বাংলাদেশের ২০-শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক
উপমহাদেশের এই ভূখণ্ডে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণের গোড়াপত্তন করেন পরিচালক আব্দুল জব্বার খান। ‘পূর্ববঙ্গের আবহাওয়া ছবি নির্মাণের উপযোগী নয়’- পশ্চিমাদের এমন বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করতে তিনি ক্যামেরা হাতে নেমে গিয়েছিলেন। সেই থেকে চলচ্চিত্র পরিচালকরাই বছরের পর বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পের চাকা ঘুরিয়েছেন। ক্যাপ্টেন অব দ্য শীপের মর্যাদা রক্ষা করেছেন তারা।
ষাটের দশকে উর্দু ছবির আগ্রাসন ঠেকাতে এগিয়ে এসেছিলেন পরিচালকরা। সত্তর দশকে স্বাধীন দেশের চিত্রশিল্পকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন পরিচালকরা। আশির দশকে চলচ্চিত্র ব্যবসাকে শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন তারাই। শিল্পশোভন অসংখ্য ছবি করেছেন তারা। স্বদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। বিদেশ থেকে সম্মান কুড়িয়ে এনেছেন দেশের জন্য। তাদের নির্মিত ছবি দেশের কথা বলেছে। দশের কথা বলেছে। সমাজের কথা বলেছে। সমাজবদলের কথাও বলেছে। তারাই আবার ইন্ডাস্ট্রিকে সচল রাখতে প্রয়োজনে বানিয়েছেন মশালাদার ছবি। চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে পরিচালকরা আন্দোলনে নেমেছেন। পরিবর্তন করেছেন দর্শকরুচি। বিনিয়োগ এনেছেন শিল্পে। নিজেরাও পুঁজি ঢেলেছেন। তৈরি করেছেন শিল্পী। তৈরি করেছেন টেকনিশিয়ান। উত্তরসূরিও তৈরি করেছেন। তাদের হাতেই সজীব এখন ঢাকাই সিনেমার রঙিন জগৎ।
কোলাজ: আব্দুল জব্বার খান, এহতেশাম ও সালাহউদ্দিন
যাদের শ্রমে, ঘামে, সৃজনশীলতায় ঢালিউড সমৃদ্ধ হয়েছে, হয়েছে পরিপূর্ণ বিকশিত, এমন কয়েকজন চিত্রপরিচালকের কথা শুনবো আজ। জন্মলগ্ন থেকে আশির দশকের শেষ অবদি যাদের একেকজনের আগমনে, পদভারে সুফলা হয়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গন, যাদেরকে আজো শ্রদ্ধায় করা হয় স্মরণ, তেমনই ২০ জন চিত্রনির্মাতার পরিচয়পর্ব এই রচনার উদ্দেশ্য।
আব্দুল জব্বার খান
আর কোন ছবি নির্মাণ না করলেও ‘মুখ ও মুখোশে’র জন্য চলচ্চিত্রে তিনি প্রাত:স্মরণীয় হয়ে থাকতেন। পূর্ব পাকিস্তানে ছবি নির্মাণের সূচনা করেন তিনি। বাঙালির সম্মানকে তিনি উঁচু করে তুলে ধরেছিলেন। সিনেমার মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের নতুন প্ল্যাটফর্ম সাজিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার খান। খান সাহেব যখন ‘মুখ ও মুখোশ‘ নির্মাণের প্রস্তুতি নেন, তখন তাকে নিয়ে হাসির ফোয়ারা বয়ে গিয়েছিল। তিনি ব্যঙ্গবিদ্রুপ উপেক্ষা করে ছবি শেষ করেন। সেই ছবি এখন ইতিহাস।
এহতেশাম
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘এ দেশ তোমার আমার’ (১৯৫৯)। ‘চান্দা’, ‘চকোরী’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘নতুন সুর’, ‘দূরদেশ’, ‘চাঁদনী’সহ অনেক কালজয়ী দর্শকনন্দিত ছবির প্রবাদ পুরুষ এহতেশাম। তিনি উর্দু-বাংলা দুই ভাষার ছবি নির্মাণেই পেয়েছেন সাফল্য। শাবানা, শবনম, শাবনাজ, শাবনূরসহ আরো অনেক তারকা শিল্পীর স্রষ্টা বলে তাকে শিল্পী তৈরির কারিগর আখ্যা দিয়েছেন নির্মাতারা।
সালাহউদ্দিন
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘যে নদী মরুপথে’ (১৯৬১)। এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করতে যে গুটিকয় নির্মাতার বিপুল অবদান রয়েছে তার মধ্যে সালাহউদ্দিন একজন। উর্দু ছবির দাপটে বাংলা ছবি যখন রুগণ হয়ে কাতরাচ্ছিল মরণযন্ত্রণায়, তখনই ‘রূপবান’ নির্মাণ করে তিনি বাংলা ছবির বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলেন। ‘রূপবানে’র পর বাংলায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়ে। শিকড়ের দিকে ধাবিত হোন উর্দূমুখী নির্মাতারা।
