ফেসবুক রিভিউতে ‘গহীন বালুচর’
আজ মুক্তি পেয়েছে বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘গহীন বালুচর’। দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছে সিনেমাটি। এবার জেনে নিন ফেসবুক প্রতিক্রিয়া।
সৈয়দ নাজমুস সাকিব লেখেন- ”কথায় বলে, শেষ ভালো যার- সব ভালো তার। সেই কথার প্রতিফলন পেলাম অনেকদিন পর। বছরটা শেষ করলাম চমৎকার একটি বাংলাদেশী সিনেমা দেখে। নাম গহীন বালুচর। প্রত্যাশার তুলনায় বেশি প্রাপ্তি পেয়েছি। একদম পিউর বাংলাদেশী গ্রামীণ সিনেমা যাকে বলে। গ্রামীণ বলতে আসলেই গ্রামীণ- অনেকদিন পর কোন সিনেমাতে ঢেঁকি, কুয়া, হারিকেন, কুয়াশা সুন্দর করে দেখলাম।
তিনজন নতুন মুখকে নিয়ে একটু ভয় ছিল- তিনজনই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভালো কাজ করেছেন। অবশ্য যে সিনেমাতে সুবর্ণা মুস্তফা আর রাইসুল ইসলাম আসাদ মেন্টর হিসেবে থাকবেন, সেখানে তো ভালো কাজ আসতে হবেই! ফজলুর রহমান বাবু বারবার প্রায় একই ধরনের ক্যারেক্টার রিপিট করছিলেন একটা সময়, এই সিনেমাতে পুরো উল্টো! পাঁড় মাতালের ভূমিকায় দারুণ অভিনয় করে দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছেন তিনি।
বিশেষ ধন্যবাদ ডিরেক্টর বদরুল আনাম সৌদ কে। পুরোটা সিনেমা তিনি দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে পেরেছেন নানান রকম টুইস্টস আর টার্নস দিয়ে। রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলোকে খুবই সুন্দরভাবে বড় পর্দায় তুলে এনেছেন তিনি। তার সিনেমাটা সিনেমাই হয়েছে, অন্য কিছু হয়নি। ভালো লেগেছে তার গল্প বলার ধরণ। খুবই খুশি হব যদি তিনি খুব জলদি তার পরের সিনেমার কাজে হাত দেন।
এই সিনেমার সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ হচ্ছেন সম্ভবত জিতু আহসান। ছোট পর্দার এই মানুষটি প্রথমবার সিনেমাতে অভিনয় করেছেন আর প্রথম বলেই বাউন্ডারি ক্রস যাকে বলে। এরকম একটা ট্যালেন্টকে আমরা কেন এতদিন সিনেমাতে ব্যবহার করিনি, সেটা ভেবেই অনেক বেশি আফসোস লাগছে। আশা করি তিনি সিনেমাতে নিয়মিত হবেন। দারুণ কাজ তার!
গহীন বালুচর হলে গিয়ে দেখুন । না দেখলে চমৎকার একটি বাংলাদেশী সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। গহীন বালুচর টীমকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি সিনেমা উপহার দেয়ার জন্য।”
মো. রমিজ লেখেন- “গহীন বালুচর এর রোমান্টিক দৃশ্য গুলো খুব সুন্দর। খুব সুন্দর লোকেশনে খুব সুন্দর ভাবে ছবিটা চিত্রায়িত হয়েছে। গল্প ও চিত্রনাট্য বানিজ্যিক ছবি হিসেবে বেশ ভাল। শুধু এন্ডিং টা একটু বেশী গতানুগতিক। আর সুবর্না মুস্তফার চরিত্রটা আননেসেসারিলি ড্রামাটিক।
তানভীর আর নীলা মুগ্ধ করেছে তাদের প্রতিটা শটে। মুনও দারুন ন্যাচারাল। ফজলুর রহমান বাবু মাতালের চরিত্র খুব খুব উপভোগ্য।
কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে এমন সুনির্মিত, সুঅভিনীত ছবিটির দর্শক একেবারেই নেই। জীবনে প্রথম এমন ভয়াবহ্ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। প্রথম ৫-৭ মিনিটে আমি একা ছিলাম শ্যামলীর ডিল্যাক্স এ!! আই সোয়ার টু গড স্রেফ একা ছিলাম। লাইটম্যান যখন আমাকে একা রেখে চলে গেল ভয়ে তখন আমার অবস্থা বেহাল!!
এর আগে একই টাইমে একই হলে এবং একই জায়গায় আইসক্রিম ছবিটা দেখেছিলাম ১৫-২০ জন দর্শক। তাতেই আমার মন খুব খারাপ হয়েছিলো। এবার তো সব রেকর্ড ব্রেক হলো। ছবি শুরু হওয়ার পর অবশ্য আরো ৪-৫ জন দর্শক এসেছিলো। উপর নিচ মিলিয়ে ১০-১২ জন দর্শক হয়েছে হয়তো।
এভাবে চললে ভাল ছবি নির্মান বন্ধ করা ছাড়া উপায় নাই। জহির রায়হান আফসোস করে বলেছিলেন আমি কি জানতাম যে এদেশে হীরার চেয়ে কাঁচের মূল্য বেশী !!
আসলেই তাই … আইসক্রিম কিংবা গহীন বালুচরের মত সুনির্মিত সুন্দর মুভির দর্শক নেই এদেশে। কারন এদেশের মানুষ ছবি দেখে পছন্দের নায়ক – নায়িকাকে দেখতে। ছবি ভাল হলো কিংবা মন্দ হলো তাতে তাদের কিছু যায় আসে না!
এভাবে চললে ভাল ছবিও হবে না, ভাল নতুন মুখও সূযোগ পাবে না। সারা জীবন বস্তাপঁচা ছবিই চালানো লাগবে হল গুলোতে।
যাইহোক, ছবি দেখে ভাল লেগেছে। তানভির, নীলা এবং মুন আমাকে মুগ্ধ করেছে। ফজলুর রহমান বাবু আবারো মন জয় করেছে। বাকিরা সবাই ভাল করেছে। রোমান্টিক দৃশ্যগুলো আর রোমান্টিক গানগুলো খুব খুব খুব ভাল লেগেছে।
বদরুল আনাম সৌদ নির্মাতা হিসেবে দারুন কাজ দেখিয়েছে। একেবারে পিউর বাংলাদেশী ছবি হয়েছে। ”
আবদুল্লাহ আল-মানীর মত, “গহীন বালুচর আসলেই বালুচরে আটকে দিলো বছরের শেষ দিকে এসে। নতুন তিন তারকার দেখা পেলো ইন্ডাস্ট্রি, সাথে বাংলাদেশ অর্থাৎ আমাদের গল্পের স্বাদ পেলাম। সিনেমার এন্ডিং যাস্ট মাইন্ড ব্লোয়িং।
বছরের শেষ টা ভালো হয়ে গেলো। এখন সময় সবাই মিলে সিনেমাটিকে সবার নিকট পৌছে দেবার।
ধন্যবাদ ‘গহীন বালুচর’ – একটি বদরুল আনাম সৌদ চলচ্চিত্র টিমকে সুন্দর একটি চলচ্চিত্র উপহার দেবার জন্য।”