্যাংককে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দোদুলের।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। বাংলাদেশের বরেণ্য এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি।
২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আমজাদ হোসেন প্রখ্যাত নিউরোসার্জন টিরা ট্যাংভিরিয়াপাইবুনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নানা ধরনের কাজের জন্য সমাদৃত। একাধারে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা, প্রযোজনা, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে কাজ করছেন।
গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া শিশুসাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ একাধিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
আমজাদ হোসেন ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন।
তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’ (অসমাপ্ত) , ‘বাংলার মুখ (অসমাপ্ত)’, ‘শহীদ আসাদ’ (অসমাপ্ত), ‘নয়নমণি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ প্রভৃতি।