জহির রায়হান
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘কখনো আসেনি‘ (১৯৬১)। পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি এবং প্রথম সিনেস্কোপ ছবির নির্মাতা জহির রায়হান ক্ষণজন্মা এক প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকার। ব্যবসাসফল নানা কিসিমের ছবির পাশাপাশি শিল্পোত্তীর্ণ অনেক ছবি নির্মাণ করেছেন জহির রায়হান। সর্বকালের অন্যতম সেরা নির্মাতাও বলা হয় তাকে। তার নির্মিত দর্শক-সমালোচকধন্য ‘জীবন থেকে নেয়া’ পূর্ব বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়ে থাকে।
সুভাষ দত্ত
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সুতরাং’ (১৯৬৪)। কবরীর প্রথম ছবি ‘সুতরাং’, উজ্জলের প্রথম ছবি ‘বিনিময়’, ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম ছবি ‘বসুন্ধরা’ সুভাষ দত্তের বিখ্যাত ছবি। শিল্পী তৈরির জন্য খ্যাতিমান তিনি। শিল্পী সুভাষ দত্তের সবিশেষ অবদান রয়েছে পোষ্টার শিল্পে। একসময় নায়ক ছিলেন। ছিলেন কৌতুকাভিনেতাও। বহুমুখী প্রতিভাবান এই শিল্পী বহু ধারার বহু সফল ছবির নেপথ্য কারিগর।
খান আতাউর রহমান
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অনেক দিনের চেনা’ (১৯৬৪)। খান আতাও বহুমুখী প্রতিভার আঁধার ছিলেন। আনিস নামে কিছু ছবির নায়ক ছিলেন। গান রচনার পাশাপাশি সুর করতেন, গাইতেনও। বিখ্যাত অনেক গানের নেপথ্যের মানুষ তিনি। বিখ্যাত অনেক ছবির গল্প কিংবা সঙ্গীত তার সৃষ্টি। নিজের পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে দশর্কপ্রিয়তায় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ও ‘সুজনসখী’ সবার উপরে। এদেশের সৃষ্টিশীলতার প্রায় সব শাখায় পা ফেলেছেন এই গুণী নির্মাতা।
কাজী জহির
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘বন্ধন’ (১৯৬৪)। ‘ময়নামতি’, ‘অবুঝ মন’, ‘বধূবিদায়ে’র মতো দেশকাঁপানো দর্শকপ্রিয় ছবির পরিচালক কাজী জহির। দর্শকসন্তুষ্টিতে তার গুপ্তবিদ্যা চিত্রাঙ্গনে বহুলচর্চিত বিষয় ছিল। ব্যবসা সফল সামাজিক-রোমান্টিক ছবি নির্মাণ করে-করে এক কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন কাজী জহির। প্রথম জীবনে ছিলেন অধ্যাপক। চিত্রনির্মাণে এসেও রুচিশীলতাকে ত্যাগ করেননি। পরিচ্ছন্ন ছবি তৈরির জন্য খ্যাতি পেয়েছিলেন কাজী জহির।
ইবনে মিজান
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘একালের রূপকথা’ (১৯৬৫)। ‘বাহাদুর’, ‘নিশান’, ‘এক মুঠো ভাত’ ‘লাইলী মজনু’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’সহ আরো কিছু দেশখ্যাত ছবির নির্মাতা ইবনে মিজান। ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির অঘোষিত সম্রাট বলা হয় তাকে। ফি বছর বাম্পারহিট ছবি বক্স অফিসে উপহার দিতেন ইবনে মিজান। তাকে ও তার ছবিকে ঘিরে তর্ক-বিতর্ক বরাবর থাকলেও ছবিগুলোর বিস্ময়কর জনপ্রিয়তার কারণে আলোচনার টেবিল থেকে কখনোই হারিয়ে যাননি ইবনে মিজান।
আমজাদ হোসেন
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘আগুন নিয়ে খেলা’ (১৯৬৭)। সুনির্মিত, প্রশংসিত, দর্শকনন্দিত, পুরস্কারপ্রাপ্ত অসংখ্য ছবির এক অসাধারণ পরিচালক আমজাদ হোসেন। প্রথিতযশা এই কথাসাহ্যিত্যিক তার গল্পে সমৃদ্ধ করেছেন চলচ্চিত্রকে। ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে‘, ‘কসাই’, সুন্দরী’, ‘ভাত দে’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’- এমন সব ক্ল্যাসিক ছবির নির্মাতা আমজাদ হোসেন। গীতিকার, অভিনেতা হিসেবেও তিনি বিশিষ্ট জায়গা করে রেখেছেন দর্শকদের মনে।
