বাংলা সিনেমার প্রথম কাটপিস
অনেকেই ভাবেন বাংলা সিনেমায় কাটপিসের প্রচলন ২০০০ সালের প্রথম দশকের ঘটনা। আসলে তো নয়, ১৯৯০ এর দশকে রাজ্জাক, ফাল্গুনী রহমান, ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পার মতো তারকাদের সিনেমায় এ ঘটনার শুরু।
যদিও ‘জন্মদাতা’ নামের সেই সিনেমার পরিচালক বা অভিনয়শিল্পীরা ঘটনাটি নিয়ে অবগত ছিলেন না। পরে তারা জানতে পারেন সিনেমা মুক্তির পর।
এ ঘটনার জন্য দায়ি করা হয় প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেনকে।
রহমান মতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামছুল আলম বাবু বলেন, “ভালগারিজমকে এক সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রোমোট করা হয়। অনেকে হয়তো জানেও না প্রথম অশ্লীলতা বা কাটপিস দেয়া হয় ‘জন্মদাতা’ ছবিতে। একজন গুণী গীতিকারের (মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান) পরিচালনা ও এদেশের সবচেয়ে বড় অভিনেতার ঐ ছবিতেই সেসব হয়েছে ছবির প্রযোজকের কারণে। সে একজন প্রদর্শকও—তখন কেউ প্রযোজকের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ড নেয়নি—তার সাহস আরো বাড়তে থাকে। পরে নব্বই দশকের শেষে এটা সংঘবদ্ধভাবে শুরু হয়। কাজ পাবার জন্য প্রযোজকদের পেছনে যারা ঘুরত তারাই অশ্লীলতা বেশি করত। প্রতিবাদ করার জন্য প্রথমদিকেই স্ট্যান্ড না নেয়াতে সাহসটা ঐ প্রযোজকরা পেয়েছিল—সেজন্য সিনেমায় ব্যাপক আকারে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে।”
‘চার সতীনের ঘর’ সিনেমা নিয়ে বলতে গিয়ে ওই সময়ের এক নিয়মিত দর্শক আকবর খসরু লেখেন, “দুই হাজারের পর থেকে বাংলাদেশে অশ্লীলতার প্রতিযোগিতা চলছিল। তবে এইসব হঠাৎ করে হয়নি। আমার মনে পড়ে ‘জন্মদাতা’ ছবিতে আমি প্রথম কাটপিস দেখি। খুব অবাক হয়েছিলাম। স্বনামধন্য একজন গীতিকার পরিচালিত ছবিতে এ কী দেখলাম! পরে সিনে-ম্যাগাজিনের মাধ্যমে জানতে পারি, পরিচালকের অজান্তে এই কাটপিস জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে অশ্লীলতা শুরু হয়। ২০০০ পরবর্তীতে অশ্লীলতার মহামারি শুরু হয়। অনেক বড় বড় তারকারা- জনপ্রিয় তারকারা এইসব অশ্লীল ছবিতে অভিনয় শুরু করে। আমি এইসব অশ্লীলতার কারণে সিনেমা দেখা প্রায় বাদ-ই দিলাম।”
মূলত নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে অভিনেত্রী এলিজার বিয়ের দৃশ্যের পর কাটপিস সংযোজন করা হয়। যা নিয়ে সেই সময় ভীষণ হইচই হয়।