Select Page

সিঙ্গেল স্ক্রিনে প্রিয়তমা ও সুড়ঙ্গের চেয়ে পিছিয়ে জওয়ান

সিঙ্গেল স্ক্রিনে প্রিয়তমা ও সুড়ঙ্গের চেয়ে পিছিয়ে জওয়ান

ঝাঁ চকচকে বিদেশি সিনেমা ও মধ্যবিত্তের সময় কাটানোর বদৌলতে মাল্টিপ্লেক্সে ব্যবসা সবসময়ই ছিল। সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো মানসম্মত দেশি বাণিজ্যিক সিনেমা ছাড়া ভুগছিল প্রায় এক দশক। এ জন্য বারবার ভারতীয় সিনেমা আমদানির কথা চলে আসছে। কিন্তু সেই সিঙ্গেল স্ক্রিনেই বিজাতীয় ছবি চলছে না। এরপর আগে ‘পাঠান’ চলেনি। এবার ‘জাওয়ান’ও সেই ধারা বজায় রেখেছে।

‘জাওয়ান’-এর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একইদিনে মুক্তি পেল উপমহাদেশীয় ভাষার কোনো আমদানি ছবি। অনেকদিন ধরে ভারতীয় বেনিয়ারা এ বিষয়ে তৎপর থেকেও সুবিধা করতে পারেনি। এবার নানাপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে যখন প্রতিরোধহীনভাবে আসলো, তখন লাভের গুড় পাচ্ছে মাল্টিপ্লেক্সগুলো।

চ্যানেল আই অনলাইন এক প্রতিবেদনে জানায়, মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ‘জওয়ান’ চলছে তুমুল দাপটের সাথেই। এমনকি অগ্রিম টিকেট পেতেও দর্শকের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে ‘জওয়ান’ এর অবস্থা করুণ! প্রথম দু’দিনের পর প্রায় সব সিঙ্গেল স্ক্রিনে রীতিমত দর্শক খরা!

স্টার সিনেপ্লেক্সের জৈষ্ঠ্য বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, দৈনিক ‘জওয়ান’ এর ৪০টি শো চলছে সিনেপ্লেক্সে। তিনি বলেন, খুব ভালো চলছে। দৈনিক অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। ঈদের সময় থেকে টানা প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ যেমন চলেছিল জওয়ান সেই ধারাবাহিকতা মুক্তির দিন থেকে বজায় রেখেছে। ভারতের সঙ্গে একসঙ্গে রিলিজ করা গেছে বলে এতো দর্শক চাপ বিরাজ করছে। সিনেপ্লেক্সের সব ব্রাঞ্চে ঈদের ছবিগুলোর মতো চলছে।

শুধু সিনেপ্লেক্স নয়, ব্লকবাস্টার সিনেমাসেও ‘জওয়ান’ দেখতে প্রতিদিনিই ভিড় করছেন দর্শক। নিচ্ছেন অগ্রিম টিকেট। নারায়াণগঞ্জের আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ ‘সিনেস্কোপ নারায়াণগঞ্জ’ এও অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সেখানে এই সপ্তাহের কোনো টিকেট নেই বলেও জানা গেছে। সিনেস্কোপ কর্তৃপক্ষ আগামি ১৫ তারিখ থেকে ২১ তারিখের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করছেন।

দেশের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ অনেকটাই ‘আপসেট’ হয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার শো ছাড়া জওয়ান হাউজফুল পাইনি। শনিবার ও রবিবার আরও দর্শক কমেছে। যেটা আশা করেছিলাম তেমনটা মোটেও হলো না। ঈদে ‘প্রিয়তমা’ চালিয়েছিলাম ছয় সপ্তাহ। এই ছবি যে পরিমাণ চলেছিল সেই তুলনায় ধারেকাছেও নেই ‘জওয়ান’। হলে কিন্তু দর্শক ঠিকই আসে, যদি না থাকে তাহলে প্রিয়তমা ছয় সপ্তাহ কীভাবে চললো? কিন্তু একযোগে রিলিজ করার পরেও ‘জওয়ান’ কেন চললো না এটা আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল স্ক্রিন সুগন্ধা সিনেমা হলে শুক্রবার ও শনিবার দর্শক বেশি থাকলেও পরদিন থেকে ‘জওয়ান’র দর্শক কমেছে উল্লেখ করে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাদত হোসেন বলেন, এশিয়া কাপ ক্রিকেটে উত্তেজনা এবং ওয়ার্কিং ডে শুরু হওয়ায় দর্শক কিছুটা কমেছে। দর্শকদের উপস্থিতি কম বেশি মিলিয়ে সমানসমান। আশা করছি, সামনে ছুটির দিন পেলে দর্শক বাড়বে।

