Select Page

ফোক ছবির আদর্শ পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল

ফোক ছবির আদর্শ পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল

তোজাম্মেল হক বকুল বাংলাদেশী রোমান্টিক ফোক, ফোক ছবির আদর্শ নির্মাতা। তিনি অল্প ছবি নির্মাণ করেছেন কিন্তু সাফল্য অনেক।

তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবি। ইলিয়াস কাঞ্চন-অঞ্জু ঘোষের প্রেম ও বিরহ ছবির প্রাণ। আশির দশকে এই ছবি রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশী ছবিতে। ছবিটি এত প্রভাব বিস্তার করেছিল যে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় পর্যন্ত ছবিটির খোঁজ নিয়েছিলেন। এ ছবির নামে মেয়েদের চুড়ি, দুল, ফিতা এসব বিক্রি হত। সিনেমাহলে দীর্ঘদিন চলার কারণে অনেক ঘটনাও ঘটেছিল যার মধ্যে সিনেমাহলে এক নারীর বাচ্চা প্রসবের মতো বিরল ঘটনাও ঘটেছিল। পরে কলকাতায়ও ছবিটি নির্মিত হয়। ছবিটি নিয়ে ফোক প্যাটার্নে অনেক গবেষণাও হয়েছে।

বকুলের ‘বাঁশিওয়ালা’ ছবিটি ফোক ছবির অংশ। কাকের ব্যবহার এ ছবিতে ছিল ভয়ঙ্কর। ইলিয়াস কাঞ্চন তার গুরুর প্রতি খুব নিবেদিত। গুরুর চেহারা ছিল দৈত্যের মতো। কান দুটো ইয়া বড়। ছবির শেষের দিকে কাকের দল একটা বিদ্রোহ করে। কাক ঝাঁক বেঁধে উড়ে আক্রমণ করে শত্রুপক্ষকে। সিনেমাটি দেখার পর কাকের দল দেখলেই বিদ্রোহের ভয় করত আমাদের গ্রামের লোকজন। ছবির কস্টিউম ছিল রাজকীয়। আভিজাত্য ছিল। নূতনকে এমন গেটআপে বরাবরই মানাত। বাঁশির ব্যবহারে দারুণ কিছু নিয়ম কাজে লাগানো হয়েছে। কাঞ্চন-নূতন জুটির ‘নিশীথে নির্জনে গোপনে গোপনে করিব প্রেমের আলাপন’ কিংবা ‘পান খাইতে চুন লাগে’ গান দুটি সুপার ডুপার হিট ছিল। এছাড়া ‘ভালোবাসি বলে রে বন্ধু আমায় কাঁদালে’ এ গানটাও জনপ্রিয়।

‘আব্দুল্লাহ’ ছবিতে লিজেন্ডারি কমেডিয়ান দিলদার-কে দিয়ে নায়ক করে নতুন এক্সপেরিমেন্ট করলেন বকুল। দিলদারের নায়িকা ছিল নূতন। একজন কাজের লোকের সাথে মনিব জাভেদের মেয়ে নূতনের অসম প্রেমের গল্প। দিলদার অসাধারণ অভিনয় করেছিল। ছবির একটা সিকোয়েন্স আলোচিত হয়েছিল। নূতন দিলদারকে বিশ্বাস করে। তাই নিজের পিঠে ওষুধ লাগিয়ে দিতে বলে। দিলদার চোখে গামছা বেঁধে ওষুধ লাগাতে থাকলে নূতন দেখে অবাক হয়। দিলদারের প্রতি তারও ভালোবাসা জন্মায়। ‘কি করে বলব তোমায় আমি ভালোবাসি’ ছবির এ গানটি দিলদারের ক্যারিয়ারের ক্লাসিক গান। শেষ দৃশ্যে নূতনকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে লম্বায় খাটো হওয়াতে ইটের উপর ওঠে দিলদার। এ দৃশ্যটা মজার ছিল। ছবিটি ব্লকবাস্টার হয়েছিল।

‘পাগল মন’ ছবি দিয়ে বকুল মেহেদি-অন্তরা একজোড়া নতুন জুটি উপহার দিয়েছিল। এ জুটির আরো কিছু ছবি আছে। এ ছবিতে সমাজের উঁচু-নিচু ভেদাভেদ আর প্রেমের জয় দেখানো হয়েছে। ‘পাগল মন মনরে মন কেন এত কথা বলে’ গানটি বাংলাদেশী ছবির অন্যতম সেরা ক্লাসিক গান। গানের রোমান্টিক ও স্যাড ভার্সন দুটোই আছে।

এ জুটির পরবর্তী ছবি ‘বালিকা হলো বধূ’ ছবিটিও বকুলের। এ ছবিতে গ্রামের উঁচু-নিচু পরিবারের দুটি ছেলেমেয়ের প্রেম হয়। তাদের প্রেমকে কেন্দ্র করে পারিবারিক সংঘাত শুরু হয়। ইমম্যাচিউর অন্তরাকে মেহেদি ভালোবাসে। পরে তার সামাজিক অবস্থান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অন্তরার উল্লেখযোগ্য ছবিও বটে।

শাবনূর-শাকিব খান জুটির ‘নাচনেওয়ালী’ ছবিটি তাঁর শেষের দিকের কাজ। ছবিতে ‘ও কন্যা গো’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয় মমতাজের কণ্ঠে। শাবনূরের পিছে পিছে শাকিব আর দিলদার দুলতে দুলতে যায়। ছবিটি ততটা আলোচিত হয়নি।

ফোক ঘরানায় তাঁর আরো ছবির মধ্যে আছে ‘শঙ্খমালা’ যেটি ব্লকবাস্টার হয়েছিল। আরো আছে – রাখাল রাজা, রঙ্গিলা, অচিন দেশের রাজকুমার, গাড়িয়াল ভাই, রাঙ্গা বাইদানি।

সেই সময়ে ফোক ছবির জনপ্রিয়তা ছিল অনেক তাই তাঁর বেশিরভাগ ছবিই ছিল ব্যবসাসফল। এটি বিরল সাফল্য।

তোজাম্মেল হক বকুল যা করে গেছেন তাতে ফোক ছবির একটা বিশেষত্বকে তিনি রেখে গেছেন অন্যদের জন্য আদর্শ হিসেবে। ইবনে মিজান-এর মতো ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির গুরুর লেটেস্ট ভার্সন ছিলেন বকুল। তাঁর ছবি দেখে মনের শান্তি মেলে। আবহমান বাঙালি সংস্কৃতিকে অনুভব করা যায় নিবিড়ভাবে।


Leave a reply