বাংলা চলচ্চিত্রের সুবর্ণ সময়
চলচ্চিত্র সমাজ ও জীবনের দর্পণ। গোটা বিশ্বের চলচ্চিত্রই তাই। কোনো না কোনোভাবে জীবনের একটা অংশকে উপস্থাপন করাই চলচ্চিত্রের কাজ। চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাই মানুষের যাপিত জীবনের দর্শনকে যে কোনোভাবেই হোক তুলে ধরে। আমাদের চলচ্চিত্রের একটা সময় ছিল যে সময়টা নিয়ে গর্ব করা যায়। চলতে পথে আঁধার যেমন নেমে আসে তেমনি করে আমাদের চলচ্চিত্রেও মন্দ সময়, কালো সময়, খারাপ সময় যাই বলি না কেন ছন্দপতন ঘটেছিল। আজকের সময়টাতেও চেষ্টা-চরিত্র করে একটা মানসম্মত জায়গায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে নির্মাতারা বাকিটুকু সময়ই বলে দেবে।
‘বাংলা চলচ্চিত্র’ আর ‘বাংলাদেশি চলচ্চিত্র’ এ দুটি বিষয় আলোচনার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে তাই খোলাসা করে দেয়ার দরকার আছে। মূলত পাকিস্তান আমল থেকেই উর্দু ছবির পাশাপাশি বাংলা ছবি নির্মিত হত। আমাদের প্রথিতযশা নির্মাতা যেমন জহির রায়হান, এহতেশাম, মুস্তাফিজ তাঁরা বাংলার পাশাপাশি উর্দু ছবিও নির্মাণ করেছেন। তাঁদের সময়ের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে বাংলা ছবি নির্মাণ চালু থাকে এবং সেটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্তও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিশাবে বাংলাদেশ পেয়েছি। ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের ধারণা তার অনেক আগে থেকেই ছিল তাই ষাটের দশক জুড়েও বাংলাদেশি ছবি নির্মিত হয়েছে। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গীয় টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতেও বাংলা ছবি নির্মিত হয়েছে সমান্তরালে। তাই তাদের ছবিও বাংলা চলচ্চিত্র নামে পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের ছবি নির্মিত হয়েছে আমাদের মতো করে। সার্বিকভাবে ‘বাংলা চলচ্চিত্র’-র আইডেনটিটি-ই বড় আকারে পরিচিত হয়ে ওঠে ইতিহাসের পরম্পরায়।
বাংলা চলচ্চিত্রের সময়কে তুলে ধরতে অতীতের যে সমৃদ্ধি তাকে বর্তমান প্রবন্ধে ‘সুবর্ণ সময়’ বলে সম্বোধন করাই ভালো। বলা হয়-’যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ’ কথাটা বর্তমান ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির জন্য আরো বেশি খাটে। অতীতে ভালো ছবি নির্মাণের জোয়ার ছিল। সিনেমাহল ছিল ১২০০। তখন যেসব ছবি নির্মিত হত দেখা যেত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পেত। দর্শক ছবি নির্বাচনে বেশ চিন্তায় পড়ে যেত কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে। আজ আর ঐ সময়টা নেই। দেখার মতো উপভোগ্য ছবি নির্মাণের জন্য মেধাসম্পন্ন নির্মাতাদের অভাব প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। তারপরেও দর্শক স্বপ্ন দেখছে আবারও হয়তো ভালো সময় আসবে। যুগের পরিবর্তনের সাথে চাহিদাসম্পন্ন গল্প ও নির্মাণের ছবি নির্মিত হলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে ইন্ডাস্ট্রি।
তো বাংলা চলচ্চিত্রের ‘সুবর্ণ সময়’-কে কোন সময়ের নিরীখে তুলে ধরা হবে সেটা দেখার বিষয়। যে সময় থেকে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে সেই সময় থেকে একটা মানসম্পন্ন দীর্ঘ সময়ের সাথে যোগ করতে হবে। হিশাব কষলে ষাটের দশক থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত দাঁড়ায়। হ্যাঁ, শূন্য দশকেও ভালো ছবি হয়েছে কিন্তু মাঝখানে অর্থাৎ শূন্য দশকের প্রথমার্ধ্বে অশ্লীলতার সময়টি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল তাই একটা বিষফোঁড়া হয়ে আছে সেটা। এজন্য সুবর্ণ সময়ের সাথে শূন্য দশককে নির্বাচন করা যায় না টেকনিক্যাল দিক থেকেই। শূন্য দশক থেকে অশ্লীলতার পরে বা তার মাঝেও ভালো ছবি নির্মিত হয়েছে এ ঘটনাগুলোকে নতুন একটা আলোচনায় আনা যায় বা বিশ শতকের শেষে একুশ শতকের একটা পরিবর্তনশীল সময়ের প্রেক্ষিতে আলোচনা করা যায়। ভবিষ্যতে সে বিষয়ে কাজ করা যাবে। ষাট থেকে নব্বই পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ছবি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গল্প, গানে ভরপুর ছবিতে তার সাথে জীবনমুখী অন্যরকম ছবিও হয়েছে। সমগ্র ছবিকেই বাণিজ্যিক ও নিরীক্ষামূলক বা অফট্র্যাক ছবিতে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। বর্তমান প্রবন্ধে ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের নানা গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষিত হচ্ছে। আলোচনার সুবিধার্থে ‘চলচ্চিত্র’-কে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি’ বলার দেশিয় ট্রেন্ড থেকে সংক্ষেপে ‘ছবি’ বলা হবে।
ষাটের দশক
আমাদের চলচ্চিত্রের উদ্ভবকারী আব্দুল জব্বার খান ১৯৫৬ সালে নির্মাণ করেন প্রথম বাংলা সবাক ছবি ‘মুখ ও মুখোশ।’ পাকিস্তান আমলে তাঁকে এ ছবি নির্মাণের সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল এ অঞ্চলের জলবায়ু চলচ্চিত্র নির্মাণের উপযুক্ত না। পরে তিনি নিজে চ্যালেন্জ গ্রহণ করে ছবিটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নিজের লেখা নাটক ‘ডাকাত’ থেকে ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবির জন্য স্ক্রিপ্ট লেখেন তারপর শিল্পী নির্বাচনের কাজ করেন। ইনাম আহমেদ, পূর্ণিমা সেনগুপ্তা, জহরত আরা তাদেরকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করান। আব্দুল জব্বার খানের হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের সুবর্ণ সূচনা হয়। তারপর একে একে নির্মিত হতে থাকে ছবি। উর্দু ছবির রাজত্ব ছিল সেসময় সেটা চরম সত্য। হওয়াটাও স্বাভাবিকই কারণ পাকিস্তান সরকারের একটা দৌরাত্ম্য তো ছিলই। ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ দিয়ে উর্দু ছবির যাত্রা শুরু এ দশকে। বাংলা ছবি চলে আলাদা একটা ধারা বা চেষ্টা হিশাবে। পরে বাংলা ছবিই প্রধানভাবে মূল জায়গা দখল করে নিয়েছিল। এ ধারায় পাটাতন মজবুত করেছিলেন জহির রায়হান, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, ফতেহ লোহানী, খান আতাউর রহমান, সালাহউদ্দিন, ইবনে মিজান, কাজী জহির, নারায়ণ ঘোষ মিতা, বশির হোসেন, মহিউদ্দিন প্রভৃতি নির্মাতা। জহির রায়হানের ‘কখনো আসেনি, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা’ ছবিগুলো ভিন্ন ভিন্ন কনটেন্টে সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ বাণিজ্যিক ছবির অনেক বড় সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছিল। নিজে নায়ক হয়ে কবরীকে নায়িকা করে দর্শকের মন জয় করেছিল। খান আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ইতিহাসের তাৎপর্যে মাস্টারপিস ছিল। সাদাকালো সেলুলয়েডে এ ছবি দিয়ে প্রথিতযশা অভিনেতা আনোয়ার হোসেন খ্যাতি পেয়েছিলেন ‘বাংলার নবাব’ হিশাবে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন ও কর্মকে তুলে ধরা হয়েছিল। প্রথম ব্যবসাসফল ছবির রেকর্ড গড়েছিল সালাহউদ্দিন পরিচালিত ‘রূপবান।’ সুজাতা নাম ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলেছিল। ফোক কনটেন্টের এ ছবি ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান বৈচিত্র্য। ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির আদর্শ নির্মাতা ছিলেন ইবনে মিজান। তাঁর ‘পাতালপুরীর রাজকন্যা’ এ দশকেরই কাজ। মহিউদ্দিনের ‘গাজী কালু চম্পাবতী’, খান আতাউর রহমান-এর ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’ একই ঘরানার ছবি। ফ্যামিলি ড্রামার সেরা নির্মাতাদের একজন নারায়ণ ঘোষ মিতা এ সময়ের আবিষ্কার। তাঁর ‘এতটুকু আশা’ জীবনমুখী ছবি, পাশাপাশি ‘নীল আকাশের নিচে’ ছবিটিও জনপ্রিয় ছবি। কামাল আহমেদ ষাট থেকে পরবর্তী বেশ কিছু কাল ধরে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ করেন। তাঁর শুরুটাও এ সময়ে ‘অবাণ্ছিত’ ছবি দিয়ে। শুধু ষাটের দশকেরই নয় ঢালিউডি ছবির ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সেরা কমেডি ছবি ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন।’ আলতাফ, রবিউল অভিনীত দম ফাটানো হাসির ছবি। কাজী জহির পরিচালিত ‘ময়নামতি’ রোমান্টিক ড্রামার মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এহতেশাম যিনি ছিলেন উর্দু ও বাংলা ছবির নির্মাতা তার সাথে শিল্পী গড়ার কারিগর। তাঁর ছবিও ভিত গড়েছিল সে সময়ে। তাঁর ‘রাজধানীর বুকে, চকোরী, নতুন সুর, এদেশ তোমার আমার’এগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য ছবি।
ষাটের দশকের ছবিতে মিশ্র কাজ হয়েছে দেখাই যাচ্ছে। এর মাধ্যমে নানা স্বাদের ছবি দর্শক দেখতে পেয়েছে। ‘রূপবান’ ছবির গানের গুরুত্ব ছিল সংসারত্যাগী বাঙালি বধূর জন্য। গানগুলো জনপ্রিয় ছিল। ‘এতটুকু আশা’ ছবির ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’ গানটি মানুষের প্রত্যহিক জীবনদর্শনকে তুলে ধরে। আব্দুল জব্বার-এর গাওয়া সেরা জনপ্রিয় গান। এ গানটি বিবিসি বাংলা জরিপে সর্বকালের সেরা বাংলা গানের মধ্যে একটি নির্বাচিত হয়েছিল। ‘নীল আকাশের নিচে’ ছবির ‘নীল আকাশের নিচে আমি’ গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ‘অবাণ্ছিত’ ছবিতে ফোক গানের বিখ্যাত শিল্পী আব্দুল আলিমের ‘কেহয় করে বেচাকেনা’ গানটি ব্যবহৃত হয়। ‘ময়নামতি’ ছবির ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়’ অত্যন্ত জনপ্রিয় গান। তারকা তৈরি হয়েছিল সেসময় যার কারিগর ছিলেন এহতেশাম। রহমান ছিল ঢালিউডের প্রথম তারকা। তার ‘হারানো দিন, রাজধানীর বুকে, এদেশ তোমার আমার’ সুপারহিট সব ছবি। তাঁর ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’ গানটি জনপ্রিয়। টলিউডের তখনকার সুপারস্টার উত্তম কুমার-এর সাথে তার হুবহু মিল ছিল। রহমান-এর আত্মকথা ‘আমার কথা’-তে পাওয়া যায় তাঁকে দেখে একজন বলেছিলেন-’ইয়া আল্লাহ ইয়ে তো বিলকুল উত্তম কুমার কি তারা লাগতা হ্যায়।’ রহমান-এর পরে তারকা হয়ে ওঠে আনোয়ার হোসেন, রোজী আফসারী, রাজ্জাক, সুজাতা, কবরী। ষাটের দশকেই ভারসাম্যপূর্ণ তারকা, ছবি, গান দিয়ে ঢাকাই ছবির সুবর্ণ সময়ের সূত্রপাত হয়েছিল।
সত্তর দশক
একটা সুন্দর সময়ের সূচনা হয়েছিল সত্তর দশকে। ষাটের দশকই সত্তরের সুন্দর সময়ের আবিষ্কারক। যে ভিত্তিটা ষাটে শুরু হয় সত্তরে এসে পূর্ণতা পায়। রুচিশীল ছবি নির্মাণের ধারাবাহিকতা শুরু হয়। বিশেষত্ব ছিল সুন্দর নামের ছবি নির্মাণ। এ দশকে অনেক সুন্দর, রুচিশীল নামের ছবি নির্মিত হয়েছিল। যেমন :
যে আগুনে পুড়ি – আমির হোসেন
সূর্য ওঠার আগে – নাজমুল হুদা মিন্টু
আদর্শ ছাপাখানা – মোস্তফা মেহমুদ
বিন্দু থেকে বৃত্ত – রেবেকা
জীবন থেকে নেয়া – জহির রায়হান
পিচ ঢালা পথ – এহতেশাম
দর্পচূর্ণ – নজরুল ইসলাম
স্বরলিপি – নজরুল ইসলাম
কত যে মিনতি – ইবনে মিজান
রং বদলায় – আকবর কবির পিন্টু
ঢেউয়ের পর ঢেউ – মহসিন
কাঁচ কাটা হীরে – আব্দুল জব্বার খান
দীপ নেভে নাই – নারায়ণ ঘোষ মিতা
নাচের পুতুল – অশোক ঘোষ
স্মৃতিটুকু থাক – আলমগীর কুমকুম
মানুষের মন – মোস্তফা মেহমুদ
অশ্রু দিয়ে লেখা – কামাল আহমেদ
পলাশের রং – আকবর কবির পিন্টু
ছন্দ হারিয়ে গেল – এস এম শফি
ধীরে বহে মেঘনা – আলমগীর কবির
বলাকা মন – সুভাষ দত্ত
ঝড়ের পাখি – সি বি জামান
এখানে আকাশ নীল – হাসমত
পায়ে চলার পথ – মেহমুদ
ভুল যখন ভাঙল – রফিকুল বারী চৌধুরী
অবাক পৃথিবী – মোস্তফা মেহমুদ
কার হাসি কে হাসে – আনন্দ
বাদি থেকে বেগম – মহসিন
আলো তুমি আলেয়া – দিলীপ সোম
এপার ওপার – মাসুদ পারভেজ
এক মুঠো ভাত – ইবনে মিজান
চলো ঘর বাঁধি – নূর-উল ইসলাম
দি রেইন (যখন বৃষ্টি নামল) – এস এম শফি
মেঘের অনেক রং – হারুনুর রশীদ
সীমানা পেরিয়ে – আলমগীর কবির
উজ্জ্বল সূর্যের নিচে – জহির রায়হান
যাদুর বাঁশি – আব্দুল লতিফ বাচ্চু
রাজ দুলারী – শফি বিক্রমপুরী
দিন যায় কথা থাকে – প্রমোদকর
একালের নায়ক – সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া
শহর থেকে দূরে – দিলীপ সোম
রূপালি সৈকতে – আলমগীর কবির
সুন্দর নামের ছবির সংস্কৃতি আশির দশকেও ছিল তবে এর উৎকর্ষ সত্তর দশকেই। সত্তর দশকের ছবি শিখিয়েছে পারিবারিক মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় বাস্তবতা, সম্পর্কের নানা গতি-প্রকৃতি, সাহিত্যভিত্তিক ছবির গুরুত্ব, শ্রেণিবৈষম্যের বাস্তবতা, রোমান্টিসিজম ইত্যাদি। এসময়টিতেও আনোয়ার হোসেন, শর্মিলী আহমেদ, আনোয়ারা, রোজী আফসারী, রাজ্জাক, সুজাতা, কবরী তাদের পাশাপাশি শাবানা, ববিতা, বুলবুল আহমেদ, সুচরিতা, সুলতানা জামান, নাসিমা খান, আলমগীর, সোহেল রানা, জসিম, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, অলিভিয়া, কাজরী তাদের সুবর্ণ সময়। বিভিন্ন ধরনের ছবি তারা উপহার দিয়েছিল।