যশোরের মনিহারে ‘জওয়ান’ বেশ ভালো চললেও ময়মনসিংহের ছায়াবাণী, রংপুরের শাপলা, সিলেটের নন্দিতা হলগুলোতেও সেভাবে সুবিধা করতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, জওয়ানের চেয়ে প্রিয়তমা কিংবা সুড়ঙ্গ’র দর্শক বেশি ছিল।

তাদের কথা, ঢাকার বাইরে সবসময় দেশের তারকা শিল্পীদের সিনেমার চাহিদা বেশি। যদি মানসম্মত আধুনিক দেশীয় সিনেমা নির্মাণ করা হয় তবে বলিউড হলিউডের ছবিগুলো থেকে দর্শক দেখবে।

সিনেমা হল মালিক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, সিঙ্গেল স্ক্রিন বা পুরাতন হলগুলোতে জওয়ানের মতো পাঠানও একই অবস্থা ছিল। আসলে সিঙ্গেল স্ক্রিনে সিট থাকে ৮০০ থেকে হাজারের কাছাকাছি। যারা সিনেমা দেখতে যায় তারা হিন্দি ভাষা সেভাবে বোঝে না। কিন্তু দেশের ছবি যদি ভালো হয় তবে ওই ৮০০ থেকে হাজার সিটের হল কিন্তু ভর্তি থাকে। গত ঈদে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’র ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল।

ভারতের সাথে বাংলাদেশে একযোগে ‘জওয়ান’ মুক্তি পেলেও সিঙ্গেল স্ক্রিনে ব্যর্থতার কারণ কী?

এসময় তিনি আরও বলেন, সিনেপ্লেক্সে সিট থাকে ২৫০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে। শহরে শাহরুখ খানের নতুন সিনেমা এলে এই আসনগুলো পূরণ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি সিঙ্গেল স্ক্রিন হাউজফুল হতে গেলে তাহলে এবার হিসেব করেন সিনেপ্লেক্সে কয়টি শো হাউজফুল হতে হবে? তবে আমার মনে হয় সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে যে মেশিন সাউন্ড সিস্টেম আছে সেটা জওয়ানের মতো ছবি টানতে পারে না। আমাদের লোকাল ছবি যদি ভালো হয় কোনো দেশের ছবিই এখানে টক্কর দিয়ে পারবে না।

এদিকে ঢাকার চিত্রামহলের মহাব্যবস্থাপক ইকবাল ইউসূফ আরটিভিকে জানান, তাদের প্রত্যাশা ছিল ‘জাওয়ান’ ভালো যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা মতো চলছে না। হাউসফুল বোর্ড ঝোলাতে পারেননি তারা।

এর আগে প্রথম আলোকে প্রথম দুইদিনের আয়ের তথ্য জানিয়ে পরিবেশক অনন্য মামুন জানান, গত দুইদিনে মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল হল থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা এসেছে। তিনি বলেন, ‘এখানে ছবি মুক্তির তিন দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা দুই দিনের মাল্টিপ্লেক্সের হিসাব পেয়েছি। স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস ও সিলভার স্ক্রিন থেকে গ্রস সেল এসেছে ২৮ লাখের মতো। বাকিটা সিঙ্গেল হল থেকে। পরিবেশের কারণে সিঙ্গেল হলগুলোতে “জওয়ান” খুব একটা ভালো করতে পারছে না।’


মন্তব্য করুন