‘ফাতিমা’র নিঃসঙ্গ যাত্রা
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর,
চেয়েছিল মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী।
– নিঃসঙ্গতা, আবুল হাসান
‘ফাতিমা’ নিঃসঙ্গ এক মেয়ের যাত্রার ছবি যার জীবনে সে নিজেই একা যোদ্ধা। তার চারপাশের জগতকে ঘিরে সে যতই দাঁড়িয়ে যেতে চায় ততই বাস্তবতা তাকে ঘিরে ধরতে আসে কিন্তু লড়াই করাটা কখনো বন্ধ করে না সে। সংগ্রামী মেয়ের গল্প এ ছবি।
চলচ্চিত্র ও বাস্তব কি কখনো প্যারালাল হতে পারে? কিংবা বাস্তবে যত লড়াই চলছে চলচ্চিত্রে চরিত্রের লড়াইটিও তাকে প্রতিবিম্বিত করবে সমানভাবে এমনটি কি হয়? কখনো কখনো তো হয়। ‘ফাতিমা’-র বাস্তব গল্পে সিনেমার একটা আন্তঃসম্পর্কের যোগসাজশ আছে। দ্বৈত লড়াইয়ে ফাতিমার গন্তব্যটা কোথায়?
মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মাণের বাস্তবতা এবং এর প্রযোজনায় প্রযোজকদের থিংকিং লেভেল যে বাণিজ্যিক কিছু চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে এই বাস্তবতাকেও ‘ফাতিমা’ খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইসিস রূপে তুলে ধরেছে। নির্মাতা এটিকে হার্শ রিয়িলিটি হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন।
মিডিয়া জগতের প্রতিষ্ঠিত মানুষরা যারা ট্যালেন্টদের তুলে আনে এর পেছনের কদর্য গল্পগুলো অনেক দর্শকেরই জানা বা বোঝার মধ্যে আছে। ‘ফাতিমা’ ছবি এ বাস্তবতাকেও নতুন করে দেখিয়েছে।
তাসনিয়া ফারিণের প্রথম চলচ্চিত্রের গল্প যেমন স্ট্রং পাশাপাশি তার অভিনয়ও ছিল অসাধারণ। প্যারালাল স্টোরি টেলিংয়ের মধ্যে ফাতিমার মধ্যে আরো এক অস্তিত্বের গল্পকে ধারণ করে অভিনয় করাটা নিখুঁতভাবেই করেছে ফারিণ। আয়নার সামনে করা অভিনয়গুলোতে তার অভিনয়শক্তির একটা প্রমাণ পাওয়া যায়। ফারিণকে ইন্ডাস্ট্রির অ্যাসেট ভাবতে তখন আর কোনো বেগ পেতে হয় না। ন্যারেটর ফারিণও তার কণ্ঠের জন্য আকর্ষণীয়।
সুমিত সেনগুপ্তের চরিত্রটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এমনকি এবিএম সুমনও। ইয়াশ রোহানকে ক্লাইমেক্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় বাকিটা অত না। তারিক আনাম খান, শাহেদ আলী প্রয়োজনীয় চরিত্র। ‘ফাতিমা’ আগাগোড়াই তাসনিয়া ফারিণময় ছবি হয়ে উঠেছে।
নির্মাতা ধ্রুব হাসানের নির্মাণ ওভারঅল মানসম্মত।
‘ফাতিমা’ মেয়েদের সংগ্রামের গল্পে মাস্টওয়াচ এটুকু বলতেই হয়।
রেটিং – ৮/১০