এ দশকের সবচেয়ে উজ্জ্বল আবিষ্কার ছিল শাবানা যিনি পরবর্তীকালে দীর্ঘসময় ধরে রাজত্ব করেছেন। বিভিন্ন ধরনের ছবিতে অভিনয় করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। পাশাপাশি রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, কবরী, আলমগীর, ববিতা, ফারুক, উজ্জ্বল, ওয়াসিম তারা ছিল স্ব স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল। নায়কদের মধ্যে রাজ্জাক মোস্ট সিনিয়র ও ভেরিয়েশনে ‘নায়করাজ’ উপাধি পান বিখ্যাত ‘চিত্রালী’ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ জামান চৌধুরী-র কাছ থেকে। দ্বিতীয় সবচেয়ে ভেরিয়েশনের অভিনেতা আলমগীর।
সত্তর দশকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নির্মাণ ঘটে চাষী নজরুল ইসলাম-এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধেই স্যুট করা সাহসী পদক্ষেপে ‘ওরা ১১ জন’ ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটি ইতিহাস গড়ে।এরপর নির্মাণ করেন ‘সংগ্রাম’ ছবিটি। মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা অপারেশনের লং টার্ম স্যুট করা ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মমুজিবুর রহমান-কে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নেন চাষী নজরুল ইসলাম। এ বিরল ইতিহাসটি একমাত্র তিনিই করতে পেরেছিলেন। সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী’ আরেকটি অসাধারণ ছবি। মমতাজ আলী-র ‘রক্তাক্ত বাংলা’, আনন্দ-র বাঘা বাঙালি’ সত্তরের আলোচিত কাজ। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় মজুতদার পুঁজিবাদী শ্রেণির নিম্নবিত্তকে শোষণের বাস্তবতায় নির্মিত হয় ‘আলোর মিছিল’ ছবিটি। পুঁজিবাদী কালোবাজারি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশের তরুণ প্রজন্মের বিপ্লবী অবস্থান ছিল ছবির লক্ষ্য। ‘দিন বদলের দিন এসেছে/ কান পেতে ঐ শোন’ গানটি সেই বিপ্লবের স্বর। বাস্তবতা তুলে ধরেছিল ‘দুঃখ করো না বন্ধু তোমরা’ গানটি। খান আতাউর রহমান-এর ‘আবার তোরা মানুষ হ’ আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিকে পারিবারিক আবহে প্রতীকী করে জহির রায়হান নির্মাণ করেন ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি। সত্তরের অন্যতম প্রধান আলোচিত ছবি ছিল। রওশন জামিলের চাবির গোছার মধ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে প্রতীকী করে পরিবারে অমানুষিক অত্যাচার দেখানো হয়েছে যা ছিল রাষ্ট্রে সাধারণ মানুষের উপর ক্ষমতাসীনদের দৌরাত্ম্য। ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ খানআতার অভিনয়ে গানটি ছিল ক্ষমতাসীন ও অত্যাচারিত মানুষের আহাজারি। আলমগীর কবির জহির রায়হানের মতো আরেকজন সাহসী নির্মাতা ছিলেন। তাঁর ‘ধীরে বহে মেঘনা, সীমানা পেরিয়ে, সূর্যকন্যা, রূপালি সৈকতে’ এ তিনটি ছবি নতুন একটা বিপ্লব করেছিল চিন্তার দিক থেকে। ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিতে তিনি যে কাজ দেখিয়েছেন তার গভীরতা অনেক। সমাজের উঁচুতলার ফ্যাশনেবল চিন্তাধারাকে চপেটাঘাত করেছেন নিম্নশ্রেণির এক চরিত্রের মাধ্যমে। বুলবুল আহমেদ কালু চরিত্রে ছিল সেই নিম্নশ্রেণির প্রতিনিধি আর উঁচুতলার অহংকারী ছিল জয়শ্রী কবির। পরে জয়শ্রী বুলবুলকে ভলোবেসে বিয়ে করেছিল। শ্রেণিসংগ্রাম করেছিল বুলবুলের সাথে নির্জন দ্বীপে। অনেকদিন পর বাড়ি ফিরে জয়শ্রী অহংকারী বাবার মুখের উপর কড়া জবাবও দিয়েছিল বুলবুলের জন্য। ‘সাইলেন্ট মেজোরিটি’ বলে পরিচিত করিয়েছিল বুলবুলকে যাদের বিপ্লবী অবস্থানে সুবিধাবাদী পুঁজিবাদী শ্রেণির পতন ঘটতে পারে। জয়শ্রী অভিনীত ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’ গানটি নারীর জেগে ওঠার আহবান দেখায় ঔপনিবেশিক সময়ের বিপরীতে। অনন্যসাধারণ গান। ‘সূর্যকন্যা’ ছবিতে নারী জাগরণ দেখিয়েছেন তিনি। রাজশ্রী বোসের ‘আমি যে আঁধারে বন্দিনী’ গানটি অনালোকিত নারীকে তুলে ধরে তাকে আলোর জগতে ফিরিয়ে আনেন জয়শ্রী কবিরের মাধ্যমে। আলমগীর কবির-বুলবুল আহমেদ ছিল নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীর ব্যতিক্রমী কম্বিনেশন।
সাহিত্যভিত্তিক ছবি ছিল ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’। আবু ইসহাক-এর জীবনমুখী উপন্যাস থেকে ছবিটি নির্মাণ করেন মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। আলাউদ্দিন আল আজাদ-এর ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাস থেকে সুভাষ দত্ত নির্মাণ করেন ‘বসুন্ধরা।’ ঋত্বিক ঘটক নির্মিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছিল মাইলফলক। অদ্বৈত মল্ল বর্মণের উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়। ছবিটি অস্কারে পাঠানো হয়েছিল। প্রথম অ্যাকশন ছবি নির্মিত হয়েছিল সত্তরেই। রাজ্জাকের ‘রংবাজ’ ছবিটি ছিল প্রথম অ্যাকশন ছবি। রাজ্জাক-কবরী জুটির অনবদ্য ছবি। ছবিতে ব্যবহৃত ‘হৈ হৈ রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে, সে যে কেন এলো না’ গানগুলো ক্লাসিক। রোমান্টিকে জোয়ার বয়ে গেছে সত্তরে। এহতেশাম-এর ‘পিচ ঢালা পথ’ ছবিতে জীবনের ছাপ যেমন ছিল তেমনি ছিল রোমান্টিকের জমজমাট আবহ। ‘পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি/ তার সাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি’ এরকম জীবনমুখী গান যেমন আছে পাশাপাশি ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’ এরকম খাঁটি রোমান্টিক গানও আছে। অশোক ঘোষের ‘নাচের পুতুল’ ছবির ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’ গানটি বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক গান হবার মতো গান। রাজ্জাক-শবনম জুটির রসায়ন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। রাজ্জাক পরিচালিত ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিটি সমালোচিত হয়েছিল ঢাকাই ছবিতে প্রথম চুম্বনদৃশ্যের জন্য। রাজ্জাক-ববিতা জুটির ছবি ছিল। এহতেশাম এর ‘চকোরী’ ছবিতে শাবানা প্রথম নায়িকা হয়ে আসে পাকিস্তানি নায়ক নাদিমের বিপরীতে। ছবিটি উর্দু ও বাংলা দুই ভার্সনেই আছে। ফারুক-কবরী জুটির ‘সুজন সখি’ ছিল এসময়ের আলোচিত ছবি। ছবির গানগুলো ক্লাসিক এবং গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে ফারুকের বিকল্প কোনো নায়ক তখন ছিল না। বিশেষ করে ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে ফারুকের গ্রাম্য প্রতিবাদী যুবকের ভূমিকা অনবদ্য ছিল। তখনকার গ্রামীণ সমাজ ফারুক তার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মোড়ল, মহাজনদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিল। মাসুদ পারভেজ বা সোহেল রানা জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ অবলম্বনে একই নামে ছবিটি নির্মাণ করেন। নিজেই ছিলেন নায়কের