আজিজুর রহমান
তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সায়ফুল মূলক বদিউজ্জামাল’ (১৯৬৭)। বাণিজ্যক ছবি নির্মাণ করে যারা দর্শকহৃদয়ে, বক্স অফিসে, প্রযোজক মহলে দাপুটে অবস্থান তৈরি করেছেন একসময়, তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে আজিজুর রহমানের নাম। ‘অনুরাগ’, ‘মাটির ঘর’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘ছুটির ঘন্টা’, ‘অশিক্ষিত’ সহ হাফ সেঞ্চুরি ছবির এই নির্মাতা সর্বোচ্চ ছবির পরিচালক বলেও এক সময় সমীহ আদায় করে নিয়েছেন সিনেমাওয়ালাদের।
শিবলী সাদিক
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘বালা’ (১৯৬৭) ছবির মধ্য দিয়ে। জনপ্রিয় পরিচালকের কাতারে তিনি আসেন আশির দশকে। ‘তিন কন্যা’, ‘ভেজা চোখ’, ‘নীতিবান’, ‘দোলনা’, ‘ত্যাগ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘মায়ের অধিকার’ তার সুপারহিট ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। শীর্ষ তারকাদের নিয়ে দর্শক পছন্দের ছবি নির্মাণে বিশেষভাবে পটু ছিলেন শিবলী সাদিক। দর্শকরুচিকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি সবসময় ছবি নির্মাণ করেছেন।
চাষী নজরুল ইসলাম
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২) ছবির মধ্য দিয়ে। এদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি এটি। সর্বাধিক মুক্তিযুদ্ধের ছবি পরিচালনা করেছেন চাষী নজরুল। ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘ধ্রুবতারা’ ছবিগুলোও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতেই বানানো। সাহিত্যভিত্তিক ছবি নির্মাণেও তিনি শীর্ষে। ‘দেবদাস’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘বিরহব্যথা’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’- এসব ছবির জন্য বইয়ের কাছে হাত পেতেছেন চাষী নজরুল। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন উচ্চপ্রশংসা।
আলমগীর কবির
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘ধীরে বহে মেঘনা’ (১৯৭৩) ছবির মধ্য দিয়ে। ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের এই কিংবদন্তী পুরুষ এদেশে ভালো ছবির সমার্থক নাম। ‘সীমানা পেরিয়ে‘ ও ‘সূর্যকন্যা’ তার নির্মিত দুটি ক্ল্যাসিক ছবি। অনেক নির্মাতার প্রেরণার উৎস হিসেবেও আলমগীর কবিরের নির্মাণ ও চলচ্চিত্র ভাবনা কাজ করেছে। এক দুর্ঘটনায় তার নির্মাণে চির ছেদ পড়লেও তার চলচ্চিত্র-দর্শন তরুণ নির্মাতাদের পঠন-পাঠনে আজো রয়ে গেছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘অঙ্গীকার’ (১৯৭৩) ছবির মধ্য দিয়ে। আব্দুল্লাহ আল মামুনের সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি ‘সারেং বউ‘। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস থেকে নির্মিত এই ছবির জন্য প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছেন টেলিভিশন ও মঞ্চের এই প্রভাবশালী নাট্যকার-নির্মাতা-অভিনেতা। তিনি ‘এখনই সময়’ ছবিতে নানা ভূমিকায় দেখা দিয়েছিলেন। ‘সখী তুমি কার’,‘দুই জীবন’ ছবির জন্যও তিনি সমানভাবে পরিচিত।
দীলিপ বিশ্বাস
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘সমাধী’ (১৯৭৬) ছবির মধ্য দিয়ে। ‘দাবী’, ‘বন্ধু’ ‘অংশীদার’, ‘অপেক্ষা’, ‘অস্বীকার’, ‘অকৃতজ্ঞ’, ‘অজান্তে’ ইত্যাদি দীলিপ বিশ্বাসের হিট-সুপারহিট ছবি। সামাজিক ছবির জন্য দীলিপ বিশ্বাসের দেশজুড়ে খ্যাতি। প্রবল ব্যবসার জন্যও তিনি খ্যাত। প্রায় প্রতি বছর একটি দুটি সুস্থ ধারার জননন্দিত ছবি নির্মাণ করে তিনি প্রতাপশালী নির্মাতায় পরিণত হয়েছিলেন।
এ জে মিন্টু
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘মিন্টু আমার নাম’ (১৯৭৮) ছবির মধ্য দিয়ে। মাষ্টারমেকার বলে পরিচিত এ জে মিন্টু। মূলত নির্মাণশৈলীর জন্য সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন তিনি। দর্শকরা এই নির্মাতার ছবি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে প্রতীক্ষা করতেন। বক্স অফিসে এক হিটমেশিনের নাম এ জে মিন্টু। ‘মান সম্মান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘অশান্তি’, ‘সত্য মিথ্যা’ ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘লালু মাস্তান’ ‘বাংলার বধূ’ তার উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় ছবি।
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘বন্দুক’ (১৯৭৯) ছবির মধ্য দিয়ে। পরিচালনায় আবির্ভাবের আগে ঝন্টু ছিলেন কাহিনীকার। পরিচালনায় নামার পরও তিনি ছবির গল্প লিখেছেন। হিট ছবির স্ক্রিপ্ট লেখার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি দ্রুত চলচ্চিত্রের ব্যস্ততম পরিচালকে পরিণত হোন। একসঙ্গে একাধিক ছবি নির্মাণ করার জন্য তিনি পরিচিত। তার পরিচালিত অজস্র ছবি হিটের তকমা পেয়েছে। বিচিত্র ধরনের ছবি পরিচালনা করে তিনি দর্শকদের বেশ প্রিয় নাম হয়ে গিয়েছিলেন।
কাজী হায়াৎ
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘দি ফাদার’ (১৯৭৯) ছবির মধ্য দিয়ে। প্রথম ছবিতে তিনি যেমন প্রশংসা জুটিয়েছেন, তেমন করেই জীবনভর নির্মিত ছবির জন্য প্রশংসা পেয়েছেন। রাজনৈতিক ধারার ছবি নির্মাণ করেছেন। দেশপ্রেমমূলক ছবি করেও তিনি দর্শক মন পেয়েছেন। শেষের দিকে তিনি বক্স অফিসে একজন নির্ভরযোগ্য পরিচালক হয়েছিলেন। ‘দায়ী কে’, ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘চাঁদাবাজ, ‘দেশপ্রেমিক’ ছবিগুলোর জন্য তিনি বিতর্কিত হয়েছেন এবং পুরস্কারের বন্যায় ভেসেছেন।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘নান্টু ঘটক’ (১৯৮২) ছবির মধ্য দিয়ে। দেশের স্বনামধন্য এই গীতিকার প্রথমে আসেন গল্প রচনায়। তারপর নাম লেখান প্রযোজনায়। সবশেষে পরিচালনায় এসেও সোনা ফলান। সামাজিক দ্বন্ধমুখর ছবির জন্য গাজী ছিলেন বিখ্যাত। তার ছবি দর্শকপ্রিয়তায়, ব্যবসায় নজীর সৃষ্টি করেছিল। ‘স্বাধীন’, ‘চোর’, ‘স্বাক্ষর‘ ইত্যাদি তার আলোচিত ছবি। বহু তারকার সমন্বয়ে ব্যয়বহুল ছবি বানিয়ে গাজী ব্যতিক্রমী নির্মাতা হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছিলেন।
শহীদুল ইসলাম খোকন
তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ ‘রক্তের বন্দী’ (১৯৮৫) ছবির মধ্য দিয়ে। নব্বই দশকের বাণ্যিজ্যিক ছবির পরিচালকদের মধ্যে সমালোচকদের সবচেয়ে প্রিয় নাম শহীদুল ইসলাম খোকন। নির্মাণশৈলীর জন্য তিনি প্রশংসিত। বিশেষ ধারার ছবি নির্মাণ করে তিনি দর্শকদের আস্থাভাজন নির্মাতা হয়েছিলেন। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেয়া ছাড়াও তিনি প্রচার-প্রপাগান্ডার জন্য ওস্তাদ নির্মাতা ছিলেন। ‘লড়াকু’, ‘সন্ত্রাস’, ‘অপহরণ’,‘বিশ্বপ্রেমিক’ ‘লম্পট’, ‘ভন্ড’ তার সুপারহিট ছবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি মাত্র।
* পরিচালকদের নাম তাদের প্রথম ছবি মুক্তির ক্রমানুসারে সাজানো
* লেখাটি বিনোদন বিষয়ক সাময়িকী ‘আনন্দধারা’য় ২০১৭ সালে প্রকাশিত।