Select Page

ফিল্মস্কুলের অভিজ্ঞতা

ফিল্মস্কুলের অভিজ্ঞতা

প্রায় এক বছর মুম্বাইয়ে সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে পড়া শেষ করে মাস দুয়েক হলো দেশে ফিরেছি। দেশে ফিরে একটি প্রশ্ন আমাকে অনেক শুনতে হয়েছে, এখনো শুনছি। প্রশ্নটি হলো— কেমন গেল এক বছর? সবার কাছে আমার উত্তর ছিল একই রকম, ‌‘it was an effective and quality year of my life.’  কথাটি শুধু বলার জন্যেই বলা নয়, এটা আমি মুম্বাইয়ে পড়ার সময় প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করেছি।

তো, এখন আসি ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা প্রসঙ্গে। আমি মনে করি সিনেমাটা একটা আলাদা ভাষা। এই ভাষাকে বুঝতে, জানতে হলে এর বর্ণ, শব্দ আপনাকে জানতেই হবে। সেটা কীভাবে আপনি জানবেন বা শিখবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। এবং আপনার জানাটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেটাও একটা বড় ব্যাপার। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সঠিকভাবে জানার জন্যই আমি ফিল্ম স্কুল বেছে নিয়েছিলাম। উল্লেখ্য, আমি ফিল্ম স্কুলে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই সিনেমাটোগ্রাফি চর্চা করে আসছি। ২০১১ থেকে নিজেকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করি, ২০১৫ পর্যন্ত নেটে পড়াশোনা, বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সিনিয়র সিনেমাটোগ্রাফারদের অ্যাসিস্ট করা থেকে শুরু করে ক্যামেরা ক্রু হিসেবে এবং স্বাধীনভাবে কিছু কাজের মাধ্যমে। এরপর ২০১৬ সালে ফিল্ম স্কুলে পড়তে যাই।

প্রাকটিক্যাল অর্থে এই কাজ করার অভিজ্ঞতা ফিল্ম স্কুলে আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। কীভাবে সাহায্য করেছে সেটা আমি একটু শেয়ার করতে চাই। ফিল্ম স্কুলে আপনাকে অনেক বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হবে, এত বেশি কিছু থাকে যে পুরো ব্যাপারটা মাঝে-মধ্যে খুবই জটিল মনে হয়। যারা একদমই নতুন তারা অনেক সময়ই বুঝে উঠতে পারে না, এবং অনেক সময় অন্যান্য পড়াশোনার মতো ফিল্ম স্টাডিটাও গুলিয়ে ফেলে।

[su_note note_color=”#ecf0f5″ text_color=”#ffffff” radius=”5″]

এই লেখাটি বিএমডিবি ঈদ সংখ্যা ই-বুক ২০১৭ এর অংশ। পুরো ই-বুক টি ডাউনলোড করুন এখানে

ডাউনলোড করুন[/su_note]

আমার উপলব্ধিও এমন— যদি আমি একদমই নতুন অবস্থায় ফিল্ম স্কুলে আসতাম তাহলে হয়তো বা এই পেশায় আমার থাকা হতো কিনা সন্দেহ! কিন্তু প্রাকটিক্যাল কাজের অভিজ্ঞতার কারণে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পেরেছিলাম দারুণভাবে। কতটুকু আমাকে গভীরভাবে নিতে হবে, আর কতটুকু হালকাভাবে তা প্রাকটিক্যাল কাজের অভিজ্ঞতাই বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। তবে এই ফিল্টারাইজেশনের ব্যাপারে দিন শেষে আমি কী করতে চাই সেটার ব্যাপারে ফোকাসড থাকারও একটা ফ্যাক্ট কাজ করে। তবে এই কিছুটা কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে প্রথমদিকে সামান্য হলেও সমস্যায় ফেলে দিয়েছিল।

প্রথমদিককার ক্লাসগুলোতে ভাবতে শুরু করেছিলাম এসব তো আমি জানিই, অ্যাডভান্স ক্লাসগুলোর অপেক্ষা করতাম। এরপর আমি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম ক্লাসের নির্দেশিত পথেই আমাকে আগাতে হবে, তারপরই প্রতিদিন জানা ব্যপারগুলো থেকেই ভুল শুধরাতে শুরু করি। সেটা দিন শেষে ঐ বিষয় সম্পর্কে জানা-শোনা আরো পোক্ত হতে শুরু করে। এবং ফিল্ম স্কুল শেষে আমার অনুভূতিটা ছিল এমন— ‌‌‘আহা এতদিন অন্ধ ছিলাম, একটু আলো পেয়েছি, এখন মরেও যে শান্তি পাবো… হা হা হা !’

এই বোধটা এসেছে প্রত্যেকটা দিনই নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি নিজের ভুলে ভরা জানার জগতকে শুধরানোর প্রাকটিস থেকে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আমাদের দারুণ অভিজ্ঞ সব শিক্ষকদের। তাঁরা প্রাকটিক্যালি শেখানোর পাশাপাশি, তাঁদের জীবনকে দেখার নিজস্ব স্টাইলটাও আমাদের সাথে শেয়ার করতেন এবং বারবার বলতেন, ‌‘তোমাকে কিন্তু তোমার মতো করেই জীবনকে দেখতে হবে, শিখতে হবে।’ আর এই ব্যাপারটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। জীবনকে যদি আপনি দেখতেই না শিখলেন বা পারলেন তাহলে কিসের সিনেমাটোগ্রাফি আর কিসের ফিল্ম মেকিং।

সবশেষে আমি বলব, ফিল্ম স্কুল শুধু আপনাকে বর্ণ পরিচয় পর্যন্ত দেখিয়ে দেবে, বুঝিয়ে দেবে এবং সাথে আপনার অ্যাপ্রোচটা ডেভেলপ করে দেবে। সেই জ্ঞান নিয়ে বর্ণ থেকে শব্দ, কিংবা শব্দ দিয়ে বাক্য গঠনের কাজে মুন্সিয়ানা আনতে হবে আপনার নিজের কাজের মাধ্যমেই। সাথে সাথে প্রচুর পড়তে হবে, ব্যাপারটা এমন না যে শুধু ফিল্ম নিয়েই পড়বেন। সব পড়তে হবে— রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ভূগোল, ইতিহাস সব। আর এই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই একটি দিকেই আমরা খুবই দূর্বল— পড়ি না বা পড়তে চাই না, যেটা খুবই দুঃখজনক।

আর হ্যা, অবশ্যই পাশাপাশি প্রচুর ফিল্ম দেখতে হবে, প্রতিদিন অন্তত একটি ফিল্ম দেখার অভ্যাস থাকা খুবই ভালো।


Leave a reply