ভূমিকায়। ছবিটি তাঁর ক্যারিয়ারের আলোচিত ছবি। ‘মনেরও রঙে রাঙাব’ গানটি জনপ্রিয় গান এ ছবির। ফোক-ফ্যান্টাসির রাজা ইবসে মিজান তাঁর ট্র্যাকের বাইরে গিয়ে নির্মাণ করেন ‘এক মুঠো ভাত’ ছবিটি। আলোচিত হয় ছবিটি। এস এম শফি নৃত্যপটিয়সী অলিভিয়াকে দিয়ে নির্মাণ করেন ‘দি রেইন’ (যখন বৃষ্টি নামল) ছবিটি। ছবির গানগুলো সুপারহিট হয় বিশেষ করে ‘একা একা কেন ভালো লাগে না, আয়রে মেঘ আয়রে’ গানগুলো। যৌনশিক্ষা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য নির্মিত হয় আজাদ রহমানের ‘গোপন কথা’ ছবিটি। রোমান্টিক ড্রামায় ‘এপার-ওপার’ অসাধারণ ছবি। সোহেল রানার বিপরীতে বোম্বের সোমা অভিনয় করেছিল। ছবিতে ‘ভালোবাসার মূল্য কত, মন রেখেছি আমি’ গান দুটি সুপারহিট ছিল। আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত, মাটির ঘর’ ব্যতিক্রমী নির্মাণ ছিল। প্রথমটিতে রাজ্জাককে পড়াত তার ছোট্ট বন্ধু মাস্টার সুমন। ‘ও মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি তখন সবার মুখে মুখে ছিল। ‘মাটির ঘর’ ছবিটি প্যাথেটিক স্টোরির ছিল। কবরকে মাটির ঘর প্রতীকী করে দেখানো হয়েছে যা মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়। ‘পাগলা রাজা’ ছবিটি রাজ্জাকের ক্যারিয়ারে ব্যতিক্রমী ছবি ছিল। কমেডি ছবির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ফাঁক-ফোঁকর তুলে ধরা হয়েছিল। আমজাদ হোসেন-এর মতো সাহসী নির্মাতার জন্ম হয়েছিল সত্তরে। তিনি বিরাট একটা সময়ের স্বাক্ষী। তাঁর ‘গোলাপি এখন ট্রেনে, নয়নমনি, সুন্দরী’ ছবিগুলো ছিল এক একটি মাইলফলক ছবি। জীবনমুখী ছবি নির্মাণে তাঁর দক্ষতা অতুলনীয়। জসিম ছিল ‘সুন্দরী’ ছবিতে ববিতার বাবার চরিত্রে। জসিমের মতো পর্দা কাঁপানো নায়ক প্রথমত ছিলেন খলনায়ক হিশাবে পর্দা কাঁপানো অভিনেতা। দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবির খলনায়ক ছিল জসিম। পর্দা কাঁপিয়ে অভিনয় করেছিল। কাজী হায়াৎ-এর প্রথমদিকের ছবি ‘দি ফাদার’ ছিল সত্তরের অন্যতম আলোচিত ছবি। সুচরিতার বাবার ভূমিকায় বিদেশি একজন অভিনেতা ছিল। তার জীবনের বাস্তব গল্প থেকে বাবা-মেয়ের ছবি। এ ছবির ‘আয় খুকু আয়’ গানটি শোনেনি এমন মানুষ মেলা ভার। আব্দুল্লাহ আল মামুন নির্মিত ‘সারেং বৌ’ সত্তরের অনবদ্য ছবি। এ ছবির ‘ওরে নীল দরিয়া’ সমগ্র ঢাকাই ছবির ইতিহাসে অতুলনীয় গান।
সত্তর দশকের ছবি এভাবেই বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর একটি সময়ের সমষ্টি। আশির দশকের পরবর্তীকালের ভেরিয়েশনকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এ সময়টি।
আশির দশক
সত্তর দশকের সুন্দর নামের ছবি নির্মাণের ধারাবাহিকতা আশির দশকেও ছিল। পাশাপাশি মিশ্র ক্যাটাগরির ছবি নির্মিত হয়েছিল। অনেক কাজ হয়েছে। এ দশকের বিশেষত্ব ছিল বাণিজ্যিক ছবির বাজার প্রতিষ্ঠিত করা এবং সেটি পেরেছিল যার বদৌলতে পরবর্তী নব্বই দশকে সে ধারাবাহিকতা পুরোদস্তুর বজায় থেকেছে।
বাস্তব ঘটনা থেকে নির্মিত ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবি দিয়ে পরিচালক আজিজুর রহমান প্রথমেই ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। দর্শক সিনেমাহলের ভেতর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছে। রাজ্জাক ছবিতে দফতরি চরিত্রে এবং শাবানা মেথরানীর চরিত্রে অভিনয় করেছিল। ছাত্রের ভূমিকায় মাস্টার সুমন তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। বাথরুমে মারা যাবার আগে তার কষ্টের দিনগুলোর অভিনয়টাকে ছবির ‘হার্ট ব্রেকিং পার্ট’ বলা হয়। মাস্টার সুমন সবাইকে অবাক করেছে তার অভিনয় দিয়ে। ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, একদিন ছুটি হবে’ গান দুটিতে তার অভিনয় অসাধারণ। শাবানার রাজত্বের সময়ে নতুন সূচনা হয় আশির দশকে। ‘সখি তুমি কার’ ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল ১৯৮০-তে বছরের দ্বিতীয় ছবি হিশাবে। রোমান্টিক ও রোমান্টিক ড্রামা ছবির মধ্যে ‘মেঘ বিজলি বাদল, আনারকলি, জীবননৌকা, আশার আলো, কালো গোলাপ, উজান ভাটি, লাইলী মজনু, ঝুমুর, আঁখি মিলন, নাজমা, পুনর্মিলন, নয়নের আলো, নরম গরম, নেপালী মেয়ে, অসাধারণ, সোনালি আকাশ, ওগো বিদেশিনী, নিষ্পাপ, সহযাত্রী, ভেজা চোখ, হীরামতি, ছলনা, অবুঝ হৃদয়, সারেন্ডার, পাহাড়ি ফুল’ ইত্যাদি আছে। এগুলো গানের দিক থেকেও সমৃদ্ধ ছবি ছিল তাই মিউজিক্যাল সিনেমার গুণ আছে কিছু ছবিতে। যেমন :
আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে, আমার সারাদেহ খেওগো মাটি – নয়নের আলো
ও বন্ধুরে প্রাণবন্ধুরে – মেঘ বিজলি বাদল
ওরে ও জানরে, তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছ – জীবননৌকা
আমার মন বলে তুমি আসবে – আনারকলি
লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া – লাইলী মজনু
প্রেমেরও ছোট্ট একটি ঘর – ঝুমুর
আমার গরুরগাড়িতে বৌ সাজিয়ে – আঁখি মিলন
চন্দনা গো রাগ কোরো না – পুনর্মিলন
ওগো বিদেশিনী তোমার চেরি ফুল দাও – ওগো বিদেশিনী
পৃথিবীর যত সুখ – সহযাত্রী
বকুল ফুলের মালা গেঁথেছি হৃদয়ে – সোনালি আকাশ
তুমি আমার জীবন – অবুঝ হৃদয়
এই বৃষ্টি ভেজা রাতে – নরম গরম
পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে – পয়সা পয়সা
জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প – ভেজা চোখ
আশায় আশায় দিন কেটে যায় – ছলনা
আকাশকে প্রশ্ন করো – শর্ত
গানগুলো নিঃসন্দেহে কালজয়ী। মিউজিক্যাল ছবি ছিল ‘নয়নের আলো, দুই জীবন, ভাইবন্ধু, বাল্যশিক্ষা, ঝিনুক মালা, সওদাগর, বেদের মেয়ে জোসনা’। এগুলোর সবগুলো গান জনপ্রিয় এবং ক্লাসিক।
সাহিত্যভিত্তিক ছবির সুনির্মিত সময় গিয়েছিল আশির দশকে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর উপন্যাস ‘দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শ্রীকান্ত’ থেকে ছবি নির্মিত হয়েছিল। প্রথম দুটি চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায়। পরেরটি বুলবুল আহমেদ-এর পরিচালনায় ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’ নামে। এছাড়া মহিউদ্দিন ফারুক পরিচালিত ‘বিরাজ বৌ’ এবং চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিতত ‘শুভ দা, রামের সুমতি’ ছবি দুটিও শরৎচন্দ্রের সাহিত্য থেকে নির্মিত। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়-এর গল্প থেকে রাজ্জাক নির্মিত ‘চাঁপা ডাঙ্গার বৌ’ ছবিটি আরেকটি মাইলফলক। ছবিতে ‘আমার সাধ না মিটিল’ গানটি আশির দশকের অনন্য সৃষ্টি।
