বন্ধ হচ্ছে অভিসার-নেপচুন
রাজধানীর টিকাটুলির মোড়ে ২৬ কাঠা জায়গা জুড়ে অবস্থিত ‘অভিসার’ ভেঙে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনার করেছেন প্রেক্ষাগৃহের অন্যতম মালিক সফর আলী ভূঁইয়া। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে একই মালিকের আরেক হল নেপচুন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, সিনেমা হলের পেছনে প্রতি মাসে ৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তার উপর করোনাভাইরাসে হল বন্ধ থাকায় আর্থিক সঙ্কটের মুখে বাধ্য হয়ে হল ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন করছেন।
১৯৬৮ সালের দিকে টিকাটুলির মোড়ে ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় সিনেমা হলটি; দেনার দায়ে ১৯৯২ সালে কে এম আর মঞ্জুর ও সফর আলী ভূঁইয়ার কাছে ‘অভিসার’ বিক্রি করেন তিনি। মালিকানা পাওয়ার পর অভিসারের উপর ‘নেপচুন’ নামে আরেকটি হল করেন সফর ও মঞ্জুর।
২০১৬ সালে মঞ্জুর মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা হলের মালিকানায় রয়েছেন; তাদের সঙ্গে কথা বলেই হল ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সফর আলী।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সেখানে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণকাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
“ভবনে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করব। পাশাপাশি অন্যান্য তলায় ব্যাংক-বীমা ও সায়েন্টিফিক সরঞ্জামের দোকান ভাড়া দেবো। ইতোমধ্যে কয়েকজন ভাড়ার ব্যাপারে আগ্রহও দেখিয়েছেন।”
৫২ বছরের পুরানো সিনেমা হলটি ভেঙে ফেলা হলেও স্মৃতি হিসেবে নামটাকে টিকিয়ে রাখতে ওই ভবনেই ‘নামকাওয়াস্তে’ দেড়’শ আসনের ছোট সিনেমা হল রাখার কথা জানালে তিনি; তবে নেপচুন নামে কোনো হল থাকছে না।
“সিনেমা হলে ব্যবসা করে কোনোভাবেই আর টিকে থাকা যাবে না। ইজ্জতের খাতিরে ‘অভিসার’ নামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নামকাওয়াস্তে ছোট সিনেমা হল রাখব। আর নেপচুন একেবারে বন্ধ হবে।”
১ হাজার আসন বিশিষ্ট ‘অভিসার’ সিনেমা হলে এতো দিন ৪০ জন স্টাফ ও ৬ জন ম্যানেজার কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে ছোট হল চালাতে ১ জন ম্যানেজার ও ৬ জন স্টাফ রেখে বাকিদের চাকরিচ্যুত করা হবে বলে জানান তিনি।
সফর আলীর মালিকানায় অভিসার-নেপচুন ছাড়াও বাসাবোর আগমন-অতিথি, নরসিংদীর সুরভি, ঘোড়াশালের সোহাগ, আদমজীর মুনলাইট, যাত্রাবাড়ির পুনমসহ ১১টি সিনেমা হল ছিল। চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থার মধ্যে বেশিরভাগ সিনেমা হলেই বিক্রি করে দিয়েছেন অথবা ভেঙে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করেছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পের মন্দাবস্থার মধ্যে কয়েক বছর ধরেই একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৪৩৫টি প্রেক্ষাগৃহ থেকে বন্ধ হতে হতে এখন ১৭২টিতে এসে নেমেছে। করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে আরো ১০ থেকে ১২টির মতো সিনেমা হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার হবে আশঙ্কা করছেন সমিতির নেতারা।