Select Page

বউ-বাচ্চা নিয়ে আফরান নিশোর মন্তব্য, ‘সুড়ঙ্গ’-এর জন্য আশীর্বাদ?

বউ-বাচ্চা নিয়ে আফরান নিশোর মন্তব্য, ‘সুড়ঙ্গ’-এর জন্য আশীর্বাদ?

খোঁচা দেয়া ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় করা আফরান নিশোর করা মন্তব্য ‘সুড়ঙ্গ’-এর জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠল কী! কথায় আছে, গুলি আর কথা একবার বের হয়ে গেছে আর ফেরানো যায় না। আর সিনেমার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানরা হয়তো ফয়দা নিতে পারেন ষোলো আনা।

বাংলাদেশে অন্য নায়কের সিনেমার প্রচারে অন্যতম ট্রেন্ড হলো শাকিব খানের প্রশংসা করা। যেন এর মাধ্যমে তারা শাকিব ভক্তদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। কিন্তু অন্যদের সিনেমার প্রতি এ নায়কের ভক্তদের তাচ্ছিল্য এখন সর্বজনবিদিত। এখন তো তাদের আক্রমণ থেকে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ থেকে সালমান শাহ কেউ বাদ পড়েন না। নিশোও একাধিকবার শাকিবের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু পিছলে পড়া এক মন্তব্য করে ইতি-নেতি বাক্যবাণের মাঝে নিজের প্রথম সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার একটি মাল্টিপ্লেক্সে করা মন্তব্য দিয়ে যার শুরু, এখন তা কলকাতায় গিয়ে ঠেকেছে। বিবাদে জড়িয়ে সাধারণ দর্শক, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ অনেকেই।

ঈদুল আজহার পঞ্চম দিনে স্টার সিনেপ্লেক্সের মহাখালী শাখায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় ‘সুড়ঙ্গ’ টিম। সিনেমার পাইরেসি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্যই তারা একত্র হন। সেখানেই প্রাসঙ্গিকভাবে অন্যান্য বিষয় উঠে আসে।

একদিকে প্রথম সিনেমা, আরেকদিকে ঈদের মতো উৎসব আর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী; এসব কারণে চাপ অনুভব করেছেন কিনা, এমন প্রশ্ন করা হয় নিশোকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘চাপ তো কোনও সময় ছিল না, শুটিংয়ের সময় ছিল। আর চাপটা কিসের? বয়স হয়ে গেছে চল্লিশের ওপরে। অনেক দিন ধরে কাজ করছি।

এর মধ্যেই এক গণমাধ্যমকর্মী বললেন, ‘বয়সটা বলে দিলেন!’ তখন এলো নিশোর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যটি। সেটা এরকম, ‘বয়স বলতে তো আমার সমস্যা নেই। আমি তো সো কল্ড ওই হিরো না যে, আমি বিয়ে করে বউয়ের কথা বলবো না, বাচ্চার কথা বলবো না।’

তবে মন্তব্যটিকে নিশো সামলে নেন এভাবে, ‘এসব ধারণা অনেক আগে ছিল যে, তোমরা যারা নায়ক, তারা বের হয়ে জনগণের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করো না, অনেক বেশি এক্সক্লুসিভ থাকো। কিন্তু আমরা যারা ছোট পর্দায় কাজ করেছি, ভক্তরা আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করছে। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, সহজ হওয়া, কথা বলা, এটা আসলে ভদ্রতা, আন্তরিকতা। এটা বৈশ্বিকভাবেই হয়ে থাকে।’

বিতর্কটি সেখানে থামেনি। অনলাইনের রসালো প্রতিবেদন থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার বিতর্কে গড়ায়। পরে যমুনা টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিশো জানান, তিনি অভিনেতা হতে চান। হিরো নন, যার সঙ্গে বয়স,পরিবারের ধারণা যায় না। তিনি কাউকে আঘাত করতে চাননি।

কিন্তু এর মাঝে প্রকাশ হয় ঈদের আগে ধারণকৃত ‘হোয়াট দ্য শো’ নামের একটি অনলাইন কনটেন্ট। যেখানে উপস্থিত ছিলেন নিশো ও পরিচালক রায়হান রাফী। অনুষ্ঠানে নিশোকে একটি ধাঁধা দেয়া হয়, সেখানে ক্লু শুনে উত্তর দিতে হবে। এক নায়ককে নিয়েই ছিল ধাঁধা। নিশো কয়েকটি ক্লু মিস করলে দর্শকরা বলেন, ওই নায়ক দুবার বিয়ে করেছেন দুই বাচ্চা আছে। তখন ‘পুনর্জন্ম’ অভিনেতা শাকিব খানের নাম বলে ফের তোপের মুখে পড়েন।

এ সব বিতর্ক থিতিয়ে যাওয়ার কলকাতায় ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি উপলক্ষে ২০ জুলাই নিশোর সাক্ষাৎকার ছাপে স্থানীয় আনন্দবাজার পত্রিকা। সেখানেও সুপারস্টারের বউ-বাচ্চার বিষয়টি চলে আসে। যেখানে নিজের নাম থাকায় নিশোর ওপর খেপে যান আরেক নায়ক নিরব হোসেন।

দিন কয়েক আগেই আপনি বলেন, আপনি বউ-বাচ্চা লুকিয়ে রাখার মতো নায়ক নন। ইঙ্গিত কি বিশেষ কারো দিকে?— এমন প্রশ্নে নিশো বলেন, (হেসে) আমি আমার দর্শনের কথা বলেছি। দর্শনে সংঘর্ষ আসতে পারে। আমি বিবাহিত হলে, সকলকে বলেই দেব। হয়তো আমার স্ত্রীকে সর্বদা প্রকাশ্যে আনব না। তবে লুকিয়েও রাখব না। ব্যক্তিজীবনকে লুকিয়ে রাখায় বিশ্বাসী নই। আমার বন্ধু নীরব, ইমন ব্যক্তিজীবনকে অন্তরালে রেখেছেন। সেটা তাঁদের কেরিয়ারে যে খুব সাহায্য করেছে, এমনটা নয়। সুপারস্টার, মেগাস্টার যা-ই হোক না কেন তাঁর সবটা মিলিয়ে দর্শক তাঁকে অনুসরণ করেন। আসলে হিরোর ধারণাটা শুধু আমাদের দেশে আছে। হিরো আসেন, বসেন, একটার জায়গায় পাঁচটা চেয়ার দেওয়া হয়। আমার কাছে হিরো বলাটা বড্ড ফেক মনে হয়। হিরো এবং অভিনেতার মধ্যে বৈষম্য তৈরি করাটা আমার দর্শন অনুমতি দেয় না। কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গায়ে মাখেন, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।

জবাবে ফেসবুকে নিরব লেখেন, ‘আফরান নিশো আমার বন্ধু, অথচ সে কবে বিয়ে করেছে, কবে তার বাচ্চা হয়েছে সেটাই জানি না। আমার বিয়ে, বাচ্চা গোপন করেছি কি না আপনারাই জানেন। হলফ করে বলতে পারি, মিডিয়াও জানে না নিশো কবে বিয়ে করেছে।’

সব মিলিয়ে ‘সুড়ঙ্গ’র প্রচারে নিশোর অযাচিত মন্তব্য শাপেবর হিসেবে কাজ দিচ্ছে। শাকিবের প্রশংসা করে যাদের মন পাওয়া যায় না, হয়তো সেই মধ্যবিত্ত দর্শকদের অনেকটাই কবজা করেছেন নিশো।


মন্তব্য করুন