জীবনমুখী ক্লাসিক ছবির মধ্যে এই দশকের শ্রেষ্ঠ ছবি ‘ভাত দে।’ শাবানা-র অভাবনীয় অভিনয়ে আমজাদ হোসেন-এর ক্লাসিক ছবি। আমজাদ হোসেনের ‘দুই পয়সার আলতা, জন্ম থেকে জ্বলছি, সখিনার যুদ্ধ’ আরো দুটি জীবনমুখী ছবি। অন্যান্যের মধ্যে আজিজুর রহমানের ‘মহানগর’, মহিউদ্দিনের ‘বড় ভালো লোক ছিল’, শামসুদ্দিন টগরের ‘গলি থেকে রাজপথ’, রফিকুল বারী চৌধুরীর ‘পেনশন’, কাজী হায়াৎ-এর ‘যন্ত্রণা, পাগলী’, শেখ নিয়ামত আলীর ‘দহন’, দেলোয়ার জাহান ঝণ্টুর ‘মাটির কোলে’, আফতাব খান টুলুর ‘দায়ী কে?’, শফিকুর রহমানের ‘ঢাকা-৮৬’, রায়হান মুজিবের ‘ভাইজান’, মতিন রহমানের ‘রাঙ্গা ভাবী’ উল্লেখযোগ্য।
ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির মধ্যে আকবর কবির পিন্টু-র ‘গাঁয়ের ছেলে’, মাসুদ পারভেজের ‘যাদুনগর’, এফ কবির চৌধুরীর ‘সওদাগর’, শামসুদ্দিন টগরের ‘বানজারান’, আব্দুস সামাদ খোকনের ‘ঝিনুক মালা’ উল্লেখযোগ্য।
ব্যতিক্রমী বাণিজ্যিক নিরীক্ষামূলক ছবি ছিল আলমগীর কবিরের ‘মহানায়ক’, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী-র ‘ঘুড্ডি’। ‘মহানায়ক’ ছিল প্লেবয় অ্যাডভেঞ্চার।বুলবুল আহমেদের অনবদ্য অভিনয়ের ছবি। অপরাধ ও বিবেককে কাজে লাগানোর দক্ষতা দেখিয়েছেন পরিচালক। বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেয়েদের ধোঁকা দিয়ে টাকা কামানোই থাকে লক্ষ্য। ছবিতে ব্যবহৃত ‘আমার এ তুটি চোখ পাথর তো নয়, হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’ গান দুটি ক্লাসিক। ‘ঘুড্ডি’ ছিল আধুনিকতাকে চপেটাঘাত করা অন্যতম প্রধান ছবি। আসাদ-সুবর্ণার অসাধারণ পারফরম্যান্সে ছবিটি আলোচিত ছিল। ‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে’ হ্যাপী আখন্দের জনপ্রিয় এ গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল এবং শিল্পী নিজেও অভিনয় করেছিল।
কিশোর অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে নির্মিত বাদল রহমানের ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ ছিল খুবই নামকরা ছবি। নব্বই দশকের ‘দীপু নাম্বার টু’ ছবিটি এই অ্যাডভেঞ্চারের পরবর্তীকালের অনুপ্রেরণা বলা যায়। সি বি জামান-এর ‘পুরস্কার’ ছবিটিও আলোচিত কিশোর সাইকোলজি নিয়ে নির্মিত। ‘রাম রহিম জন’ ছিল ব্যতিক্রমী ছবি। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান তিন ধরনের মানুষের উপস্থাপনায় মানবিকতাকে তুলে থরা হয়। ‘অভিযান’ নামে আরেকটি ব্যতিক্রমী ছবি ছিল। ছবিতে রাজ্জাক, জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন তিনজন মিলে নদীপথে জাহাজ নিয়ে যায় ব্যবসার কাজে। ছবিটি বেশ উপভোগ্য। ইতিহাসের প্রেক্ষিতে ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছিল আগের সাদাকালোর পরে আরেকটি মাইলফলক। পরিচালনা করেন প্রদীপ দে। প্রবীরমিত্র ছিল নবাবের ভূমিকায়। বিদেশি ছবির ছায়া অবলম্বনে আলোচিত ছবি ছিল মালেক আফসারী-র ‘ক্ষতিপূরণ।’ হরর ছবি ছিল কাজী হায়াৎ-এর সোহেল রানা-অঞ্জনা অভিনীত ‘রাজবাড়ি।’ ছবিটি দেখার মতো উপভোগ্য।
ফ্যামিলি ড্রামার ভিতটা ছিল এ দশকে পরে নব্বই দশকে জোয়ার ছিল এ ধরনের ছবির। যেমন- সত্য মিথ্যা, যোগাযোগ, প্রতিরোধ, মাটির কোলে, পেনশন, দূরদেশ, সৎভাই ইত্যাদি। এ জে মিন্টু-র হাত ধরে এ ধরনের ছবির জোয়ার আসে। তাঁকে বলা হত বাণিজ্যিক ছবির মাস্টারমেকার।
অ্যাকশন ছবির জগতে আশির দশকেই নাটকীয় পরিবর্তন আসে ঢালিউডে। ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমের হাত ধরে নায়ক রুবেল আসে মার্শাল আর্টের দুর্দান্ত ব্যবহার নিয়ে। দর্শকের পছন্দের শীর্ষে ছিল এই মার্শাল আর্টের ছবিগুলো। রুবেল অভিনীত ‘লড়াকু, বজ্রমুষ্ঠি’ ছবি দুটি আশির শেষের দিকের আলোচিত অ্যাকশন ছবি।
আশির দশকেই ঢাকাই চলচ্চিত্রের দাপট চলে দেখার মতো। টলিউডি ইন্ডাস্ট্রি তখন ঢালিউডেরর আদলে ছবি নির্মাণ শুরু করে কারণ তারা তখন এঘর-ওঘর মিলিয়ে ‘ছোট বৌ, বড় বৌ, আমাদের সংসার’ এ ধরনের টিপিক্যাল ফ্যামিলি ড্রামায় সেকেলে সেটে ছবি নির্মাণ করত। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তখন ‘দূরদেশ’-এর মতো যৌথ প্রযোজনার ছবি হয়েছিল। বাংলাদেশ-পাকিস্তান-নেপাল তিন দেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল ‘ব্যবধান’ ছবি।
সবচেয়ে বড় ব্যবসাসফল ছবির ইতিহাসটি আশির দশকের শেষের বছর ১৯৮৯ সালে ঘটে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির মাধ্যমে। দেশিয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবসাসফল ছবির রেকর্ড গড়ে। ইলিয়াস কাঞ্চন-অণ্জু ঘোষ জুটির এ ছবিটি ফোকের সাথে মিউজিক্যাল বৈশিষ্ট্যও ধারণ করে। সবগুলো গান হিট। ছবির গল্পে বেদে সংস্কৃতির চিরন্তন আবেদনের সাথে রাজতন্ত্রের বাস্তব অবস্থা দেখানো হয়েছে। ছবিটি পরে টলিউডে রিমেক করা হয়। ঢালিউডি বাণিজ্যিক ছবির রিমেক করে টলিউডে মূলধারার বাণিজ্যিক ছকির চাকা ঘোরে এর মাধ্যমেই। পর। নব্বই দশকে আমাদের অনেক ছবি তারা রিমেক করেছিল। এমনকি আমাদের নির্মাতাদের নিয়ে গিয়ে তারা ছবি নির্মাণ করত তাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তনের জন্য। আমাদের রাজ্জাক, জসিম, আলমগীর, শাবানা, সুচরিতা, ববিতা,কবরী, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চন, জাফর ইকবাল, অণ্জু ঘোষ, দিতি, চম্পা এবং আরো তারকারা তখন বহাল তবিয়তে কাজ করছে। তাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে জয়শ্রী কবির, সুনেত্রা তারা এসে ঢালিউডে পোক্ত আসন গড়েছিল। আমাদের সুবর্ণ সময়ে আশিক দশক ছিল মোক্ষম প্ল্যাটফর্ম।
নব্বই দশক
নব্বই দশক ছিল আশীর্বাদ দেশের গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। তারুণ্যের নবজাগরণ যেমন ছিল প্রবীণদের অবদানও ছিল। দুটির সংমিশ্রণে এ দশকটির কথা স্মরণীয়। যারা ঐ সময়টিকে বেড়ে উঠেছে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছে তারা মন থেকে উপলব্ধি করতে পারবে। দেশের চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, নাটক, বিজ্ঞাপন বিনোদন মাধ্যমের সব কটি ধারাতেই মানসম্মত কাজের জোয়ার ছিল নব্বই দশকে। একটা নীরব বিপ্লব বয়ে গিয়েছিল।
চলচ্চিত্রে নব্বই দশক পূর্ববর্তী আশির দশকের সাফল্যকে ধারণ করেছে পরিপূর্ণভাবে। বাণিজ্যিক ও অফট্র্যাক ছবি নির্মিত হয়েছে সমান্তরালে যদিও বাণিজ্যিক ছবির জোয়ার ছিল। বাণিজ্যিক ছবির মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্ট ছিল। নির্মাতারা মন খুলে মানসম্মত ছবি যেমন নির্মাণ করেছেন দর্শকও তেমনি তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বহু ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে, সুপারহিট হয়েছে। বাণিজ্যিক ছবিই ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখে আর অফট্র্যাক মাঝে মাঝে সেখানে আসা-যাওয়া করে। নব্বই দশকে বাণিজ্যিকের রাজত্ব ছিল। ঢালিউডের বেশকিছু ছবি টলিউডে রিমেক হয়েছিল এতে কনে তাদের বাণিজ্যিক ছবির ধারা পরিবর্তন হয়েছিল। আমাদের ‘বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু, প্রেমের প্রতিদান, স্নেহের প্রতিদান, মায়ের দোয়া, ঝিনুক মালা, নয়নের আলো, মায়ের অধিকার’ ছবিগুলো একই নামে টলিউডে রিমেক হয়েছিল। আরো কিছু ছবি ছিল। আমাদের প্রেমের সমাধি তারা রিমেক করেছিল ‘বকুল প্রিয়া’ নামে। ‘এই ঘর এই সংসার’ রিমেক করেছিল ‘ঘর সংসার’ নামে। তাদের ইন্ডাস্ট্রি তখন টাইপড অবস্থায় ছিল। আমাদের কিছু সফল বাণিজ্যিক ছবির স্বত্ব কিনে নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এফডিসিতে বসে থাকত তাদের প্রযোজকরা। এ গল্পগুলো অনেকেরই অজানা। তাদের বাণিজ্যিক ছবির ভাষা বদলে দিতে আমাদের বাণিজ্যিক ছবির অবদান আছে। আমাদের সেসময় অনেক প্রতিষ্ঠিত নায়ক ছিল আর টলিউডে প্রসেনজিৎ ছাড়া বলার মতো তেমন স্ট্রং পজিশনের নায়ক তাদের ছিল না। প্রসেনজিৎ এপারে এসে ‘প্রিয়শত্রু’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিল দিতির বিপরীতে।
পরিবার নিয়ে ছবি দেখার যে প্রচলন সত্তর দশকে বেড়ে ওঠা দর্শকরা বলে সেই ধারাবাহিকতা নব্বই দশকেও ছিল। ছবি দেখে বাস্তবসম্মত কিছু শেখার প্রবণতা ছিল দর্শকের মধ্যে। ফ্যামিলি ড্রামা ছবি তাই অবধারিত ছিল দর্শক রুচির মধ্যে। নব্বই দশকের উল্লেখযোগ্য ফ্যামিলি ড্রামাগুলো ছিল- আজহারুল ইসলাম খানের ‘মরণের পরে’, কামাল আহমেদের ‘গরিবের বউ’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘সাজানো বাগান’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস, অগ্নিস্বাক্ষী’, এ জে মিন্টুর ‘পিতা মাতা সন্তান, বাংলার বধূ, বাপের টাকা’, সাইফুল আজম কাশেমের ‘স্বামীর আদেশ’, রায়হান মুজিবের ‘কাজের বেটি রহিমা’, মতিন রহমানের ‘অন্ধ বিশ্বাস, স্নেহের বাঁধন’, বেলাল আহমেদের ‘বন্ধন’, মোতালেব হোসেনের ‘হিংসা, ভালোবাসার ঘর, শাসন’, কবীর আনোয়ারের ‘বেয়াদব’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপি এখন ঢাকায়, আদরের সন্তান’, সৈয়দ হারুনের ‘চরম আঘাত, আত্মত্যাগ’, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু-র ‘চাকরানী, গরিবের সংসার, রাগ অনুরাগ’, রায়হান মুজিবের ‘হিংসার আগুন’, নূর হোসেন বলাই-র ‘শেষ খেলা’, মনোয়ার খোকনের ‘সংসারের সুখ দুঃখ, ঘাত-প্রতিঘাত, স্বামী কেন আসামী’, মোস্তফা আনোয়ারের ‘বাংলার মা’, দীলিপ বিশ্বাসের ‘অজান্তে’, ছটকু আহমেদের ‘সত্যের মৃত্যু নেই, মিথ্যার মৃত্যু’, শিবলি সাদিকের ‘বদসুরত, মায়ের অধিকার, অনুতপ্ত’, জাকির হোসেন রাজুর ‘জীবন সংসার, আজিজ আহমেদ বাবুলের ‘স্নেহের প্রতিদান’, ইফতেখার জাহানের ‘নিষ্ঠুর’, মালেক আফসারীর ‘দুর্জয়’, এম এম সরকারের ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, রাজ্জাকের ‘বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘সুখের ঘরে দুখের আগুন’, মোখলেসুর রহমান গোলাপের ‘শেষ প্রতীক্ষা’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘স্নেহ, পরাধীন’, মহম্মদ হান্নানের ‘ভালোবাসি তোমাকে’, শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘গৃহযুদ্ধ, ম্যাডাম ফুলি’ ইত্যাদি। পরিবারের ভেতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্পর্কের টানাপড়েন, মান-অভিমান, বিচ্ছেদ, মিলন এ ধরনের জীবনমুখী গল্পের ছবি এগুলো।
রোমিন্টিক বা রোমান্টিক ড্রামা বিষয়ক ছবির ভক্ত অনেক দর্শকই ছিল। ফ্যামিলি ড্রামা যেমন হিট হত রোমান্টিক ড্রামাও হত। নব্বই দশকে এ ধরনের ছবির অসাধারণ সাফল্যের পাশাপাশি চাহিদা ছিল প্রচুর। দর্শকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নির্মিতও হত অনেক। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো ছিল-’সি বি জামানের ‘কুসুমকলি’, এহতেশামের ‘চাঁদনী, চাঁদনী রাতে’, শেখ নিয়ামত আলীর ‘চাঁদের আলো’, ফজল আহমেদ বেনজিরের ‘প্রেমের প্রতিদান’, নাজমুল হুদা মিন্টুর ‘মৌসুমী’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘আবুঝ দুটি মন’, তোজাম্মেল হক বকুলের ‘পাগল মন, বালিকা হলো বধূ’, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘প্রেমগীত, হারানো প্রেম, প্রেম’, দিলীপ সোমের ‘দোলা, মহামিলন, হৃদয় আমার’, আওকাত হোসেনের ‘আশিক প্রিয়া’, জহিরুল হকের ‘তুমি আমার’, শিবলি সাদিকের ‘অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু’, শাহ আলম কিরণের ‘রঙিন সুজন সখি’, মতিন রহমানের ‘আগুন জ্বলে’, কাজী হায়াতের ‘লাভ স্টোরি’, শাহাদাত খানের ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’, এ জে মিন্টুর ‘প্রথম প্রেম’, এম এ খালেকের ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, তমিজ উদ্দিন রিজভীর ‘আশা ভালোবাসা’, হাফিজ উদ্দিনের ‘প্রিয় তুমি’, আজিজুর রহমানের ‘লজ্জা’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘স্বজন’, রানা নাসেরের ‘প্রিয়জন’, মতিন রহমানের ‘তোমাকে চাই, আগুন জ্বলে, বিয়ের ফুল’, মনোয়ার খোকনের ‘গরিবের রাণী’, ইফতেখার জাহানের ‘প্রেমের সমাধি’, এম এম সরকারের ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, মোতালেব হোসেনের ‘মিথ্যা অহংকার’, রেজা হাসমতের ‘প্রেম পিয়াসী’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’, শাহ আলম কিরণের ‘শেষ ঠিকানা’, নাসির খানের ‘স্বপ্নের নায়ক’, উত্তম আকাশের ‘কে অপরাধী’, মোখলেসুর রহমানের ‘হৃদয়ের আয়না’, শিল্পী চক্রবর্তীর ‘রঙিন উজান ভাটি’, মহম্মদ হান্নানের ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, হাছিবুল ইসলাম মিজানের ‘প্রেমের কসম’, ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘তুমি সুন্দর’, বাদল খন্দকারের ‘পৃথিবী তোমার আমার, মধুর মিলন, সাগরিকা’, জাকির হোসেন রাজুর ‘এ জীবন তোমার আমার’, বাসু চ্যাটার্জীর ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ওয়াকিল আহমেদের ‘ভুলোনা আমায়’, ছটকু আহমেদের ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অনন্ত ভালোবাসা’, আজাদী হাসনাত ফিরোজের কাজের মেয়ে’ ইত্যাদি। রোমান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবিগুলো দেশিয় ছবিকে নব্বই দশকে গর্বিত কিছু জুটিকে উপহার দিয়েছে। যেমন: ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, সোহেল চৌধুরী-দিতি, নাঈম-শাবনাজ, সালমান শাহ-শাবনূর, সালমান শাহ-মৌসুমী, মৌসুমী-ওমর সানী, মৌসুমী-ইলিয়াস কাঞ্চন, রিয়াজ-শাবনূর, শাবনূর-শাকিল খান ইত্যাদি।
অ্যাকশন ছবির দিক থেকে নব্বই দশক বলতে গেলে মাঠ কাঁপিয়েছে। মার্শাল আর্টভিত্তিক ছবি যেটা রুবেলের মাধ্যমে আশির দশকে শুরু হয়েছিল তার পূর্ণতা আসে নব্বই দশকে। এছাড়া জসিমের প্রতিষ্ঠিত ‘জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপ’ এবং আরমান ফাইটিং গ্রুপও অবদান রেখেছিল। নব্বই দশকে অ্যাকশন নায়কের অবদান ছিল প্রধানত জসিম, মান্না ও রুবেলের। অ্যাকশন ছবির নির্মাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো ছিল-’সন্ত্রাস,
বিপ্লব, উত্থান পতন, অপহরণ, ঘাতক, সতর্ক শয়তান, কমান্ডার, বিশ্বপ্রেমিক, রাক্ষস, লম্পট, চারিদিকে শত্রু, নরপিশাচ, পাগলা ঘণ্টা’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘অপহরণ’ ছবিটি কমেডিও ছিল। খোকনের ছবির নায়ক বেশিরভাগ ছিল রুবেল। রুবেলের মার্শাল আর্টের ফাইটিং দেখতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় থাকত সিনেমাহলে। রুবেলের অন্যান্য অ্যাকশন ছবিগুলোর মধ্যে ছিল-’মালেক আফসারীর ‘ঘৃণা’, নব্বই দশকে জসিম ছিল অ্যাকশনে এ জে রানা-র ‘মূর্খ মানব, ডন, আজকের হিটলার, আজকের দাপট, সেয়ানা পাগল’ ইত্যাদি। সিনিয়র নায়কদের মধ্যে প্রধান। জসিমের অ্যাকশনে আলাদা মাহাত্ম্য ছিল। মান্নার মতো অসাধারণ অ্যাকশন নায়কও জসিমের ভক্ত ছিল। জসিম নিজে ফাইটিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে নিজের অবস্থান মজবুত করেছিল। তাঁর অভিনয় অনবদ্য ছিল। তাঁর আলাদা একটা দর্শকশ্রেণি ছিল তারা জসিমের ছবি মিস করত না। জসিমের উল্লেখযোগ্য অ্যাকশন ছবিগুলো হলো-’মাস্তান রাজা, হিংসা, কালিয়া, বাংলার নায়ক, গরিবের ওস্তাদ, ঘাত-প্রতিঘাত, বিশ্বনেত্রী, বিস্ফোরণ, গর্জন, স্বামী কেন আসামী, টাইগার, মেয়েরাও মানুষ, চিরশত্রু, মর্যাদার লড়াই, আখেরি মোকাবেলা, রাজা গুণ্ডা, জিদ্দি, জোর’ ইত্যাদি। মান্না ছিল অ্যাকশনে শীর্ষ নায়কদের একজন। প্রথমদিকে বিভিন্ন ধরনের ছবিতে অভিনয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছিল মান্না। পরে অ্যাকশনে থিতু হয় বিশেষত নব্বই দশকে সেটার আয়োজন বাড়ে। মান্নার অ্যাকশন ছবির বিশেষত্ব হচ্ছে শুধুই অ্যাকশন না ছবিগুলো, সাথে আছে তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য। মান্নার অ্যাকশনের মধ্যে আছে-’দাঙ্গা, ত্রাস, চাঁদাবাজ, শেষ খেলা, শেষ সংগ্রাম, খলনায়ক, ডিস্কো ড্যান্সার, দেশদ্রোহী, মৃত্যুদাতা, লুটতরাজ, তেজী, শান্ত কেন মাস্তান, মুক্তি চাই, লাঠি, লাল বাদশা, দেশ দরদী, ধর’ ইত্যাদি। অন্যান্য নায়কদের মধ্যে কিছু অ্যাকশন ছবি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তখন এমন একটা সময় ছিল যে অলরাউন্ডার নায়কের অভাব ছিল না তারা সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করত এবং মানিয়ে যেত। অ্যাকশনের মধ্যে এর মধ্যে আছে ইলিয়াস কাঞ্চন। তার ‘বদসুরত, কালপুরুষ, সিপাহী, অপরাজিত নায়ক, চরম আঘাত’ ইত্যাদি। সালমান শাহ অভিনীত ‘বিক্ষোভ, বিচার হবে, স্বপ্নের পৃথিবী’ অ্যাকশন ও রাজনৈতিক বক্তব্যের ছবি। ‘চেতনা’ নামে একটি ছবি হয়েছিল যে ছবিতে গল্পটাই ছিল অ্যাকশনেবল। মাসুদ শেখ অভিনীত ‘পাগলা বাবুল’ ছিল কাজী হায়াতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ছবি। বাপ্পারাজ,আমিন খান অভিনীত ‘বাংলার কমান্ডো’ দুর্দান্ত অ্যাকশন ছবি।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য থেকে নির্মিত ছবির মধ্যে নব্বই দশকে সেরা দুটি ছবি ‘আগুনের পরশমনি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড।’ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছবি ছিল এ দুটি। সাহিত্যভিত্তিক অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি ছিল ‘শঙ্খনীল কারাগার।’ গৌতম ঘোষের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ মাস্টারপিস ছিল। মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর সাহিত্য থেকে নির্মিত ‘দীপু নাম্বার টু’ নব্বই দশকের ক্লাসিক ছবি।
জীবনমুখী ছবির মধ্যে ভিন্নধর্মী নির্মাণে কিছু কাজ হয়েছে নব্বই দশকে। ‘মরণের পরে’ বাণিজ্যিক ছবির মধ্যে সেরা জীবনমুখী ছবি। শাবানা-আলমগীরের অসাধারণ অভিনয়ে সন্তান দত্তক দেয়া আর জীবনের নির্মম বাস্তবতা মেনে নেয়ার ছবি ছিল। কাঁদিয়ে ছেড়েছিল দর্শককে। কাজী হায়াতের ‘দেশপ্রেমিক’ প্যাথেটিক স্টোরি টেলিং-এর ছবি। একজন দেশপ্রেমিক মানুষের শেষ বয়সের নির্মম বাস্তবতা ছিল ছবিতে। আলমগীর অসাধারণ অভিনয় করেছিল। শেখ নিয়ামত আলীর ‘অন্যজীবন’ সমালোচকের দৃষ্টি আকন্ষণ করা প্রশংসিত ছবি ছিল। মালেক আফসারী নির্মিত ‘এই ঘর এই সংসার’ একান্নবর্তী পরিবারের সহজ, সাধারণ, বাস্তব গল্পের ছবি। সালমান শাহর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি। আখতারুজ্জামান পরিচালিত ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ সমালোচকের কাছে প্রশংসিত আনেকটি জীবনমুখী ছবি। নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘বাবা কেন চাকর’ বাবাদের শেষ বয়সের করুণ বাস্তবতার অনবদ্য উপস্থাপনা ছিল। মোরশোদুল ইসলামের ‘দুখাই’ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার অসামান্য দলিল। রাইসুল ইসলাম আসাদের জীবনমুখী অভিনয়ে মাস্টারপিস কাজ।
নব্বই দশকে কমেডি ছবিও দারুণভাবে হয়েছে। দর্শকের পছন্দের শীর্ষে থাকার মতো কাজ হয়েছে তখন। এখনো তারা খোঁজ করে সেসব ছবির ইউটিউব বা অন্য মাধ্যমগুলোতে। কমেডি ছবিগুলোর মধ্যে ছিল-’জিনের বাদশা, লম্পট, পালাবি কোথায়, ভণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড’ ইত্যাদি। ‘ভণ্ড’ ছবিটি সুপার ডুপার হিট ছিল।
ফোক-ফ্যান্টাসি ছবির মধ্যেও ভালো কাজ হয়েছে নব্বই দশকে। এ ছবিগুলোর টার্গেট অডিয়েন্স ছিল। তারা এসব ছবি দেখত। বিশেষত মহিলা দর্শক খুব পছন্দ করত এ ছবিগুলো। কল্পনা আর বাস্তবের মিশ্রণে বিনোদনধর্মী ছবি। যেমন-’আয়না বিবির পালা, বনের রাজা টারজান, সুপারম্যান, কাল নাগিনীর প্রেম, কান্দো ক্যানে মন, শক্তির লড়াই, বাহরাম বাদশা, গরিবের রাজা রবিনহুড।’ এ ধরনের নব্বই দশকীয় দক্ষ নির্মাতা ছিলেন ইফতেখার জাহান।
কমেডিয়ান দিলদারকে নায়ক করে ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ছবি হয়েছিল। নব্বই দশকের ব্যতিক্রমী ঘটনা এটি।
লেডি অ্যাকশন ছবির জোয়ার ছিল নব্বই দশকে। নায়কের পাশাপাশি নায়িকারাও অ্যাকশনে পর্দা কাঁপিয়ে দর্শককে বিনোদিত করত। দিতি, শাবনাজ, মৌসুমী, শাবনূর এ নায়িকারা লেডি অ্যাকশন ছবি করেছে। দিতি-র ‘পাপী শত্রু, প্রিয়শত্রু, লেডি ইন্সপেক্টর’, দিতি ও শাবনাজের ‘আজকের হাঙ্গামা’, মৌসুমীর ‘বাঘিনী কন্যা, বিদ্রোহী বধূ, মিস ডায়না’, শাবনূরের ‘মৌমাছি, জীবন সংসার’ উল্লেখযোগ্য।
নব্বই দশকে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিভা ছিল সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এ অভিনয়শিল্পী মাত্র ২৭ টি ছবির মধ্য দিয়ে ঢালিউডে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নব্বই দশকের শেষের দিকে আসে রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খান। তারা একুশ শতকে এসে নিজেদের মেলে ধরেছিল। এদের মধ্যে শাকিব খান এখন ধারাবাহিক কাজ করছে। তবে তারা সবাই নব্বই দশকের আবিষ্কার এটাই তাদের উল্লেখযোগ্য পরিচয়।
নব্বই দশকে অসংখ্য ক্লাসিক, জনপ্রিয় গান আছে তার মধ্যে কিছু উল্লেখ করা যায় :
পৃথিবী তো দুদিনেরই বাসা – মরণের পরে
পিতামাতার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত – পিতা মাতা সন্তান
কতদিন পরে দেখা হলো দুজনাতে – চাঁদনী
ওগো মাতৃভূমি কি দিলে প্রতিদান – দাঙ্গা
রংচটা জিন্সের প্যান্ট পরা – উত্থান পতন
একটাই কথা আছে বাংলাতে – বন্ধু আমার
আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা – প্রেমের প্রতিদান
কাল সারারাত ছিল স্বপনের রাত – প্রেমের প্রতিদান
একতা শান্তি শৃঙ্খলা – ত্রাস
ও আমার বন্ধু গো – কেয়ামত থেকে কেয়ামত
একা আছি তো কি হয়েছে – কেয়ামত থেকে কেয়ামত
এখন তো সময় ভালোবাসার – কেয়ামত থেকে কেয়ামত
নকল মানুষ সেজে রে তুই – ত্যাগ
সেই মেয়েটি – মৌসুমী
চারিদিকে শুধু তুমি – মৌসুমী
স্বর্গ হতে এই জগতে – অবুঝ দুটি মন
পাগল মন মন রে – পাগল মন
কথা যদি শুরু করি – চাঁদনী রাতে
আমার সুরের সাথী আয়রে – প্রেমগীত
তুমি এসেছিলে পরশু – অনুতপ্ত
তুমি সুন্দরও আমারও অন্তরও – দোলা
তুমি একবার এসে দেখে যাও – দোলা
আমি আশিক তুমি প্রিয়া – আশিক প্রিয়া
আমি এক ডিস্কো ড্যান্সার – ডিস্কো ড্যান্সার
আমার একদিকে পৃথিবী – আত্ম অহংকার
তুমি আমার ভালোবাসার গান – তুমি আমার
জ্বালাইয়া প্রেমের বাতি – তুমি আমার
এখানে দুজনে নিরজনে – অন্তরে অন্তরে
কাল তো ছিলাম ভালো – অন্তরে অন্তরে
ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া – অন্তরে অন্তরে
এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি – আগুন জ্বলে
একাত্তরের মা জননী – বিক্ষোভ
বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় – বিক্ষোভ
তারায় করে ঝিকিমিকি – গোলাপি এখন ঢাকায়
ওগো মোর প্রিয়া – প্রেমযুদ্ধ
প্রেম নগরের জংশনে – প্রথম প্রেম
স্বর্ণালী সঙ্গিনী গো – হিংসার আগুন
শুধু একবার বলো ভালোবাসি – দেন মোহর
সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম – শেষ খেলা
নীল সাগর পার হয়ে – স্বপ্নের ঠিকানা
এই দিন সেই দিন – স্বপ্নের ঠিকানা
তোমাকে আমি রাখব ধরে – হৃদয় আমার
পৃথিবীকে ভালোবেসে সুরে সুরে – হৃদয় আমার
তোমরা কাউকে বোলো না – বিশ্বপ্রেমিক
তোমাকে আমার কিছু বলার ছিল – প্রিয়শত্রু
চিঠি কেন আসে না – প্রিয়শত্রু
গান আমি গেয়ে যাবো – আশা ভালোবাসা
প্রেমপ্রীতি আর ভালোবাসা – আশা ভালোবাসা
তুমি এমন কোনো কথা বোলো না – প্রিয় তুমি
দুঃখ দেয়ার মানুষটাও – প্রিয় তুমি
তুমি যে কখন এসে – লজ্জা
ভালোবাসার পাঠশালা নাই – প্রেমের অহংকার
তুমি কবি আমি তোমার কবিতা – স্বজন
আমার মন এত পাগল – স্বজন
অনেক ভালোবেসে হয়েছি তোমার – স্বজন
তুমি টাঙ্গাইলের চমচম – ঘাত-প্রতিঘাত
এলো বসন্ত আমার গানে – হারানো প্রেম
আমি যে তোমার কে – বিচার হবে
পুরুষ বড় হয় জগতে – এই ঘর এই সংসার
এ জীবনে যারে চেয়েছি – প্রিয়জন
ভালো আছি ভালো থেকো – তোমাকে চাই
তুমি আমায় করতে সুখী – তোমাকে চাই
ও চাঁদ তুমি – গরিবের রাণী
বৃষ্টি রে বৃষ্টি – স্বপ্নের পৃথিবী
তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থেকো – প্রেমের সমাধি
মাগো তুমি একবার খোকা বলে ডাকো – অজান্তে
ভালোবাসা জীবন থেকে – অজান্তে
খুলো না ঢাকনা – আত্মত্যাগ
এ জীবন তোমাকে দিলাম – আত্মত্যাগ
পৃথিবীতে সুখ বলে – জীবন সংসার
পিঁপড়া খাবে বড়লোকের ধন – মায়ের অধিকার
সাথী তুমি আমার জীবনে – চাওয়া থেকে পাওয়া
কে জানে কতদূরে – শিল্পী
আমি পাথরে ফুল ফোটাব – শেষ ঠিকানা
নিশিদিন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি – স্বপ্নের নায়ক
তুমি মোর জীবনের ভাবনা – আনন্দ অশ্রু
তুমি আমার এমনই একজন – আনন্দ অশ্রু
আমার মতো এত সুখী – বাবা কেন চাকর
আজ বড় সুখে – বেঈমানী
পিছু নিয়েছে কিছু লোক – বেঈমানী
এতদিনে বুঝলাম দুঃখ না পেলে – সুখের ঘরে দুখের আগুন
তুমি চাঁদের জোছনা নও – হৃদয়ের আয়না
কেন আঁখি ছলছল – হৃদয়ের আয়না
দিনের কথা দিনে ভালো – রঙিন উজান ভাটি
বিদেশ গিয়া বন্ধু – রঙিন উজান ভাটি
একদিকে পৃথিবী একদিকে তুমি – ভুলোনা আমায়
আমি তো একদিন চলে যাব – ভুলোনা আমায়
অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে – লুটতরাজ
শিকল ভাঙার গান গেয়ে যা – হাঙর নদী গ্রেনেড
আমরা সূর্যটা কেড়ে এনেছি – এখনো অনেক রাত
তুমি ছাড়ে না কাটে না – ভালোবাসার ঘর
প্রেমেরও গীত হয়ে এলো রে – তুমি সুন্দর
মনে আগুন জ্বলে – অগ্নিস্বাক্ষী
মন দিলাম প্রাণ দিলাম – ঘাটের মাঝি
আমাকে দুঃখ দিয়ে – এ জীবন তোমার আমার
ও সাথী রে – ভণ্ড
তোমায় দেখলে মনে হয় – বিয়ের ফুল
ঐ চাঁদমুখে যেন – বিয়ের ফুল
একদিন স্বপ্নের দিন – হঠাৎ বৃষ্টি
সোনালি প্রান্তরে – হঠাৎ বৃষ্টি
আমি জানতাম জানতাম আসবে – হঠাৎ বৃষ্টি
অনেক সাধনার পরে আমি – ভালোবাসি তোমাকে
বুক ভরা ভালোবাসা রেখেছি – বুক ভরা ভালোবাসা
তোমার ঐ মিষ্টি হাসি – অনন্ত ভালোবাসা
আমি পথকে করেছি সাথী – পাগলা ঘণ্টা
আম্মাজান আম্মাজান – আম্মাজান
একদিন তোমাকে না দেখলে – কাজের মেয়ে
এত ভালোবেসো না আমায় – মিস ডায়না
আমার ভাগ্য বড় আজব জাদুকর – সন্তান যখন শত্রু
বাংলা চলচ্চিত্রের সুবর্ণ সময় একটি কালানুক্রমিক পর্যায়। ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত তার সুদীর্ঘ ব্যাপ্তি। নানা ধরনের ছবি ও তারকা নির্মাণের সময় ছিল সেটি। আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে ফ্যাশনেবল নাক সিঁটকানো মতামত দিতে যারা অভ্যস্ত তাদের উচিত এই কালানুক্রমিক অধ্যায় ঘেঁটে তারপর কথা বলা। তারা সৎভাবে ঘাঁটলে নিজেরাও অবাক হবে এই সুবর্ণ সময়কে স্মরণ করে।