বনানী কমপ্লেক্স ভেঙে শপিং মল, খেলাপির দায়ে নিলামের মুখে
বাংলা সিনেমার সোনালী দিনে আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ হিসেবে পরিচিত ছিল চট্টগ্রাম মহানগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বনানী কমপ্লেক্স। প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনাগত কারণে ছিল প্রশংসিত। সম্প্রতি ঋণ খেলাপির কারণে সিনেমা হলটির নাম এসেছে শিরোনামে।
সিনেমা ব্যবসায় মন্দার কারণে এর স্বত্বাধিকারী একেএম গোলাম কবির ২০ তলাবিশিষ্ট বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স হিসেবে ‘বনানী কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলেন। জমিসহ এ ভবনের বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু ইউসিবি ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা বছরের পর বছর খেলাপি হয়ে পড়ে আছে। এখন নিলামের দ্বারপ্রান্তে বলে জানানো হয় শেয়ার বিজের এক প্রতিবেদনে।
ইউসিবি পিএলসি সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর ব্যবসায়ী একেএম গোলাম কবির ২০ তলা ভবন করার জন্য ইউসিবি থেকে ঋণ নেন। ঋণ নিয়েও তিনি আটতলা ভবন নির্মাণ করেন। এ ভবনের কয়েকটি ফ্লোরের মালিকানার হাত বদল হয়। তবে বেশিরভাগ ফ্লোর খালি পড়ে আছে। এ কারণে ইউসিবি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ হিসেবে পড়ে আছে। এ খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে, যার মামলা নং ৩২৬/২২। বনানী কমপ্লেক্সের কাছে ব্যাংকের বকেয়া ঋণ ১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একেএম গোলাম কবির খাতুনগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীও ছিলেন। পরে সিনেমা ব্যবসায় আসেন। আর ব্যবসার টাকায় চট্টগ্রাম, ঢাকা ও নোয়াখালীতে বড় বড় জমি কিনে রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বিয়ে ও সংসার নিয়ে আলোচনায় ছিলেন ব্যবসায়ী মহলে। পরে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে স্থায়ী হন। এ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে মারা যান। বর্তমানে তার স্ত্রী ক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর সন্তানরাও দেশের বাইরে থাকে। গোলাম কবিরের বাংলাদেশের সম্পদ দেখাশোনার জন্য তেমন কেউ নেই। তার এক বোন খোঁজখবর রাখলেও তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছেন না।
বনানী কমপ্লেক্স লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, একেএম গোলাম কবির। এ ভবনের আটতলায় একটি আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্ট করতে চেয়েছিলেন। সে অনুসারে বিদেশ থেকে মালামাল আনা হয়। পরে নানা জটিলতায় আর করতে পারেননি। এর মধ্যে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। তবে জমি ও সম্পদের তুলনায় ১৮ কোটি টাকা ঋণ খুবই কম। এক বছর আগে তিনি সিঙ্গাপুরে মারা গিয়েছেন। তার ১০ ছেলেমেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। ফলে জটিলতার কারণে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। শুধু এ সম্পত্তি নয়, দেশে কবির সাহেবের ৪০০ কোটি টাকারও বেশি জমি ও সম্পদ আছে। এখন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে জমি নেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইউসিবি আগ্রাবাদ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলা বর্তমানে আদালতে মামলাধীন আছে। বকেয়া ১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আদায়ে আমরা নিলামে জমি ও স্থাপনা বিক্রির চেষ্টা করছি।