বক্স অফিসে হতাশাজনক ‘দরদ’
পরিচালক অনন্য মামুনের লাগামহীন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, প্রচারণার অভাব থেকে ত্রুটিযুক্ত নির্মাণে যা হওয়ার তা-ই হলো! ১৫ নভেম্বর মুক্তির দিন মোটামুটি সাড়া পেলেও পরের দিন থেকে আয়ের পতন ঘটছে ধারাবাহিকভাবে।
কথিত প্যান ইনডিয়ান সিনেমাটি দেশজুড়ে ৮৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও ভারতের দর্শকের কাছে এখনো অধরা। একযোগে ২৩ দেশের মুক্তির কথা বলা হলেও হাতেগোনে কয়েকটি দেশের তথ্য পাওয়া গেছে। তবুও শাকিব খানের এই সিনেমা নিয়ে ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনার কমতি ছিল না। মুক্তির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্সে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড গড়ে সিনেমাটি। সিঙ্গেল স্ক্রিনেও শুরুটা খারাপ ছিল না। কিন্তু দুই দিন না পেরোতেই দর্শক–খরায় ভুগছে সিনেমাটি। এমনটাই উঠে এসেছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়— শাকিবের সিনেমা দিয়ে যেখানে বাজিমাত করার কথা, সেখানে পুঁজি তোলার শঙ্কায় আছেন সিঙ্গেল স্ক্রিনের হলমালিকেরা।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার মধুমতি সিনেমা হলে ‘দরদ’ মুক্তির দ্বিতীয় দিনে বেলা সাড়ে তিনটার শোতে ডিসিতে ছিলেন ১২-১৫ জন দর্শক। আর বাকি হল ছিল খালি।
পার্শ্ববর্তী কুলিয়ার উপজেলার রাজ ও আনন্দ— দুই সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘দরদ’। রাজের প্রদর্শক কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘রাজ সিনেমায় যেকোনো সিনেমা প্রথম সপ্তাহে বেশ ভালোই চলে। আর শাকিব খানের সিনেমা হলে তো কথাই নেই। তবে এই সিনেমার কোনো শোতে আমরা তেমন দর্শক পাচ্ছি না। তিন দিন তো গেল, দেখি বাকি সপ্তাহে কপালে কী আছে।’
সম্প্রতি মিনিপ্লেক্সের যুগে পা রেখেছে যশোরের ঐতিহ্যবাহী মণিহার সিনেমা হল, যার উদ্বোধনী সিনেমাটি হলো শাকিব খানের ‘দরদ’। মণিহার সিনেপ্লেক্সের ম্যানেজার ফারুক আহমেদ জানান, শুক্রবার মোটামুটি ভালোই শুরু করেছিল ‘দরদ’, কিন্তু শনিবার থেকেই ছন্দপতন। প্রতিদিন পাঁচটি শো চললেও কোনো শোতেই তেমন দর্শক হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে শাকিব খানের কোনো ছবিতে মুক্তির প্রথম তিন দিনেই এমন খরা তাদের দেখতে হয়নি বলেও জানান তিনি।
নীলফামারী জেলার একমাত্র হল সৈয়দপুরের তামান্না ডিজিটাল সিনেমা। হাজারের বেশি দর্শক ধারণক্ষমতার এ হলটি সব সময়ের মতো বেশি রেন্টাল দিয়ে ‘দরদ’ নিয়েছিল। হলটির অপারেটর শায়েখ আব্দুর রহমান বলেন, ‘লাভের আশা তো পরে, রেন্টালের টাকাই ওঠাতে পারব না। শনিবার দ্বিতীয় দিনে পাঁচটা শোতে বিক্রি হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে আট হাজার টাকার টিকিট। আর আজ কী বলব, রানিং দুপুর সাড়ে ১২টার শোতে দর্শক মাত্র আটজন। বাকি দিন কেমনে যাবে জানি না। শাকিবের পুরোনো সিনেমা মুক্তি দিলেও এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়।’
এদিকে রোববার প্রথম দুই দিনের মতো সাড়া না পেলেও সিনেমাটিকে সময় দিতে চান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই দিন বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। তবে আজ কিছুটা ভাটা। সিনেমাটার দম একটু কম। তবে আমি ভালো সিনেমা সময় দেওয়ার পক্ষে। অন্তত দুই সপ্তাহ না দেখে মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় প্রথম দিনের তুলনায় পঞ্চম দিনে এসে ম্রীয়মান ‘দরদ’। অনলাইনে টিকিট বুকিং চেক করা যায় এমন মাল্টিপ্লেক্সগুলো ট্র্যাক করে বাংলা মুভি রিভিউ জানিয়েছে, ৫ দিন শেষে সিনেমাটির মোট গ্রস আয় ৭২ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্টার সিনেপ্লেক্সের ৬ ব্রাঞ্চে শো চলেছে ২১টি, লায়ন সিনেমাসে চলেছে ৫টি, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে ৩টি, গ্র্যান্ড সিলেট মুভি থিয়েটারে ৩টি, যশোরের মনিহার সিনেপ্লেক্সে ৩টি এবং বগুড়ার মম ইনে শো চলেছে ৩টি।
এছাড়া মুক্তির দ্বিতীয় দিনে কিছু অনলাইন পেজের পোস্ট শেয়ার করেছেন অনন্য মামুন। সেখানে দেখা যায়, দুদিনের সিনেমাটির আয় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু এ হিসাবে উৎস কী তা স্পষ্ট নয়।
‘দরদ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান। তার বিপরীতে আছেন বলিউডের সোনাল চৌহান। এতে আরো অভিনয় করেছেন পায়েল সরকার, রাহুল দেব, অলোক জৈন, রাজেশ শর্মা, সাফা মারুয়া, ইমতু রাতিশ, তানভীর তারেক, জাকির হোসাইন, ফারহান খান রিও এবং বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় রোমান্টিক সাইকো–থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন অনন্য মামুন। ছবির প্রযোজক হিসেবে আছেন অশোক ধানুকা, হিমাংশু ধানুকা, কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া ও অনন্য মামুন। সহপ্রযোজক (হিন্দি) হিসেবে আছেন করণ শাহ (ওয়ান ওয়ার্ল্ড মুভিজ)। বিশ্বজুড়ে পরিবেশন করছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট।