বাংলা চলচ্চিত্রের সালতামামি ২০০৪
২০০৪ সালের শুরুতে অশ্লীলতা আর কাটপিস দেশীয় চলচ্চিত্রে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের ফলে তা অনেকাংশে কমে যায়। বছরের শুরু থেকেই চলচ্চিত্র ব্যবসায়কে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে প্রযোজকেরা কিছু কর্মসূচী হাতে নেয়। কিন্তু সেগুলোর কোনটিই সফল হয়নি। তারা মনে করতেন অশ্লীলতার পাশাপাশি ভিডিও পাইরেসি চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তাই তারা পাইরেসি বন্ধ দাবী করে জন্য আন্দোলন করেন। তারা কেবল সরকারের আশ্বাসই পেয়েছে, কিন্তু তা আদতে কার্যকর হয়নি। এছাড়া সারা বছর প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাথে অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের দ্বন্দ্ব লেগেই ছিল। যার ফলে চলচ্চিত্রাঙ্গনে সারা বছরই অস্থিরতা চলছিল।
১. এক নজরে ২০০৪
বছরের শুরুতে ২ জানুয়ারিতে ‘প্রেম কেন কাঁদায়’ ও ‘ফুটপাতের রাজা’ ছবি মুক্তি পায়। ৯ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘দোস্ত আমার’ ও ‘পাল্টা আক্রমণ’; এবং ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘ফুল আর পাথর’ ও ‘ওরা লড়াকু’।
ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জিরো জিরো সেভেন’; ‘ডেঞ্জার হিরো’, ‘বাপ বেটার লড়াই’, ‘যৌথ বাহিনী’, ও ‘লুটপাট’ এবং চ্যানেই আইয়ে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ‘ব্যাচেলর’ ছবির। ২০ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় ‘ডেঞ্জার মিসন’ ও ‘আব্বাস দারোয়ান’; এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় ‘ওরা গাদ্দার’ ও ‘গুরু দেব’।
মার্চ মাসের ৫ তারিখ মুক্তি পায় ‘কঠিন পুরুষ’। এরপর ১৯ মার্চ ‘ভাড়াটে খুনী’; এবং ২৬ মার্চ ‘জীবন এক সংঘর্ষ’, ও ‘দিওয়ানা মাস্তানা’ মুক্তি পায় এবং চ্যানেল আইয়ে ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়।
এপ্রিল মাসের ২ তারিখ ‘ভাইয়ের শত্রু ভাই’ ও ‘হৃদয় শুধু তোমার জন্য’; ৯ তারিখ ‘লাষ্ট টার্গেট’; ১৬ তারিখ ‘অপরাধ দমন’ ও ‘প্রতিহিংসার বারুদ’; ২৩ তারিখ ‘ডাইরেক্ট ফায়ার’ ও ‘দুর্নীতি দমন’ এবং ৩০ তারিখ ‘সেয়ানে সেয়ানে টক্কর’ মুক্তি পায়।
৭ মে ‘আজকের চাঁদাবাজ’, ১৪ মে ‘আগুন আমার নাম’ ও ‘রাজধানী’; ২১ মে ‘অ্যাটাক’; এবং ২৮ মে ‘গজব’ ও ‘নারী’ (নিষিদ্ধ নারী) মুক্তি পায়।
জুন মাসের ৪ তারিখ মুক্তি পায় ‘উত্তরের খেপ’। ১১ জুন ‘প্রেমিকা ছিনতাই’ ও ‘বাঁচাও’; ১৮ জুন ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ ও ‘বিদ্রোহী সালাউদ্দিন’; ২৫ জুন ‘ঘাড়ত্যাড়া’ ও ‘মহড়া’ মুক্তি পায়।
জুন মাসের ২ তারিখ মুক্তি পায় ‘আগুন জ্বলবেই’ ও ‘নষ্ট’। ৯ জুলাই চ্যানেল আইয়ে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ‘এক খণ্ড জমি’ ছবিটির এবং প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘বাঘের বাচ্চা’ ও ‘মায়ের হাতের বালা’ ছবিগুলো। ১৬ জুলাই ‘খায়রুন সুন্দরী’ ও ‘রঙ্গিন চশমা’; ২৩ জুলাই ‘তেজী পুরুষ’ ও ‘ধর শয়তান’ মুক্তি পায়।
আগস্ট মাসের ৬ তারিখ মুক্তি পায় ‘কালো হাত’। ১৩ আগস্ট ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘হটাও দুর্নীতি’, ২০ আগস্ট ‘তিন বাদশা’ ও ‘সাবধান সন্ত্রাসী’; ২৭ আগস্ট ‘এলাকার ত্রাস’ ও ‘টপ ক্রাইম’ মুক্তি পায়।
সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখ মুক্তি পায় ‘জ্যান্ত লাশ’। ১০ সেপ্টেম্বর ‘আজকের আক্রমণ’ ও ‘টাফ অপারেশন’; ১৭ সেপ্টেম্বর ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’; ২৪ সেপ্টেম্বর ‘টর্নেডো কামাল’ ও ‘মহিলা হোস্টেল’ মুক্তি পায়।
অক্টোবর মাসের ১ তারিখ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ঢাকার রানী’ এবং চ্যানেল আইয়ে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ‘দূরত্ত্ব’ ছবিটির।
১৫ নভেম্বর ঈদের দিন মুক্তি পায় ‘আমাদের সন্তান’, ‘এক লুটেরা’, ‘খুনী শিকদার’, ‘জাত শত্রু’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘মান্না ভাই’, ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ও ‘স্বৈরাচার’ এবং এনটিভিতে ‘জয়যাত্রা’ ও এটিএনে ‘অন্যমানুষ’ ছবিটির ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার হয়।
ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কালা মানুষ’ এবং এটিএনে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’। ১০ ডিসেম্বর ‘আজকের সমাজ’, ‘ভিক্ষা দে’; ১৭ ডিসেম্বর ‘অন্ধকারে রাজনীতি’ ও ‘কুখ্যাত জরিনা’; ২৪ ডিসেম্বর ‘ভণ্ড নেতা’ ও ‘সমাজের শত্রু’; এবং ৩১ ডিসেম্বর ‘আমার টার্গেট’ ও ‘বাঁচাও দেশ’ মুক্তি পায়।
২. আলোচিত ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র
আলোচিত দশ ছবি | ব্যবসাসফল দশ ছবি |
ব্যাচেলর – মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জয়যাত্রা – তৌকীর আহমেদ শ্যামল ছায়া – হুমায়ূন আহমেদ দূরত্ব – মোরশেদুল ইসলাম মেঘের পরে মেঘ – চাষী নজরুল ইসলাম খায়রুন সুন্দরী – এ কে সোহেল এক খণ্ড জমি – শাহজাহান চৌধুরী ফুল আর পাথর – রফিকুল ইসলাম বুলবুল অন্যমানুষ – কাজী হায়াৎ রাজধানী – মোহাম্মদ হোসেন জেমী | নারী – মোহাম্মদ হোসেন খায়রুন সুন্দরী – এ কে সোহেল লাষ্ট টার্গেট – আজাদ খান মান্না ভাই – এফ আই মানিক যত প্রেম তত জ্বালা – মিজানুর রহমান খান দীপু ফুলের মত বউ – আজাদী হাসনাত ফিরোজ বাঁচাও – মনতাজুর রহমান আকবর প্রেমিকা ছিনতাই – ফিরোজ খান প্রিন্স খুনী শিকদার – মনোয়ার খোকন টর্নেডো কামাল – মাসুম পারভেজ রুবেল |
সূত্রঃ বুকিং এজেন্ট ও হল মালিক |
এই বছরের প্রথম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘জিরো জিরো সেভেন’। কিন্তু এর বিরুদ্ধে অশ্লীল দৃশ্য প্রদর্শনের অভিযোগ ওঠে। এরপর এপ্রিল মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাষ্ট টার্গেট’ ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু এই ছবিটির বিরুদ্ধেও অশ্লীলতার অভিযোগ শোনা যায়। এই বছরের অন্যতম সমালোচিত ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র মোহাম্মদ হোসেনের ‘নারী’। ছবির পোস্টারে লেখা হয় “অশ্লীলতার কোন সংজ্ঞা নাই। নগ্নতাই অশ্লীলতা নয়।” ছবিটির প্রকৃত নাম ‘নারী’ হলেও পোস্টারে নিষিদ্ধ শব্দটি থাকার কারণে এটি ‘নিষিদ্ধ নারী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
লোক কাহিনি নিয়ে এ কে সোহেল পরিচালিত ‘খায়রুন সুন্দরী’ ছবিটি দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দেখতে না পেরে কিশোরগঞ্জে এক গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। এ বছরের সুস্থ ধারার অন্যান্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রগুলো হল আজাদী হাসনাত ফিরোজ পরিচালিত ‘ফুলের মত বউ’, এফ আই মানিক পরিচালিত ‘মান্না ভাই’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ব্যাচেলর’, মিজানুর রহমান খান দীপু পরিচালিত ‘যত প্রেম তত জ্বালা’।
এছাড়া শিল্পী চক্রবর্তীর পরিচালনায় শাবনূর-রিয়াজ জুটির ‘তোমার জন্য পাগল’, ইস্পাহানী-আরিফ জাহান পরিচালিত ‘আমাদের সন্তান’, এম এম সরকার পরিচালিত ‘বাঘের বাচ্চা’, চিত্রনায়ক রুবেল পরিচালিত ‘টর্নেডো কামাল’, পি এ কাজল পরিচালিত ‘তেজী পুরুষ’, মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’ এবং ফিরোজ খান প্রিন্স পরিচালিত ‘প্রেমিকা ছিনতাই’ ছবিগুলো হিট হয়।
শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘গজব’, স্বপন চৌধুরী পরিচালিত ‘মহিলা হোস্টেল’, বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘ধর শয়তান’, এ আর রহমান পরিচালিত ‘রঙ্গিন চশমা’, এবং শাহেদ চৌধুরী পরিচালিত ‘টাফ অপারেশন’ ছবিগুলোর মধ্যে অশ্লীল দৃশ্য সংযোজনের জন্য সেন্সর বোর্ড সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে। পরবর্তী সময়ে এসব ছবির প্রযোজকেরা আদালত থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে ছবিগুলো পুনরায় প্রদর্শন করেন।
অশ্লীলতার মাঝেও এ বছর বেশ কয়টি সুস্থ বিনোদন নির্ভর ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’, তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’, এ কে সোহেলের ‘খায়রুন সুন্দরী’, হুমায়ুন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, মিজানুর রহমান খান দীপুর ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, আজাদী হাসনাত ফিরোজের ‘ফুলের মত বউ’, বাদল খন্দকারের ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’, মোহাম্মদ হোসেন জেমীর ‘রাজধানী’, মোরশেদুল ইসলামের ‘দূরত্ব’ এবং কাজী হায়াতের ‘অন্যমানুষ’ উল্লেখযোগ্য।
৩. শীর্ষ ও আলোচিত তারকা
ফেরদৌস ২০০৪ সালের সফলতম নায়ক। এই বছর তার পাঁচটি ছবি মুক্তি পায়। সেগুলোর প্রায় সবকয়টি নারী কেন্দ্রিক গল্প হওয়ায় তার সফলতার অন্যতম অংশীদার তার বিপরীতে অভিনয় করা নায়িকারা। সেগুলোর মধ্যে মৌসুমীর বিপরীতে ‘খায়রুন সুন্দরী’, এবং শাবনূরের বিপরীতে ‘ফুলের মত বউ’, ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, ও ‘ব্যাচেলর’ ব্যবসাসফল হয়। অন্যদিকে, ‘দোস্ত আমার’ ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে ফ্লপ হয়।
মান্না এই বছর ১৩টি ছবিতে কাজ করেন। সেগুলোর মধ্যে ‘মান্না ভাই’ ছবিটি সুপারহিট হয়। এছাড়া হিট হয় ‘বাঘের বাচ্চা’ ও ‘তেজী পুরুষ’ ছবি দুটি। বাকি ছবিগুলো মোটামুটি ব্যবসা করে। তবে এই বছরটি মান্নার জন্য বিশেষ বছর, কারণ তিনি আগের বছরের ‘বীর সৈনিক’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য এ বছর প্রথমবারের মত সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করেন।
রিয়াজ ২০০৪ সালে পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেন। সেগুলোর মধ্যে ‘তোমার জন্য পাগল’ ছবিটি হিট হয়। এছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্যামল ছায়া’ এবং চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন।
রুবেল অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০০৪ সালে অপেক্ষাকৃত ছবিতে কাজ করেছেন। এ বছর রুবেলের ৬টি ছবি মুক্তি পায়, তন্মধ্যে ‘টর্নেডো কামাল’ ছবিটি হিট ব্যবসা করে। তিনি এই ছবিটি পরিচালনাও করেন। এছাড়া আরও দুটি ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পায়।
আমিন খান এই বছর মান্নার পরপরই নিজেকে অ্যাকশন ছবির নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২০০৪ সালে তার অভিনীত ১৭টি ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে ‘নিষিদ্ধ নারী’ ও ‘বাঁচাও’ সহ বেশ কয়টি ছবি ব্যবসাসফল হলেও অধিকাংশ ছবিতে অশ্লীল দৃশ্য সংযোজনের অভিযোগ ওঠে। তবে তার অভিনীত ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’ ছবিটি সুস্থ বিনোদন ধারার ছবি হিসেবেই ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করে।
শাকিব খান এ বছর কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের জীবন কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘খুনী শিকদার’ ছবির নাম ভূমিকাতে কাজ করে আলোচিত হন। ছবির সংখ্যার দিক থেকে এই বছর সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়ক আলেকজান্ডার বো। এ বছর তার অভিনীত ২১টি ছবি মুক্তি পায়।
শাবনূর সুস্থ বিনোদন ধারার ছবিতে অভিনয় করেন। ২০০৪ সালে তার অভিনীত ১০টি ছবি মুক্তি পায়। সেগুলোর মধ্যে ‘ফুলের মত বউ’ ও ‘যত প্রেম তত জ্বালা’ ও ‘ব্যাচেলর’ সুপারহিট ব্যবসা করে। তিনি এ বছর সব মিলিয়ে তার অবস্থান ছিল শীর্ষে।
মৌসুমী এই বছর তিনটি ছবিতে অভিনয় করেন। তার ‘খায়রুন সুন্দরী’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি আলোচিত হন এবং ছবিটি ২০০৪ সালের দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। তার অভিনীত বাকি দুটি ছবিও ব্যবসাসফল হয়।
পপি ২০০৪ সালে আগের বছরের ‘কারাগার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথমবারের মত সেরা অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এই বছর তার অভিনীত ‘মান্না ভাই’ ও ‘টর্নেডো কামাল’ ছবি দুটি ব্যবসাসফল হয়।
পূর্ণিমাকে এই বছর তিনটি ছবিতে দেখা যায়। তার অভিনীত ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিটি প্রশংসিত হয়। তবে তার অভিনীত ছবিগুলো আশানুরূপ ব্যবসা করতে না পারলেও তিনি তার কাজ দিয়ে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
শাকিবা নবাগত হিসেবে শুরুটা করেছেন খুব ভালোভাবেই। ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’ ছবি দিয়ে তিনি এ বছর চলচ্চিত্রাঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। এছাড়া তার বাকি দুটি ছবি ‘ভণ্ড নেতা’ ও ‘বাঁচাও দেশ’ মোটামুটি সফল হয়। ফলে নতুন হিসেবে তিনি সম্ভাবনাময় হিসেবে নিজেকে এই তালিকার শীর্ষ পাঁচে নিয়ে আসেন।
মুনমুন চরিত্রের প্রয়োজনে সম্পূর্ণ টাক মাথায় হাজির হন মোহাম্মদ হোসেনের ‘নারী’ (নিষিদ্ধ নারী) ছবিতে। এ বছর তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ছবির সংখ্যার দিক থেকে এই বছর সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়িকা ময়ূরী। এ বছর তার অভিনীত ১৬টি ছবি মুক্তি পায়।
নবাগত অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে শাকিবা সবচেয়ে সফল। মান্নার বিপরীতে মোহাম্মদ হোসেন জেমীর ‘রাজধানী’ ছবি দিয়ে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সুমনা সোমা এবং পি এ কাজলের ‘তেজী পুরুষ’ ছবি দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন মাহবুবা ইসলাম সুমী। ‘জিরো জিরো সেভেন’ ছবি দিয়ে আলেকজান্ডার বো’র বিপরীতে অভিষেক হয় নীলার। ছবিটি ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হলেও এর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠে।
পরিশেষে, ২০০৪ সাল জুড়ে অশ্লীলতা আর নোংরা রাজনীতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হলেও বেশ কিছু সুস্থ ধারার বিনোদন নির্ভর পরিচ্ছন্ন চলচ্চিত্র এই বছরের বড় পাওনা। তবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, তৌকীর আহমেদ ও মোহাম্মদ হোসেন জেমী চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে নাম লেখিয়ে চলচ্চিত্রের শিল্পের জন্য আশার আলো জাগিয়েছিলেন।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক প্রথম আলো